Image description
ইন্ডিয়া যাওয়া ও কলাপাতায় শুয়ে থাকার গল্প
ইহসানুল হক জসীম (Ehsanul Haque Jasim) কুখ্যাত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ওরফে কালামানিক আসলে বর্ডার পাড়ি দিয়ে ইন্ডিয়ায় পার হতে পারেনি। কিন্তু কলাপাতায় শুয়ে থাকা ভিডিওতে শুনা যাচ্ছে, সে ইন্ডিয়ায় চলে গেছে। খোঁজ নিয়ে মজার তথ্য পেলাম। বাংলাদেশের সীমান্তের মধ্যে জঙ্গলে থেকে সে মনে করেছে, ইন্ডিয়ায় চলে গেছে। আর তখনই সে একটু বিশ্রাম নিতে কলাপাতায় শুয়ে পড়ে। মূল কাহিনী তাহলে বলি। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ১ নং লক্ষীপ্রাসাদ ইউনিয়নে দনা সীমান্ত অবস্থিত। এই ইউনিয়ন যদিও পুরো উপজেলা বা অন্যান্য ভূ-খন্ড থেকে আলাদা নয়, তবুও অনেকটা বিচ্ছিন্ন। নদী দ্বারা মূলত পুরো ইউনিয়ন এক প্রকার সড়ক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন। ইউনিয়নের ভেতর এখনো গাড়ি চলে না বা গাড়ি নিয়ে সরাসরি ওই বড় ইউনিয়নের কোন গ্রামে যাওয়া যায় না। আমাদের উপজেলার এক প্রান্তের ওই ইউনিয়ন ও দনা বাজারে একাধিকবার গিয়েছি। একটু বিচ্ছিন্ন হওয়ায় গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও পুলিশ নজরদারি দনা এলাকায় কম। এই কারণে অনেকে ইতোমধ্যে এই দনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে। ওই এলাকার কয়েকটা গ্রাম একেবারে সীমানার সাথে। দেখা যাবে, কারো ঘরের ১০ হাত পরেই ভারত। ফলে ওই গ্রামগুলোর কিছু লোক দনা সীমান্ত বা তাদের নিজ নিজ গ্রামের সীমান্ত দিয়ে পলাতক লোকদেরকে পালানোর ক্ষেত্রে দালাল হিসেবে সহযোগিতা করে। বড় অংকের টাকা নিয়ে অনেককে ওপারে পার করিয়ে দেয়। ওপারের আর এপারের লোকজন সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। কানাইঘাট বা সিলেটের অনেক পরিবার দেশভাগের আগ থেকে ওপারের ভারতের নাগরিক হিসেবে বাস করছেন, যাদের সাথে এপারের অনেকের যোগাযোগ আছে। যাহোক, কুখ্যাত বিচারপতি কালামানিক এমনি এক গ্রামের দুই দালালের দ্বারস্থ হন। ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বর্ডার পার করে দেওয়ার চুক্তি হয় এই দুই স্থানীয় দালালের সাথে। এই দুই জন আওয়ামী লীগের সমর্থক। তারা কালামানিকের সাথে প্রতারণা করে। বর্ডারের কাছাকাছি পাহাড়, টিলা, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এলোপাতাড়ি ঘুরাঘুরি করে মানিককে নিয়ে। তাকে মাত্র দুই কিলোমিটারের মধ্যে কয়েক ঘন্টা হাঁটায়। বলে রাখি, ওই এলাকা পাহাড়ি এলাকা এবং গাড়ি-ঘোড়া চলাচল না করা ওখানকার লোকজনের জন্য কয়েক কিলোমিটার বা কয়েক ঘন্টা হাঁটা কোন ব্যাপারই না। একবার আমি নিজে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে দনা বাজর গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আবার কয়েক কিলোমিটার দুরের মমতাজগঞ্জ বাজার হেঁটে রওয়ানা দেই ওখানকার স্থানীয় দু’তিন সহ। বাড়িতে ফিরে এসে অনেকটা অসুস্থ হয়ে যাই, চরম ক্লান্ত হই, কিন্তু ওখানকার স্থানীয়দের মধ্যে ক্লান্তির কোন ছাপ ছিলো না। দুই দালাল কালামানিককে দনা বাজারের আশপাশের গ্রামীন এলাকায় দুই কিলোমিটার কয়েক চক্কর দেওয়ানোর পর একটা খাল পার করে একটা গ্রামীন রাস্তার ধারে নিয়ে এসে বলে, ‘আপনি ইন্ডিয়ায় চলে এসেছেন’। কুখ্যাত বিচারপতি কালামানিক খুবই খুশি। সে-ও বিশ্বাস করলো যে সে ইন্ডিয়ায় আসলেই চলে এসেছে। পাহাড় ও জঙ্গলে একটানা কয়েক কিলোমিটার হাঁটার ফলে কালামানিক খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে কাদা পথেও হেঁটেছে সে। চরম ক্লান্ত কালামানিক ওই দুই দালালকে একটু বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলে। তখন তারা রাস্তার পাশে জঙ্গলে/ঝোপে আপাতত বিশ্রামের একটা ব্যবস্থা করে। কলাপাতায় শুইয়ে দেয়। আর এই সময় কালামানিককে মারধর করে তার কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা এবং আরো জিনিস হাতিয়ে নিয়ে যায় এই দুই দালাল। কিছুক্ষণ পর রাস্তা দিয়ে মানুষ যাতায়াতের সময় পাশের ঝোঁপে বা জঙ্গলে কালামানিকের কুহু কুহু কাঁশির শব্দ শুনতে পায়। তখন তারা তার কাছে যায়। ভাইরাল ভিডিওতে তাকে দেখেছে। টকশোতে দিপ্তী চৌধুীর সাথে মানিকের ওই দিনের খারাপ আচরণ তারা দেখেছে। দিপ্তী চৌধুরীকে গালাগাল এবং মানিকের আরো নানা কাহিনীর কারণে দনা এলাকার এই লোকজনও এই কালা মানিকের উপর ক্ষুব্ধ। যাহোক, কালামানিক বলে তাদের কাছে প্রতীয়মান হলো। কথাবার্তা বলে নিশ্চিত হলো যে, এই তো আসলে সেই কুখ্যাত বিচারপতি কালামানিক। এরই মধ্যে কালামানিক বুঝতে পারে যে, দালালরা তার সবকিছু কেবলই নিয়ে যায়নি, তাকে বাংলাদেশের ভেতর রেখেই ইন্ডিয়া বলে চালায়ে দিয়েছে। স্থানীয় এই লোকজন কালামানিককে তখন আটক করে। কিছু উত্তম-মধ্যমও দেয়। এরপর দনার এলাকার বিজিবি ক্যাম্পে খবর দিলে বিজিবির একটি টিম কালামানিককে নিয়ে আসে।