ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব হলে নির্দিষ্ট দলের হাতে দেশ ও ভোট জিম্মি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না
নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে জাতীয় সংসদে দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা চান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, এতে কোনো নির্দিষ্ট দলের হাতে দেশ ও ভোট জিম্মি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনার কয়রার কপোতাক্ষ কলেজ ময়দানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।
আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়ার দাবি জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো বাস্তবভিত্তিক এবং মৌলিক সংস্কার চাই। সংস্কারের সাথে সাথে বর্তমান সরকার যেন নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়। রোডম্যাপ দেওয়ার আগে সমস্ত ভোটারের উপযুক্ত বয়স যাদের হয়েছে, পরিণত বয়স যাদের হয়েছে তাদের সবার ভোটার তালিকা নিশ্চিত দেখতে চাই।’ প্রবাসীদের ভোটের অধিকারও দাবি করেন তিনি।
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে। যে দল যত পারসেন্ট ভোট পাবে সেই দল সংসদে তত পারসেন্ট প্রতিনিধিত্ব করবে। এতে করে এক পারসেন্ট ভোট যদি কোনো দল পায় সেই দলের যোগ্য লোক থাকলে তারাও সংসদে গিয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে। কোনো নির্দিষ্ট দলের হাতে দেশ এবং ভোট এই দুটি জিম্মি হওয়ার আর আশঙ্কা থাকবে না। এই জন্য আমরা চাই যে আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা হোক।’
খুলনার কয়রা-পাইকগাছার প্রধান সমস্যা বেঁড়িবাধ সংকট নিরসনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আপনারা অন্তত শুরু করুন। জামায়াত দেশসেবার সুযোগ পেলে আর কোনো দাবি করতে হবে না, বরং জনগণের সংকটগুলো খুঁজে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবে।’ এদেশের যুবকরা বৈষম্যমুক্ত যে সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল, তেমন একটি সমাজ গড়তে তিনি সকলের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা কামনা করেন।
কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের আমীর আরও বলেন, মা-বোনদেরকে জামায়াত ভীতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথেই মা-বোনেরা দেশ গড়ার কাজে অংশ নেবে।
সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলতে কোন বাক্য এদেশে নেই উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, সবাইকে নিয়ে মিলেমিশেই দেশ গড়তে চায় জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ কোনো গোষ্ঠী নয়, বরং ‘প্রত্যেকেই আমরা একেকজন যোদ্ধা’বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে জামায়াতের আমির পাইকগাছার গদাইপুর ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত পথসভা এবং ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারো মাইলে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।
পাইকগাছার পথসভায় ডা. শফিকুল রহমান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত যেসব গুম, খুন, হত্যা, গণহত্যা করা হয়েছে সব খুনের বিচার জনগণ চায়। সেনা হত্যা, আয়নাঘরের হত্যা, জামায়াত নেতাদের হত্যা, সবশেষ ছাত্র-জনতাকে গণহত্যা সব হত্যার বিচার করতে হবে।
ভারতের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আপনাদের প্রতিবেশী হিসেবে সম্মান করি, আপনারাও আমাদেরকে প্রতিবেশী হিসেবে সম্মান করতে শিখুন। ভারত থেকে চোখ রাঙিয়ে আর বাংলাদেশকে শাসনের চিন্তা করবেন না। আমরা কারো অভ্যন্তরীণ বেশি হস্তক্ষেপ করি না। আমাদের ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করুক সেটাও আমরা চাই না।’
কয়রার কর্মীসম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল।
উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা শেখ সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন খুলনা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গাওসুল আযম হাদী, খুলনা উত্তর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ ও সেক্রেটারি আবু ইউসুফ ফকির।
পাইকগাছার পথসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল।
পাইকগাছার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জামায়াত আমীর মাওলানা শাহীদুর রহমান ও আঠারোমাইলের পথসভায় সভাপতিত্ব করেন, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইন।
ঢাকাটাইমস