সাহিত্যিক অদিতি ফাল্গুনী এর ফেসবুক থেকে: আমি ত’ শেষ বিচারে ভাল মানুষ নই। আমি এক গল্পেই ‘রাজাকার।’ যদিও ‘রাজাকার’ ও আরো অশ্লীল নানা ট্যাগ খাবার পরপরই (যেমন ট্যাগ পেলে যে কোন নারী হয়তো আত্মহত্যা করতেও উদ্বুদ্ধ বোধ করতে পারে) যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নেই দীর্ঘদিনের বাম বন্ধুদের সাথে তর্কে জড়িয়েছি, সম্পর্ক নষ্ট করেছি। না, সময়ের সাথে প্রমাণিত হয়েছে যে বড় দলের ক্ষমতার দুধ-মাখন খেতে এসব করি নি। অকাতরে বঙ্গবন্ধুরও নানা সমালোচনা করেছি। গণজাগরণ মঞ্চের নেতা/নেত্রী হবারও বিশেষ ইচ্ছা ছিল না। নিজের তাগিদেই তাদের সাথে অভয় নগর গেছি। ফিরে এসে সাধ্যমতো লিখেছি ‘ডেইলি স্টার’ বা ‘ঢাকা ট্রিবিউনে।’ তাদের পাক পণ্য বর্জন কর্মসূচি নিয়েও ঢাকা ট্রিবিউনে লিখেছি। শাহবাগ আন্দোলনকে প্যারি কমিউন ও বলশেভিক আন্দোলনের সাথে তুলনা করে গত বছরের শুরুতেই লিখেছিলাম ‘সমকাল’ আর ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এ। অভয়নগর যাওয়ার কারণে আমার সর্বশেষ পেশাগত বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতা আর নাই বলি। তবু সেই অভয়নগর থেকে ফেরার পরই মঞ্চের কারো কারো শীতল প্রতিরোধে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিই বা নিতে থাকি। তারপর অনেকগুলো সভার এসএমএস পেয়েও যাই নি। গতকালও যাওয়া হয় নি। আজ ইমরান এইচ সরকারের এসএমএস পেয়ে অনেক ব্যস্ততার ভেতর সব কাজ ফেলে ছুটে গেলাম পরীবাগে। মিটিং শুরু হতে দেরি হবে? সমস্যা নেই। সব কাজ ফেলেই বসে থাকতাম। ইমরানের সাথে এক ঝলক দেখা হলো। তিনি হাসলেন তাঁর সদা বিনয়ী হাসি। কিন্তু মঞ্চের একাধিক মানুষ আমাকে দেখে যে অচেনা আচরণ করলেন (হয়তো তাদের কারো অন-লাইন বিরূপতা সয়েও আরোগ্য কামনা করে স্ট্যাটাস দিয়েছি বা কাউকে অনুজের মতোই দেখেছি)…তারপর ঘুরে-ফিরে মনে হলো আওয়ামি লীগ মঞ্চের ছেলেদের পেটালেও আমি ত’ ‘রাজাকার!’ আবার এভারেস্ট জয়ী মুসার পক্ষেও শেষমূহুর্তে লিখলাম তার সততা সত্ত্বেও এত হেনস্থা হওয়া দেখে! আমার ‘রাজাকার’ হওয়া ঠেকায় কে? কেন তবু প্রাণের তাগিদে বারবার অনাহুত আমি যাই? জানি এই সময়টা খুব কঠিন সময়। এবং এখন এত তুচ্ছ ও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে হয়তো ভাবাও ঠিক নয়। তবু, এই শীতল প্রতিরোধ ত’ একদিনের নয়।
প্রিয় ইমরান, ভাল থাকবেন। আপনার সহযোদ্ধাদের দ্রুত মুক্তি ও আশু আরোগ্য কামনা করি। সর্বশেষ ইসলামী ব্যঙ্কের টাকা গ্রহণ নিয়েও স্টার-ট্রিবিউনে লেখা পাঠিয়েছি। ছাপা হয় নি। আমার এবারের গল্পগ্রন্থ ‘ধৃত-রাষ্ট্রের বালিকারা’র প্রথম বড় গল্প ‘শাহবাগ, দ্রোহ অথবা ইউজিন পেতিয়ের গান’ হয়তো ওপার বাংলার কোন ওয়েবজিন প্রকাশ করতে পারে তাদের নববর্ষ সংখ্যায়। কলম নিয়ে দূর থেকে যতটা পারা যায় এই ‘রাজাকার’ আপনাদের সাথে থাকবে। তবে তাকে আর কোন অনুষ্ঠানে আসার এসএমএস পাঠিয়ে বিড়ম্বিত করবেন না দয়া করে। গতবছর চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের মোকাবিলায় গেলে এই আন্দোলন যে তীব্র বিস্তার লাভ করতে পারতো, সেই ‘ইসক্রা’ বা অগ্নিকণা ছড়িয়ে পড়তে পারত ৫৬ হাজার বর্গমাইলে…ক্ষমতাসীন দলকে বিশ্বাস করে সেই আন্দোলন অনেকটাই হারিয়ে গেল…ফুলশয্যায় ত’ আন্দোলন হয় না…গত একবছরে সারা দেশে সংগঠন গড়ে তোলা, মননশীল প্রকাশনা অনেক কিছুই হয় নি…তবু ভুল থেকেই হয়তো মানুষ শেখে…তবে আপনার আশপাশের সীমিত পরিসর বৃত্তটি আরেকটু বড় করার উদ্যোগ না নিলে, সেই বৃত্তের অনেকেরই আপনার চারপাশে কাউকে ঘেঁষতে না দেবার কায়েমি মনেবৃত্তি থেকে বের হবার পন্থা খুঁজে নিতে না পারলে এই আকালের দিনে আপনার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে চাইলেও আমার মত অনেক ‘রাজাকার’ যে ফিরে আসবে!
বয়সে কিছুটা বড় বোন হিসেবে এবং শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আপনাদের লড়াইয়ের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন