আব্দুদ্দাইয়ান মুহাম্মদ ইউনুছ
আল্লামা সাঈদী (রহ) কুরআনের পাখি হিসাবে পরিচিত ছিলেন; আমরা মনে করি এখন তিনি আল্লাহর পেয়ারা বান্দাহদের সাথে জান্নাতের পাখি হিসাবে আছেন। ১৪ই আগষ্ট ২০২৩ ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ ড মুরসীর (রহ) এর মত কারাবন্দী হিসাবে তাঁর মৃত্যুৃ হয় । অনেকই মনে করেন কারাগারে ইমাম আবু হানিফাকে যেমনিভাবে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে অনুরপভাবে আল্লামা সাঈদীকেও চক্রান্তমূলকভাবে যথাযথ চিকিতসা না দিয়ে কিংবা ইনজেকশান পুশ করে হত্যা করা হয়েছে; তিনি স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেন নাই বরং শাহাদাত বরণ করেছেন । ১৩ই আগষ্ট তাঁকে এ্যম্বুলেন্সে করে ঢাকা পিজি হাসপাতালে হাসপাতালে আনার সময় তিনি অতুলনীয় মিষ্টি হাসি দিয়ে কথা বলেন। তাঁর প্রিয় ছেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব মাসুদ সাঈদী ভাইয়ের কান্না ভেজা বক্তব্য সকলের হ্রদয়ে নাড়া দেয়। তিনি বলেছেন , ‘ তাঁকে হাসপাতালে নেয়ারপর সারা রাত এবং পরের দিন সকলের কাছে ধর্না দিয়েছি তারপরও পরিবারের কারো সাথে এক সেকেন্ডের জন্য সাক্ষাতের মুযোগ দেয়া হয়নি‘‘। এর চেয়ে নিমর্মতা , নিষ্ঠুরতা আর কী হতে পারে? ্একজন ফাঁসির আসামীকেও মৃত্যুদন্ড দেয়ার আগে শেষ ই”ছা জানতে চাওয়া হয়- পরিবার-পরিজনের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়। আল্লামা সাঈদীকে কী কারণে তাঁর পরিবারের সাথে ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত দেখার সুযোগ দেয়া হয়নি সেই প্রশ্ন কোটি জনতার। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে হয়তবা দুনিয়ার আদালতে ; আর তা না হলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় আখিরাতে আল্লাহর আদালতে তার সঠিক বিচার হবে এবং যুলমকারীরা কঠিন শাস্তিভোগ করবে। তাদের নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতায় পুরো জাতি ব্যথিত ও শোকে মুহ্যমান। জাতি হতবাক যে, একজন মানুষ মারা যাওয়ার পর তার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে ভোর রাতে পিরোজপুর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়; আর তাঁর ভক্তরাসহ দেশের আম জনতার প্রত্যাশা ছিল ঢাকাতেই তাঁর প্রথম জানাযা হবে যাতে সারা দেশের মানুষ অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় কিš‘ সরকার ঢাকায় জানাযার অনুমতি দেয় নাই। এমনকি ফজরের নামজরত মুসল্লীদের উপর সাউন্ডগ্রেনেডসহ কাঁদানো গ্যাস নিক্ষেপ করে তার কফিন পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি আমেরিকায় একটি প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য গমন করার কারণে তাঁর ছেলে মাওলানা শামীম সাঈদী দেশের বাইরে ছিলেন তিনি প্রিয় বাবার ইন্তেকালের সংবাদ শোনার সাথে রওয়ানা দেন। তিনি দেশে ফিরে এসে জানাযায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে বারবার আকুতি জানান; তাঁর সেই আকুতিও শোনা হয় নাই।
হাদীস অনুযায়ী আল্লাহ যখন তাঁর কোন বান্দাহকে ভালবাসেন তখন জিবরীলকে বলেন আমি অমুককে ভালবাসি তুমিও তাকে ভালবাস। এই কথা আসমানের সকল ফেরেশতার কাছে প্রচারিত হলে সকলে তাকে ভালবাসে। আর এইভাবে দুনিয়াতেও সকলে তাকে ভালবাসে। আল্লামা সাঈদীর ইনেতকালের পর পৃথিবীর নানান দেশে বিভিন্ন ভাষা-ভাষী কোটি কোটি ভক্তদের হ্রদয় নিংড়ানের দুআ ও ভালবাসার প্রকাশ প্রমান করে তিনি আল্লাহর মাহবুব বান্দাহদের একজন।
