বর্তমান সরকার গঠিত স্বাস্থ্য সংস্কার কমিটি কাজ শুরু করেছে। সংস্কার কমিটির প্রথম বৈঠকটি গত বুধবার বিকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বৈঠকেই বহুল আলোচিত রেফারাল সিস্টেম নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিটির বৈঠকে একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আধা ঘণ্টার বেশি স্বাস্থ্য সংস্কারে কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে দেয়া যাবে সেই বিষয়ে কথা বলেন বলে জানা গেছে। তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবাকে কার্যকর করতে প্রথমেই উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার কথা বলেন। এটা ছাড়াও তিনি স্বাস্থ্যসেবায় একটি কার্যকর রেফারাল ব্যবস্থা চালু করার পরামর্শ দেন। স্বাস্থ্যসেবায় কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়, যেখানে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে কী পরিমাণ জনসংখ্যা হবে এবং তাদের জন্য একটি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা দিতে আয়া থেকে চিকিৎসক পর্যন্ত কী পরিমাণ জনশক্তি লাগবে তা এখনি নির্ধারণ করার ওপর জোর দেয়া হয় এবং বলা হয়, সেই অনুযায়ী জনশক্তি নিয়োগ দিতে।
বাংলাদেশে বর্তমানে সর্দি-কাশি ও জ্বরের জন্য মানুষ অধ্যাপক অথবা সিনিয়র কনসালট্যান্টের কাছে চলে যায়। এটা হয়ে থাকে রোগীর প্রতি নিচের লেবেলের চিকিৎসকদের কম মনোযোগের কারণে। মানুষ মনে করে, একেবারে উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তারের কাছে চলে যেতে পারলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যাবে। রোগীদের এই প্রবণতার কারণে উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসকরা জটিল রোগ রয়েছে এমন রোগীদের সেবা দেয়ার সুযোগ কম পান। এ প্রবণতা বন্ধ করতে পারে উপজেলা পর্যায় থেকে একটি কার্যকর রেফারাল সিস্টেম চালু করতে পারলে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার জন্য কোনো রোগীকে প্রথমেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অথবা বিশেষায়িত হাসপাতাল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করতে হবে। যে কোনো রোগে প্রথমেই উপজেলা হাসপাতাল অথবা এই সমমানের হাসপাতালে যেতে হবে। তাদের চিকিৎসা ব্যর্থ হলে তারা জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেবেন। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসায়ও রোগ না সারলে জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে রেফার করে দেবেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অথবা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অথবা অন্য কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে। এই রেফারাল সিস্টেম চালু করতে পারলে অনেক রোগের চিকিৎসা প্রাথমিক পর্যায়েই শেষ করে দেয়া যাবে, রোগীর খরচ কমে যাবে এবং অযথাই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অথবা বিশেষায়িত হাসপাতাল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জটিল রোগী চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।
উন্নত বিশ্বে এ ধরনের সিস্টেম চালু থাকায় সেখানে চিকিৎসাব্যবস্থা বেশ গতিশীল। সেখানে উপরের দিকের হাসপাতালের চিকিৎসকরা গবেষণা করার প্রচুর সুযোগ পান, বাংলাদেশে অনেক যোগ্য চিকিৎসক থাকার পরও তারা গবেষণা করতে পারেন না এসব কারণে। তাদেরকে প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসকদের কাজ করেই সময় কাটিয়ে দিতে হয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংস্কার কমিটির সভায় এই বিষয়টির প্রতি জোর দেয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে চিকিৎসকদের নিয়োগ দেয়া হবে তাদের উপজেলায় উপস্থিতি নিশ্চিত করার সব ব্যবস্থা করার ওপরও বৈঠকে জোর দেয়া হয় বলে সূত্রটি জানিয়েছে। উপজেলায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের পুরস্কারস্বরূপ চিকিৎসকদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেয়া হয় এবং তা হতে হবে যোগ্যতা ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। সভায় পরিবেশগত রোগ-শোকের ওপরও আলোচনা হয়। শুধু সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা নয়, পরিবেশগত সমস্যার কারণে সৃষ্ট রোগগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের সেবা দেয়ার জন্য চিকিৎসকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারণ বাংলাদেশ পরিবেশগত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। জলবায়ুজনিত কারণে যে রোগগুলো হচ্ছে সেগুলোর জন্য ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ড থেকে অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
বৈঠকের সেই সূত্রটি জানিয়েছে, আরো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিটিতে। কমিটির পরবর্তী বৈঠকে স্বাস্থ্য সংস্কারে আরো গুরুত্ব আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন