Image description
'' রনি সাহেবদের উষ্মা ও উদ্বেগ এবং বাস্তবতা ''
সিরাজুল ইসলাম শাহীন সাবেক এমপি গোলাম মওলা রনি সাহেব যুগপৎ উষ্মা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছেন। টকশোতে টেলিফোনে ফেসবুকে সর্বত্র বয়ান জারি রেখেছেন। জামায়াত বিএনপি সেনাপ্রধানের ডাকে ৫আগস্ট কেন সাড়া দিলেন এ নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। এরা না বুঝে ফাঁদে পা দিয়েছেন বলে দল দুটির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কিন্তু হাজারো সন্তানদের লাশ সামনে নিয়ে দেশব্যাপী কোটি জনতার রাজপথে রক্ত সাগর সাঁতরানোর মুহূর্তে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সামনে থাকা অন্য কোন উত্তম বিকল্প তিনি উল্লেখ করেন নি। তবে উদ্বেগ সমূহ অমূলক না হলেও বাস্তবতার নিরিখে উপস্থাপনা ভঙ্গী প্রশ্নবোধক বটে । আর জামায়াতের অতীত টানতে গিয়ে অজান্তেই খোলস ভেঙে আবারো নগ্ন হয়ে পড়েছেন। ভিতরের এবং বাইরের কুশীলবদের ষড়যন্ত্র তিনি ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারছেন না মনে করা ঠিক নয়। ২৮ অক্টবর ২০০৬ এবং ৫ আগস্ট ২০২৪ এক করে দেখলে ভুল হবে। মনে রাখতে হবে ষড়যন্ত্র আর ইতিহাস সেরা গণবিপ্লব সম্পূর্ণ ভিন্ন। কলকাঠির ক্রীড়নক অথবা বিশ্লেষকগণ আগস্ট বিপ্লবের গভীরতা বুঝতে হবে। হালুয়া রুটির রাজনীতিতে অভ্যস্ত ভোগবাদী মহলের ব্যার্থতা এখানেই। এজন্য ভাগ বাটোয়ারা, দখলদারি, লেনদেন বাণিজ্য, অসহিষ্ণুতা এবং অতি পাতলামি অব্যাহত আছে। দল মতের উর্ধে উঠে আবালবৃদ্ধবণিতা এক দেহ এক প্রাণ হয়ে সময়ের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার তাড়িয়ে তারুণ্যের সফলতায় আরোও অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে। ঘরে ঘর গন প্রতিরোধের তোড়ে এসব আবর্জনা ভেসে যেতে বাধ্য হবে। দেশবাসীর এ নতুন জাগরণ ছোট করে দেখা ঠিক নয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সর্বগ্রাসী উস্কানী পুলিশবিহীন অবস্থায় মাত্র ২৪ ঘন্টায় জনগণ ঠেকিয়ে দিয়েছে। জুডিশিয়াল সহ নানা অপচেষ্টা ব্যার্থ হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন প্রজন্মের তাৎক্ষণিক ট্রাফিক সামলানো এবং ক্যালিওগ্রাফির জোয়ার স্বপ্নের ঢালা প্রসারিত করেছে। বিপ্লবের সফলতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের টানাটানি না থাকা একটি ইতিবাচক দিক। এসব বিষয়ে নীরব থেকে নেতিবাচক প্রচারণা কাম্য নয়। তবে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী প্রেতাত্বা ও হোতাদের কঠিনতম ধাক্ষা সামনে আছে। এসব মাড়িয়ে আগাতে হবে। পথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ন নয়। নাজুক সময়ে মাথা ঠান্ডা রেখে প্রত্যেকের দায়িত্বশীল ভূমিকা দরকার। হেডম বা অভিমানের সময় এটা নয়। বরং নিজ নিজ জায়গায় সর্বোচ্ছ ত্যাগ অপরিহার্য। ব্রিগেডিয়ার শাখাওয়াত সাহেবকে রিজাইনের শুরসুড়ি দেয়া নিছক উস্কানিমূলক নাহয় দায়িত্বহীনতা। বরং তিনি ধৈর্য্য ধরে দেশপ্রেমিক জনগনের কাছে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন। জামায়াত বিএনপি সহ বিপ্লবের পক্ষের কোন দল বা ছাত্র নেতৃত্বের মধ্যে সংশয় তৈরী হয় এমন চর্চা পরিহার করা উচিত। এ সব ফ্যাসিবাদী দোসরদের উৎসাহিত করে। পাকিস্তান আন্দোলন থেকে জামায়াতের অতীতে তিনি শুধু ভুল দেখেছেন । '৯১ ও '৯৬ হয়তো বাদ পড়েছে। ১৯৯১ সালে আওয়ামীলীগের লোভনীয় আফার প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে তৎকালীন আমীরে জামায়াতের কারাভোগ সহ নেতাকর্মীদের অবর্ননীয় নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্টার জন্য বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়েছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে দলীয়ভাবে জামায়াত আপাত দৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু নীতিগত ভাবে দ্বীন ও দেশের অগ্রাধিকারের প্রশ্নে দলটি সবসময় উত্তীর্ন হয়েছে। পাকিস্তান আন্দোলনে জামায়াতের বিরোধিতার প্রশ্নটি সম্পূর্ণ অপপ্রচার। কিন্তু মুসলিমলীগ নেতৃত্বের যে ত্রুটি ১৯৪১ সালে তুলে ধরা হয়েছিল তা কতইনা সত্য এটা আজকের পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিক হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন । আজ থেকে ৫০ বছর আগে ভারত চিনতে জামায়াত ভুল করেনি এটি এখন আর বলা নিষ্প্রয়োজন। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। দলেরও ভুল থাকবে। শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আদর্শিক অবিচলতার মধুময় সফলতা এবারের দেশবাসীর নতুন জাগরনে আবার প্রমাণিত হল। আগস্ট বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে দুই নৌকায় পা দেয়ার সুযোগ নেই। হয় দেশবাসীর পক্ষে নতুবা বিপ্লবের বিপক্ষে। পক্ষে থাকলে গঠনমূলক ভূমিকা অপরিহার্য। সবজান্তা হওয়ার চেষ্টা তথা অযতা পান্ডিত্ব জাহির করার প্রয়োজন নেই । জনগনের চোখে ফ্যাসিবাদের দালালি বলে গণ্য হতে পারে।