আল্লামা সাঈদী বহু গুণে গুনান্বিত ছিলেন এবং বহুমুখী অবদান রেখেছেন। তিনি নেহায়েতই একজন মুফাসির ছিলেননা ; বরং তিনি ছিলেন সুলতানুল মুফাসসিরীন- অর্থাত তাফসীর জগতের স¤্রাট। তাঁর আগে সাধারনত ওয়াজ মাহফিলে কিসসা -কাহিনী তথা সত্য-মিথ্যার মিশ্রনে গল্পাকারে রুপকথা সাজিয়ে সুরের মাধুরী মিশিয়ে অনেকই ওয়াজ করতেন। তিনি কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীরের পথিকৃত। যেমনিভাবে আল্লামা ইবনু জারীর তাবারী ও ইবনু কাসীর কুরআন ও হাদীস দ্বারা তাফসীর লেখার পথিকৃুত হিসাবে কিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের অবদান স্বীকৃত থাকবে। আমি মনে করি আল্লামা সাঈদী (রহ) মাহফিলে কুরআন দ্বারা কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে শতাব্দীকাল পর্যন্ত বরিত থাকবেন। তাফসীরের ক্ষেত্রে তাযদীদের অনেক উদাহরণ রয়েছে যা পৃথকভাবে গবেষনার দাবী রাখে। তবে এই ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হ”েছ তাঁর তাফসীর মাহফিলে শিক্ষক-ছাত্র, মাতা-পিতা-ছেলে সন্তান, পেশাজীকি ও সাধারণ মানুষ, নেতা ও কর্মী, লেখক-গবেষক ও কম-শিক্ষিত-বা অক্ষর জ্ঞান বিহীন সকলেই এক সাথে শুনতো এবং মোটিভেটেড হত। সকলেই তাদের খোরাক পেতো এবং উজ্জীবিত হতেন। তাঁর উপ¯’াপনা এত বেশী মোহনীয় ছিলো যে রাজিৈনতক মতাদর্শের কারণে যারা তার দলের বিরোধী ছিলো তাঁরাও তাঁর মাহফিলের আওয়াজ পেলে মৌমাছি যেমনিভাবে ফুলের রেণুতে এসে মধু আহরণ করে অনুরুপভাবে সকলেই তন্ময় হয়ে শুনতো। এই প্রসংগে আমি একটি বাস্তব ঘটঁনা উল্লেখ করছি। ২০১৩ সালে আল্লামার ফাঁসির রায় দেয়ার পর বাংলাদেশ যাওয়ার পর ঢাকা থেকে হাতিয়াতে লঞ্চে যাওয়ার সময় আমাদের উপজেলার আওয়ামীলীগের অন্যতম একজন বড় নেতার সাথে দেখা হয়। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে তিনি চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন এক কাজে। তাঁর কাজ শেষ হওয়ার পর হাতিয়াতে ফেরত আসার জন্য তিনি রিকশা যোগে স্টীমার ঘাটে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামে আল্লামা সাঈদীর তাফসীর মাহফিলের আওয়াজ কানে আসে। তখন তিনি রিকশা থামিয়ে ওয়াজ শুনতে থাকেন। আল্লামার মোহনীয় সূর ও বিষয়ব¯‘র আকর্ষনে তিনি সেই দিন হাতিয়া যাওয়ার কথা ভুলে যান। হাতিয়ার আওয়ামী লীগের সন্মানিত প্রায় নেতৃবৃন্দের সাথে আমার ও আমাদের পারিবারিক পরিচয় ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আল্লামা কারাগারে যাওয়ার আগে তাঁদের অনেকই আমার কাছে অনেকবার অনুরোধ করেছেন আল্লামাকে হাতিয়াতে নেয়ার জন্য। লন্ডনে আমি তাঁকে সেই দাওয়াত পৌছিয়ে দিয়েছিলাম এবং তিনি যাওয়ারও ই”ছা প্রকাশ করেছিলেন। কারণ হাতিয়াতে কখনও তাঁর মাহফিল হয় নাই। কিš‘ ২০১০ সাল থেকে কারারুদ্ধ হওয়ার কারণে হাতিয়াতে তাঁর আর যাওয়া হলোনা। আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করছি আল্লাহ যেনো আমাদেরকে আমরণ এমনভাবে আমলে সালেহ করার তাওফিক দান করেন যেনো জান্নাতে কুরআনের পাখি আল্লামা সাঈদীর কন্ঠে কুরআনের বানী শুনতে পাই। তিনি হাতিয়া কখনও যান নাই। তারপরও সাধারন নারী-পুরুষ সকলের কত বেশী প্রিয় ছিলেন একটি ঘঁটনা তার প্রমান। হাতিয়ার একজন গরীব মহিলা মারা যাওয়ার আগে তার ছেলেদেরকে অসিয়ত করেন যে, তারা যেনো পাঁচশত টাকা আল্লামা সাঈদীর মুক্তি আন্দোলনের জন্য দান করেন।
মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগিশ আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীও রাজনীতিবিদ ছিলেন। ভারতের মাওলানা আবুল কালাম আযাদ রাজনীতিবিদ ও তাফসীরকারক ছিলেন। কিš‘ তাঁদের সকলের মূল পরিচয় ছিল রাজনীতিবিদ হিসাবে। আল্লামা সাঈদী (রহ)ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমীর ছিলেন এবং দুই টার্ম পিরোজপুরের অনেক বেশী হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। কিš‘ তিনি জামায়াতে ইসলামী করলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মাবলম্বীসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে কত বেশী প্রিয় ছিলেন তা ২০১৩ সালে আওয়ামী সরকারের ক্যংগারু কোর্টে ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর তার প্রতিবাদে দুই শতের মত মানুষ জীবন দেয়ার মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে। যেমনিভাবে ২০১৬ সালে তুরুষ্কে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ক্যু করার চেষ্টা করা হলে হাজারো জনতা রাজপথে নেমে আসে এবং জীবনবাজি রেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। যারফলে উক্ত ক্যু সফল হয়নি। অনুরুপভাবে আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে গন বিক্ষোভের ফলেই পরবর্তীতে তা আমরণ কারাদন্ডে রুপান্তরিত করা হয়। আল্লামা সাঈদী ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্যা নিবাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন র্সংসদের তাঁর প্রদত্ত প্রতিটি বক্তব্য শুনলে মনে হয় তিনি নতুন নয় বরং একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি স্পষ্টই ঘোষনা করেন, ‘‘সার্বভৌমত্বের মালিক জনগন নয় বরং আল্লাহ তায়ালা। সংসদে প্রবেশ কালে ম্থাা ঝুঁকিয়ে প্রবেশ করার রীতির বিরুদ্ধে তিনি সংসদে বিল উপ¯’াপন করে এবং তা যথারীতি পাশ হয়। এইভাবে রাজনৈতিক তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য পর্যালোচনরা করলে স্পষ্ট হয় যে, তিনি রাজনীতির ময়দানেও তাযদীদের অনেক কাজ করেছেন।
আমি তাফসীরের একজন ছাত্র। ভারত ও পাকিস্তানে অনেক তাফসীরকারক রয়েছেন যাঁদের তাফসীর সারা-বিশ্বে সমাদৃত। যেমন মুফতী শফী রহ কর্তৃক রচিত মাআরেফুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী কর্তৃক তাফহীমূল কুরআন, মাওলানা আমিন আহসান ইসলাহী কর্তৃক রচিত তাদাব্বুর কুরআন, মাওলানা আবুল কালাম আযাদ কর্তৃক রচিত তারজুমানুল কুরআন, আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদী কর্তৃক রচিত তাফসীরে মাযেদী, শাব্বির আহমদ উসমানী কর্তক রচিত তাফসীর, মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর তাফসীর বায়নুল কুরআন, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে হক্কানী প্রভৃতি। বাংলাদেশে তাফসীর চর্চা সে তুলনায় অতি নগন্য। তবে এই ক্ষেত্রে মাওলানা আকরাম খা এর অপুর্ণাংগ তাফসীর , মাওলানা আমিনুল ইসলাম সাহেব এর নুরুল কুরআন ও আল্লামা সাঈদীর তাফসীরে সাঈদী উল্লেখ করার মত। বাংলাদেশে আরবী ও উরদু ভাষায় রচিত কিছু তাফসীরের বাংলা অনুবাদ ও কুরআনের অনুবাদের কিছু কাজ হয়েছে। আমি মনে করি আল্লামা সাঈদী (রহ) এর তাফসীরের অবদান নিয়েও গবেষনা হওূয়া দরকার এবং তাঁর তাফসীরের ইংরেজী ও আরবী অনুবাদ করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
