Image description
কাজপাগল এক “স্বপ্নচারী তরুন”
অধ্যাপক ডঃ মাহবুবুর রাজ্জাক (Mahbubur Razzaque) · প্রফেসর ফখরুল ইসলাম - কাজপাগল এক “স্বপ্নচারী তরুন” অধ্যাপক ডঃ মাহবুবুর রাজ্জাক, যন্ত্র কৌশল বিভাগ। প্রফেসর ফখরুল ইসলাম আমার চেয়ে বয়সে বড়। দেখা হলেই হাসি মুখে আগে সালাম দিয়ে বসবেন। উনাকে আগে সালাম দেওয়া কঠিন। আমি উনাকে কখনই বিষন্ন মুখে দেখি নাই- উনি সবসময় প্রাণোচ্ছ্বাসে ভরা কাজপাগল এক “স্বপ্নচারী তরুন”। পাকিস্তান আমলে মিস ফাতিমা জিন্না ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ইলেকশানে দাঁড়ালে মিডিয়া জুড়ে কথা উঠে- খামোশ! মেয়েরা কীভাবে ইলেকশানে দাঁড়ায়?- জায়েজ নাই। এই বিষয়ে আলেমদের মতামত জানতে চাইলে উনারা চমৎকার উত্তর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন মেয়ে হওয়া ছাড়া মিস ফাতেমা জিন্নার আর কোন দোষ নাই। ফখরুল ভাই নামাজ পড়েন, টাখনুর উপর প্যান্ট পড়েন। এই একটা দোষ ছাড়া তাঁরও আর কোন দোষ আমার জানা নেই। এই দেশে হাফপ্যান্ট পড়া তবু সহ্য করা যায়; টাখনুর উপর প্যান্ট দেখলে অনেকের চোখ কপালে উঠে যায়। এইটা দুঃখজনক। প্রফেসর ফখরুল ইসলাম ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের মানুষ। ঢাকা – চট্টগ্রাম – কক্সবাজারে তাঁদের ব্যাবসা আছে। অনেকে বলে, সেই ব্যাবসার পার্টনারদের কারো কারো নাকি রাজনৈতিক সংশ্লেষ আছে। এই দেশে সকল ব্যাবসায়ীর রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকতে হয়। এইটা দোষের কেন হবে? সম্ভবত এই কারনেই তিনি আওয়ামী লীগ, বি এন পি, জামাত, বামসহ অনেকের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক রাখেন। উনি যেমন শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে যেতে পারতেন, তেমনি খালেদা জিয়ার কাছেও পারতেন। আমার বিশ্বাস জামাতের আমীরের কাছেও পারবেন আর ডঃ ইউনুসের কাছেতো অবশ্যই পারবেন। সেই আলামত এখনি কিছুটা দেখা যাচ্ছে। যারা বলেন উনি রাজনীতিপন্থী তারা ভুল বলেন। এক সময় এই দেশে সমাজপতিরা বেশ ধান্ধাবাজি করত। কাউকে সাইজ করতে চাইলে ছড়িয়ে দিত, ঐ বেটা একটা কাফের, তার চৌদ্দগুষ্ঠি কাফের, তার বাড়ির গরুটাও কাফের আর ঐ গরুর দুধ যে যে খায় তারাও সবাই কাফের। এই রকম থিওরীতে যদি জামাতপন্থী খোঁজা হয় তবে প্রফেসর সত্য প্রসাদ স্যারকেও জামাতের হিন্দু শাখার আমির হিসাবে প্রমান করা অসম্ভব নয়। বহু বছর ধরেই তো মিডিয়া বকবক করছে, বুয়েটের শতকরা ৭০ ভাগ শিক্ষকই বি এন পি জামাত! প্রফেসর ফখরুল ইসলাম নিজেই ক্যাম্পাসে শিক্ষক – ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে; তবে এই জন্য কাউকে অপছন্দ করেন এমন দেখি নাই। কোন ছাত্র শিক্ষক যে কোন ব্যাপারে তাঁর শরণাপন্ন হলে তিনি সাধ্যমত সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেন। আওয়ামী লীগ, বি এন পি, জামাত, বাম, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবিরের বড় বড় নেতারা তাঁর কাছে আসেন, আমলাদের সাথে যোগাযোগ ভালো, আর্মির সাথে তাঁর বোঝাপড়া ভালো। তিনি কীভাবে সবাইকে আপন করে নেন, সেইটা নিয়ে গবেষনা হতে পারে। তিনি খালেদা জিয়ার আমলে বড় অঙ্কের প্রজেক্ট এনেছেন। গ্লাস এন্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ল্যাব এর প্রজেক্টের উপর একনেকের মিটিংয়ে স্বয়ং শেখ হাসিনার সামনে প্রেজেন্টেশন দিয়ে ফান্ড এনেছেন। এইদেশে যেটা হয়; সরকারী প্রজেক্ট আসে, টাকা আসে, কেনাকাটা হয়, বিদেশ সফর হয় আর প্রজেক্ট শেষে তার ইমপ্যাক্ট আর চোখে পড়ে না। কিন্তু প্রফেসর ফখরুল ইসলাম এই টাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন এন সি ই বিভাগ। সরকারী পয়সায় হয়েছে অত্যাধুনিক রিসার্চ ল্যাব। এইরকম একটি কাজের আর কোন উদাহরন বুয়েটে নেই। গত ১৫ বছরে বুয়েটে মেইন গেইট হয়েছে, এম ই আর সিভিল বিল্ডিংয়ের মাঝে ফুটপাত হয়েছে, পলাশীর বাজার পাকা হয়েছে, ভিসির বাসার চারিদিকে ১২ ফুট উঁচু লাল ইটের দেয়াল হয়েছে, রিসার্চ প্রণোদনার নাম করে টাকা ভাগাভাগি করা হয়েছে। তবে সরকারী টাকা এনে কার্যকর রিসার্চ ল্যাব একটিই তৈরী হয়েছে। আর সেটি করেছেন এই প্রফেসর ফখরুল ইসলাম। আর মজার ব্যাপার হলো, উনার ল্যাব সব রিসার্চারের জন্য খোলা। অথচ একজন মোটামুটি সিনিয়র প্রফেসর হওয়ার পরেও আমাকে আমার নিজের বিভাগেই অনেক ল্যাবে ঢুকতে কাঠখড় পোড়াতে হয়। উচ্চশিক্ষিত মেধাবী গবেষকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে অনেকেই বড় বড় লেকচার দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন। অন্যদিকে প্রফেসর ফখরুল ইসলাম বেশ কয়েকজনকে দেশে ফিরিয়ে এনে বুয়েটের ল্যাবে আন্তর্জাতিক মানের গবেষনার কাজ সাফল্যের সঙ্গে করে চলেছেন। তাই এন সি ই বিভাগ নতুনতম বিভাগ হয়েও স্বল্পতম সময়ে আন্ডারগ্রেড চালু করে রেকর্ড তৈরী করেছে। আই পি ই, সি এস ই, ইউ আর পি, এই সকল ডিপার্টমেন্টে বড় বড় রথী – মহারথী অনেকে থাকলেও আন্ডারগ্রেড প্রোগ্রাম চালু করতে গড়পড়তা ২০ বছর সময় লেগেছে। মজার ব্যাপার হল আমাদের পি এম আর ই ডিপার্টমেন্টের বয়স প্রায় চল্লিশ বছর হতে চললো। বাংলাদেশে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পেট্রোলিয়ামে ডিগ্রি দেয় কিনা জানিনা, তবে বুয়েটের পি এম আর ই ডিপার্টমেন্ট আজও আন্ডারগ্রেড প্রোগ্রাম চালু করতে পারে নাই, চালু হবে সেই লক্ষণ এখনও দেখি নাই। উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে এসে দেশের জন্য কাজ করতে আমাকে যে কয়জন শুভাকাংখী উৎসাহিত করেছেন ফখরুল ভাই তাঁদের অন্যতম। বুয়েটে বায়োমেডিক্যাল ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠার জন্য আমি তাঁর অনুপ্রেরণাতেই কাজ করেছিলাম। একাডেমিক কাউন্সিলে বায়োমেডিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এবং বায়ো-স্টেটিসটিক্স ডিপার্টমেন্ট নিয়ে হেলথ কেয়ার ইনজিনিয়ারিং ফেকাল্টি তৈরির প্রস্তাব উত্তাপন করেছিলাম। লালফিতার ঘেরাটোপে ওটা আর হয়নি। তবে আমি আজও স্বপ্ন দেখি ইনশাল্লাহ একদিন হবে। স্বপ্ন দেখি বুয়েটে একদিন অটোমোবাইল ইনজিনিয়ারিং, এরোনটিক্যাল ইনজিনিয়ারিং, মেনুফেকচারিং ইনজিনিয়ারিং প্রোগরামও চালু হবে – যদি প্রফেসর ফখরুল ইসলামের মত একজন ভিশনারী লিডার থাকে। ফখরুল ভাই কর্মক্ষেত্রে যেমন সফল, ঘরেও তেমনি সফল। দুই মেয়ে তাকিয়ান আর মুনিবা – দুজনই বুয়েট গ্রাজুয়েট। তাকিয়ান তাঁর ডিপার্টমেন্টে প্রথম শ্রেণীতে ১ম হয়ে বুয়েটে শিক্ষক হিসেবে আছে – বিশ্ববিখ্যাত এম আই টি (MIT) থেকে পি এইচ ডি শেষে পিতার অনুপ্রেরণায় দেশে ফিরে এসেছে। তাকিয়ানের হাসব্যান্ড নাদিমও এম আই টি (MIT) থেকে পি এইচ ডি করে দেশে ফিরে এসেছে। ছোট মেয়ে আমার ছাত্রী মুনীবা এখন ইউ এস এ তে গ্রাজুয়েট স্টাডি করছে। এম আই টি (MIT) থেকে ডিগ্রি করে যারা বুয়েটে ফেরত এসেছে তাঁদের সংখ্যা মাত্র ১ আঙ্গুলেই গোনা যায়; এদের মধ্যেই দুই জনই আল্লাহর রহমতে ফখরুল ভাইয়ের পরিবারের সদস্য। ফখরুল ভাই স্বপ্ন দেখেন একদিন এইদেশে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি হবে। ন্যানোমেটিরিয়াল গবেষনায় তাঁর তৈরী করা গবেষকবৃন্দ বুয়েট এবং দেশের সুনাম পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে দিবে। আমি আশা করি আল্লাহ তাঁকে সেই দিন দেখে যাওয়ার তৌফীক দিবেন।