আল্লামা সাঈদী (রহ) যুগে যুগে তাযদীদে দ্বীনের আন্দোলনে যাঁরা অনেক ত্যাগ-কুরবানীর নজরানা ¯’াপন করেছেন তিনি তাঁদের অন্যতম। আমরা জানি যুগে যুগে যাঁরা তাযদীদে দ্বীনের কাজ করেছেন তাঁরা ঈমানের অগ্নি পরীক্ষার সন্মুখীন হয়েছেন। কারাগারই তাঁদের অনেকর আবাসে পরিণত হয়। যেমন বর্তমানে তিউনিশিয়ার আননাহদার প্রধান সাবেক স্পীকার ড: রাশীদ ঘানুশী কারাগারে আছেন। মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমুন এর প্রধান ড মুহাম্মদ বাদীঈসহ হাজারো নেতা-কর্মী কারাগারে রয়েছেন। তুরুষ্কে ইসলামী রেঁনেসা আন্দোলনের পথিকৃত বদিউজ্জমান সাঈদ নুরসী, ড নাজিমুদ্দীন আরবাকান বছরের পর বছর কারবরণ করেন। ভারতীয় উপমহাদেশে শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানীসহ অনেকই কারা নির্যাতন ভোগ করেন। এমনকি মুহজাদ্দেদে আলফে সানী সাইয়েদ আহমদ সিরহিন্দ স¤্রাট আকবরের দ্বীনি ইলাহীর বিরোধিতার কারণে কারাভোগ করেন। সেই সময়ও কিছু আলেম মুবারক নাগুরী ও তার ছেলে শাইখ ফয়েজীর মত তাফসীরকারকরাও আকবরের দ্বীনে ইলাহীর সমর্থন করেছিলো। ুেযমনিভাবে বাংলাদেশে কিছু মাইজভান্ডারীর নামে পরিচিত আলেম নামধারী ব্যৗক্তি আল্লামা সাঈদীর বিরোধিতা ও রাষ্ট্রীয় শক্তিকে সহযোগিতা করে। অনুরুপভাবে ইমাম বুখারীও বিরোধিতার সন্মুখনি হয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলসহ সকলেই কারা নির্যাতনসহ অনেক যুলমের শিকার হন। ইমাম মালেককে আঘাতে আঘাতে রক্তে রঞ্জিত করা হয়। ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল প্রচন্ড রোদে বেত্রাঘাতে বেহুশ হয়ে পড়তেন। বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত অধ্যাপক গোলাম আযম, অধ্যাপক নাজির আহমদ, মাওলানা একেএম ইফসুফ, মাওলানা আব্দুস সোবহান (রহ) কারাগারেই ইন্তেকাল করেছেন। কথিত যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অজুহাতে শাহাদাত বরণ করেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, জনাব আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, জনাব কামারুজ্জামান, জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা ও জনাব মীর কাশেম আলী। জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামসহ অনেক নেতা-কর্মী এখনও কারাগারে রয়েছেন। শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক, মুফতী আমিনী প্রমুখও কারবারণ করেছিলেন; জনাব মাওলানা মামনুল হক সাহেবসহ অনেক আলেম-উলাসমা বর্তমানে কারাগারে আছেন।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহ) কে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষনার দাবী করে খতমে নবুওয়াত বই লেখার পর ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। তাঁকে যখন বলা হয় ক্শতা চাইলে মুক্তি দেয়া হবে তখন তিনি বলেণ মওত কী ফায়সালা আসমান মে হোতি হায় যমীন মে নেহী- অর্থাত মৃত্যুর ফায়সালা আসমানে হয় যমীনে নয়। সাইয়েদ কুতুব শহীদকে যখন কারাগারে তার বোন হামিদা কুতুবের মাধ্যমে প্রস্তাব দেয়া হয় যে, তিনি ক্ষমা চেয়ে দুই লাইন লিখলে তাঁকে শুধু ক্ষমা নয় বরং মিশরের শিক্ষামন্ত্রী বানানো হবে। তখন তিনি প্রতি উত্তরে বলেন, যে আংগুলি দিয়ে আশহাদু আন লাইলাহা ইল্লাহর সাক্ষ্য দেয়া হয় সেই আংগুলি দিয়ে মাযলুম কখনও যালিমের কাছে ক্ষমা চাইবেনা। তারপর তাঁকে ফাঁসি দেয়া হয়। আজও পৃথিবীবাসী জানেনা শহীদ সাইূেয়দ কুতুবের কবর কোথায়।
আমাদের রাহবার, আমাদের প্রিয় নেতা আল্লামা সাঈদীকেও তাঁর ঘনিষ্ঠ একজনের মাধ্যমে প্রস্তাব দেয়া হয় যে তিনি যদি জামায়াতে ইসলামী ত্যাগ করেন তাহলে তাঁকে জেল থেকে শুধু মুক্তি নয় বরং তিনি যা চাইবেন তা দেয়া হবে। আল্লামা তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। আল্লামা সাঈদী রহ কোমল হ্রদয়ের অধিকারী ছিলেন। তবে দ্বীনের পথে বিশেষভাবে নানা-মুখী চ্যলেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি ছিলেণ অকুতোভয়। হযরত ইবরাহীমের পদাংকানুসরণে আল্লাহর প্রতি তাঁর তাওয়াক্কুল ছিলো অপরীসীম। আমি তাঁর অনেক তাফসীর মাহফিলে ছিলাম যেখানে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে নানা ধরনের বাধার পাহাড় উপেক্ষা করে তিনি মাহফিলে উপ¯ি’ত হতেন।
আল্লামা সাঈদী ছিলেন একজন দায়ী ইলাল্লাহ। গাজীপুর হাসপাতালে তিনি অল্প সময় ছিলেন। উক্ত হাসপাতালের রেজিষ্ট্রার সোশাল মিডিয়াতে লিখেন যে , অতি অল্প-সময়ে ডাক্তার-নার্স, অন্যান্য রোগী সকলেই তাঁর আচরণে মোহিত হয়ে যায়। তিনি বিদায় নেয়ার সময় ডাক্তার সাহেব এর মাথায় হাত দিয়ে বলেন , ‘‘বাবা ঠিকমত নামাজ পড়বে‘‘। তারপর যখন তাঁকে ঢাকায় পিজি হাসপাতালে আনা হয় এ্যম্বুলেন্স থেকে নামানোর সময় যখন জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি কেমন আছেন তখন তিনি হ্রদয় কাড়া জান্নাতী হাসি দিয়ে বলেন আলহামদুািলল্লাহ আমি ভাল আছি। সেই সময় তিনি যে সকল কারারক্ষী তাঁকে নিয়ে আসেন কৃতজ্ঞাতাসহ তাদের সেবাযতেœর প্রশংসা করেন।
আল্লামা সাঈদী (রহ) ছিলেন উঁচু মাফের আলেম, লেখক, রাজনীতিবিদ, মোহনীয় চরিত্রের অধিকারী একজন বাগ্মী বক্তা। বাংলাদেশে তাঁর জনপ্রিয়তার কাছে অন্য সকল জনপ্রিয় ব্যক্তিরা ¤্রয়িমান। অথচ ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেণ অত্যন্ত বিনয়ী। পরিষ্কার পরি”ছন্ন পোশাক পরিধান করতেন ; তবে সাদা-সিদে চলাফেরা করতো; তাঁর মাঝে কোন অহংকার ছিলনা। অন্যকে আকৃষ্ট করার মত যাদুকরী শক্তি শুধু ওয়াজের ভাষা বা শব্দ চয়ন কিংবা উপমাতে নয় বরং ব্যক্তিগত চরিত্রেও তার বহিপ্রকাশ ঘটতো। আমার মত একজন ক্ষুদ্র মানুষকেও তিনি যে মায়ার জালে আবদ্ধ করেছেন তা হ্রদয় পটে ভেসে উঠলে কান্না আসে। তিনি ২০১০ সালে জেলে যাওয়ার আগে প্রতি বছরই লন্ডনে আসতেন। যখন লন্ডনে থাকতেন মাঝে মধ্যে তাঁর সাথে দেখা করার জন্য জনাব আব্দুল মান্নান সাহেব এর যেই বাসায় তিনি থাকতেন আমরা সেখানে যেতাম। একদিন যাওয়ার পথে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরি হয়। আমি বৃষ্টিতে ভিজে যাই। তাই তিনি যেই রুমে থাকতেন উক্ত রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আমি সালাম দিই। বৃষ্টিতে আমার শরীর ভেজা; তার সাথে মুসাফাহা ও মুআনেকা করলে আমার ভেজা কাপড়ের কারণে তাঁর কাপড় ভিজে যাবে তাই আমি তাঁর কাছে যাইনি। তখন তিনি আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘ ইউনুছ আমার বুকে আস। এখনই তোমার একটু গরম হওয়া দরকার। তিনি আমাকে অনেকক্ষন বুকে জড়িয়ে রাখলেন‘। ২০১৬ সালে আমার মুখের ডান পাশ প্যরালাইসি হয়ে যায়। তাঁর ছোট ছেলে বন্ধুবর নাসিম সাঈদী ভাই আমাকে জানালেন তাঁরা আল্লামার সাথে জেলখানায় দেখা করতে গেলে আমার অসু¯’তার সংবাদ শুনার পর আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেন। তারপর আরও কয়েকবার তাঁদের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং একবার নাসিম সাঈদী ভাই আমাকে আল্লামার হাতের লেখা একটি চিরকুট মেসেজ করেন। উক্ত চিরকুটটি আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিš‘ নাসীম ভাইর সংরক্ষনে তা ছিল। আল্লামা উক্ত চিরকুটে উল্লেখ করেন , ‘‘ নাসীম আব্দুদ্দাইয়ান মো: ইফনুছকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে তার লেখা ‘যুগে যুগে ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা‘ গ্রš’টির দ্বিতীয়খন্ড ছাপতে। যাতে থাকবে শহীদ নিজামী,মুজাহিদ, মোল্লা, জামান , মীর কাশেম আলী ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করার কারণে কারা বন্দীদের জীবন কাহিণী, পাঠক উপকৃত হবে‘।
আমার ¯েœহাষ্পদ ভাতিজা জামিল মাহমুদ আল্লামার নাতিন জামাই। মাওলানা রাফীক সাঈদী ভাইর ছোট মেয়ের সাথে তার বিবাহের সুত্র ধরে আল্লামার পরিবারের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর আমি অনেক কাছ থেকে তাঁর পরিবারকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষার আলোাকে আসহাবে রাসুলের পদাংকানুসরণে তিনি পরিবারের সদস্যদেরকে গড়ার চেষ্টা করেছেন। আমি মনে করি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে আল্লামার পরিবারের প্রতি। আমার ভাতিজা জামিলের ফোনের মাধ্যমে আল্লামার সাথে সর্বশেষ ২০২৩ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ কথা বলার দুর্লভ সুযোগ হয়। তখন আমি উমরাহর উদ্দেশ্যে মক্কায় ছিলাম। তিনি সেই কথা শুনে দুআ করতে বলেন যেন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে উমরাহ করার সুযোগ করে দেন। আমিও বিনরয়ের সাথে তাঁর কাছে দুআ চাই। দুনিয়ার জীবনে আল্লামার সাথে এটা শেষ কথা হবে তা ভাবিনি। কারণ আমাদের দুআ ছিল আল্লাহ যেন হযরত ইউসুফের মত জেলখানা থেকে আল্লামাকে মুক্ত করেন। হযরত ইউসুফ জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগ করার সুযোগ আল্লাহ তায়ালা করেন। আর তাঁকে দেয়া মিথ্যা অপবাদ এর কলুষমুক্ত হন। যেমনিভাবে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে কসাই কাদের বানানো হযেছিলো অনুরুপভাবে আল্লামা সাঈদী (রহ)কে কথিত দেইল্লা রাজাকার চিত্রিত করে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয় যা দেশের মানুষ বিশ্বাস করেনি । আল্লামার ইন্তেকালের পর হাজারো গায়েবানা জানাযা এবং পিরোজপুরে জানাযার নামাযে লাখো মানুষের ঢল তারন জ্বলন্ত প্রমান।
আল্লামা জেলে থাকার সময় তাঁর বড় ছেলে রাফীক সাঈদী ভাই মারা যান । তাঁর জানাযার নামাযের জন্য আল্লামা প্যরোলে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি পেয়ে এসেছিলেন। উক্ত জানাযায় আমিও উপ¯ি’ত ছিলাম। তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে মহান রবের কসম খেয়ে বলেছিলেন, ‘‘ আমি রাজাকার নই। আমার গায়ে কথিত অপরাধের কোন কাদা লাগে নাই‘। তিনি সব সময় বলতেন আল্লাহ যেনো তাঁকে রাজাকারের কালিমা মুক্ত করেন। আল্লাহর রহমতে তিনি সেই কালিমা মুক্ত। যেই বিশাবালীকে হত্যার অভিযোগে তাঁকে সাজা দেয়া হয়। তার ভাই সুখরঞ্জন বালি আল্লামার জানাযায় উপ¯ি’ত হয়ে জাতির সামনে স্পষ্ট করেছেন তাঁর ভাইয়ের হত্যার সাথে আল্লামা সাঈদী জড়িত ছিলেননা এবং তিনি রাজার ছিলেননা ও কোন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেননা। আল্লামা সাঈদী যে রাজাকার ছিলেননা তা ততকালীন মুক্তিযুদ্ধের সেই সেক্টর কমান্ডার স্পষ্ট করে গেছেন। আফসোসের বিষয় হ”েছ, সুখরঞ্জন বালি যখন সত্য কথা তার সাক্ষ্যে বলতে মন¯’ করেন তখন তাকে আদালত প্রাংগন থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর কয়েক বছর ভারতের কারাগারে ছিলেন। আল্লামা সাঈদীর ইন্তোলের পর অশ্রæভারাক্রান্ত হ্রদয়ে জানাযার মাঠে হাজির হন এবং ঐতিহাসিক সাক্ষ্য জাতির সামনে প্রদান করেন। সুখরঞ্জন বালির এই সাহসী ভুমিকার প্রশংসা করে সোশাল মিডিয়াতে আমেরিকাতে অব¯’ানকারী একজন পিএইচডি গবেষক একটি পোস্ট দেয়ার পর বাংলাদেশে তার মাকে গ্রেফতার করা হয়। এটা কতটা ন্যক্কারজনক তা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। আমরা আন্দামান বন্দীর আত্মকাহীনী পড়েছি- যয়নাব আল গাজালীর লেখা কারাগারে রাতদিন বইতে যুলম নির্যাতনের অনেক ঘঁটনা পড়েছি। মূলত পৃথিবীর সকল দেশের যালিম এর ভুমিকা এক। তাদের ভাষা ও বর্ণের মাঝে পার্থ্যক্য আছে কিš‘ যুলমের উদ্দেশ্য ও ধরনের মাঝে পার্থ্যক্য নেই। তবে মুমীনের জন্য হতাশার বা ভয়ের কারণ নেই। রাত যত গভীর হয় সোবহে সাদিক তত কাছে আসে। তবে এই কথা ঠিক যে, আল্লামা প্রায় তের বছর জেলে ছিলেন। তিনি জেলে যাওয়ার আগে এক মাহফিলে জাতিকে এই ঘোর অমানিশার কালো রাত সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তার মোকাবিলায় আমরা কী পদক্ষেপ নিয়েছিলাম তা পর্যালোচনার দাবী রাখে।
আল্লামা সাঈদী একটি নাম; একটি ইতিহাস। তাঁর ইন্তেকালের পর কোটি কোটি বনী আদম তাঁর জন্য দুআ করেছে এবং তা অনাগত কালেও অব্যাহত থাকবে। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের বিরোধী যারা তাদের অনেকই শোক প্রকাশ করেছেন। এমনকি আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েক শত নেতা-কর্মী আল্লামার ইন্তেকালের খবর শুনে ইন্নালিল্লাহ পড়ার কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। অনেক কবি কবিতা লিখছেন; অনেক শিল্পী গানের কলিতে আবেগভরা ভাষায় তাঁর জন্য দুআ করছেন। কারণ তিনি সকলকে ভালবাসতেন। তাঁর এক মাহফিলে তিনি স্পষ্টত বলেছেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ আমার, বিএনপি আমার, জামায়াতে ইসলামী আমার, জাতীয় পার্টি আমার। যারা মানুষ তারা সকলেই আমার‘‘ । তাই যাদের মধ্যে মনুষত্ব এবং মানবিকতা রয়েছে তারা সকলেই আল্লামার জন্য চোখের পানি ফেলে দুআ করছে। বাংলাদেশে কাওমী ও আলীয়া মাদরাসার মাঝে পার্থ্যক্য রয়েছে। কিš‘ আল্লামার ভাষায় কাওমী ও আলীয়া তাঁর দুই চোখের মত।
আল্লামা সাঈদী তাঁর অনেক মাহফিলে নিজেকে মুফাসসির হিসাবে পরিচয় না দিয়ে তালেবে ইলম বা তাফসীরের ছাত্র হিসাবে পরিচয় দিতেন। এটা ছিল তাঁর বিনয়ের নিদর্শন। এছাড়া তিনি এত বড় মাফের আলেম ও বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির হওয়ার পরেও যে কোন ধরনের পরামর্শ সাদরে গস্খহণ করতেন। আমার মনে পড়ে সর্বশেষ তিনি যখন লন্ডনে আসেন তখন আমি তাঁকে তাঁর আশির দশকের ওয়াজ এবং নব্বই এর দশকের ওয়াজের একটি বিশ্লেষণ মৌখিকভাবে দিয়েছিলাম এবং তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেছেন। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী প্রতি শতাব্দীতে এক বা একাধিক মুজাদ্দিদ আসেন। তারা দ্বীনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাযদীদের কাজ করেন। আমার দৃষ্টিতে আল্লামা সাঈদী রহ তাফসীর ও রজনীতির ময়দানে তাযদীদের অনেক কাজ করেছেন। নির্ভয়ে সত্যকে সত্য বলা, যালিম শাহীর সাথে আপোষ না করে দ্বীনের উপর অটল ও অবিচল থাকার তিনি নজরানা ¯’াপন করেছেন। আল্লামা সাঈদী তিনি শিরক-বিদআত ও মাজারপুজার বিরোধী ছিলেন। তাঁর ওয়াজের ফলে সমাজ থেকে অনেক শিরক বিদআত উুতপাটিত হয়েছে। অনেক অমুসলিম ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসেছে। অনেক মুসলিম যারা জানতনা ইসলাম কী জিনিস তাদের সামনে ইসলামের রুপ সৌন্দর্য তুলে ধরছেন; যার ফলে অনেকই অন্ধকারের পথ থেকে আলোর পথে এসেছেন। আল্লামার মাহফিলের অন্যতম প্রতিপাদ্য ছিলো মানব রচিত মতবাদের বিপরীতে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধানের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণণা। তাঁর যুক্তিপুর্ণ আলোচনার কারণে আশির দশকে সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম বাংলাদেশের আপামর জনসাধরণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়। এয়াড়া নব্বইর দশক থেকে নিয়ে কারাবরণের পুর্ব পর্যন্ত প্রতিটি মাহফিলে পুজিবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের অসারতা জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। আল্লামা সাঈদী নারীদের মর্যাদা ও ইসলামে নারীর অধিকার তুলে ধরেছেন। আমরা দেখি আল্লামা সাঈদীর আগে ইসলামে নারী অধিকার নিয়ে এত স্পষ্ট বক্তব্য নারী সমাজ শুনে নাই। তাই লাখো নারী তার ভক্ত ছিলো। এই কারণে তাঁর ফাসির রায় ঘোষনার পর অে নক নারীকে হাতে ঝাড়– নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়। বিভিন্ন ¯’ানে নারীরাও পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন।
আল্লামা সাঈদীর মত ব্যক্তিত্ব কয়েক যুগে নয় বরং কয়েক শতাব্দীতেও আসেনা। আল্লামা সাঈদী (রহ) এর জীবন ও কর্ম নিয়ে শুধু কয়েক ঘন্টার আলোচনা কিংবা কিছু লেখা-লেখি করে মনের আনেবগ প্রকাশ যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক ও অবদান নিয়ে পিএইচি গবেষনাসহ অনেক রিসার্চ হওয়াার দাবী রাখে। আর আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশান অনাগতকালে যোগ্য আলেম ও কুরআনের তাফসীরকারক তৈরীতে ভুমিকা রাখবে সেই প্রত্যাশা অনেকরই। সম্ভব হলে ফান্ড সংগ্রহ করে ‘ তাফসীর‘ স্কলারশীপ চালু করা যেতে পারে। অনুরুপভাবে যারা আল্লামার ভক্ত অনুরুক্ত রয়েছেন তাঁরা তাঁর লেখা বইগুলো পড়া এবং তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রতি যতœশীল থাকবেন আশা করি। সবচেয়ে বড় কথা হ”েছ তিনি ইক্কামাতে দ্বীনের যেই আন্দোলনের কারণে ইমাসম ইবন তাইমিয়া, মুজাদ্দেদে আলফে সানী প্রমুখের মত কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন আমাদেরকে তাযদীদে দ্বীন ও ইুক্কামাতে দ্বীনের আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের ভ‚ল ত্রæটি মফ করূন ; সীমাবদ্ধতা দূর করুন এবং আমরন আমলে সালেহ ও সদকায়ে জারিয়ার কাজ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর নেক বান্দারা দুনিয়াতে আল্লাহর রাসুলকে স্বপ্নে দেখতে পারেন কিš‘ আল্লাহ তায়ালাকে ম্বপ্নে দেখা সম্ভব নয়। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ তিনি যেন আল্লাহর সকল নেক বান্দাহগণের সাথে জান্নাতে তাঁর দীদার লাভের মত আমরণ নেক আমল করার তাওফিক দান করেন। আমীন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন