Image description
রমজানের শুরুতেই কারাবন্দী আলেমদের মুক্তি দাবি জানিয়েছেন শীর্ষ উলামায়ে কেরামগণ
ফ্যাসিবাদী সরকারের কারাগারে বন্দি থাকা শীর্ষ আলেমদের রমজানের শুরুতেই মুক্তির দাবী জানিয়েছেন শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম। বৃহস্পতিবার (৩১শে মার্চ) এক যুক্ত বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। একই সাথে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক বন্দি ওলামায়ে কেরামের সাথে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কারাবন্দিদের সাথে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ করতে না দিয়ে আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বিবৃতিতে তারা বলেন, ইতিপুর্বে এত আলেমকে একসাথে কখনোই জেলে বন্দি করা হয়েছে বলে জানা নেই। দীর্ঘসময় ধরে শীর্ষস্থানীয় এই ওলামায়ে কেরাম বর্তমানে একসাথে কারাগারে বন্দী আছেন। দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে বন্দি থাকায় অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে উপলব্ধি করছি, বিপুল সংখ্যক উলামায়ে কেরাম কারাবন্দী থাকার কারণে বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে সংকট তৈরি হয়েছে এবং ইলমে দ্বীনের ছাত্রদের লেখাপড়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। প্রিয় শিক্ষকদের এহেন কষ্টকর জীবন দেখে ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, একজন কারাবন্দী শীর্ষ আলেমকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে, যেকোনো মূল্যে মামলার রায় ঘোষণা করে আটক রাখার এবং নানারকম মামলা দিয়ে রায় ঘোষণার পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। একদিকে পরিবারের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না, অপরদিকে দ্রুত রায় ঘোষণা করে তাকে সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বেদনা ও আক্ষেপের সঙ্গে বলতে চাই, কারাবন্দী আলেমদের অনেকে আছেন, যারা কোনোভাবে কোনো প্রকার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। বিবৃতিতে ওলামায়ে কেরাম বলেন, কারাগারে বন্দী অনেকে আছেন বয়োজ্যেষ্ঠ। দীর্ঘ কারাবাসের কারণে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এছাড়া কারাবন্দী আলেমদের প্রতিটি পরিবার চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাঁদের সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে আমরা স্থির থাকতে পারি না। কারা-আইন মোতাবেক একজন বন্দী পরিবারের সাথে যোগাযোগের বিধান থাকলেও আলেমদের ক্ষেত্রে সে সুযোগটি যথাযথভাবে দেওয়া হচ্ছে না। এটাকে আইনের সুস্পষ্ট লংঘন ছাড়া কি বলা যেতে পারে? এতে কি মানবাধিকারের লংঘন হচ্ছে না? বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা লক্ষ্য করছি যে, কারাবন্দী আলেমদের মধ্যে যারা একদিন সম্পুর্ণ সুস্থ অবস্থায় জেলে গিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাওলান ইকবাল হুসাইন নামে একজন প্রথিতযশা আলেম কারা-হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন। কেউ কেউ সোজা হয়ে হাঁটা-চলা পর্যন্ত করতে পারছেন না। এসব পরিস্থিতি ও দৃশ্য মেনে নেওয়া গোটা আলেমসমাজের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের শীর্ষ আলেমদের একটি প্রতিনিধি দল এবিষয়ে স্বরাষ্টমন্ত্রীর সাথে দেখা করে বিস্তারিত অবহিত করেছেন। এ অবস্থায় আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কারাবন্দী আলেমদের মুক্তির দাবী করছি। বিবৃতিতে আসন্ন রমজানের আগেই মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীনসহ গ্রেফতারকৃত সকল আলেমদেরকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী হচ্ছেন- আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মহাপরিচালক,আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া বাবুনগর মাদ্রাসা। আল্লামা মাহমুদুল হাসান, মহাপরিচালক জামিয়া ইসলামীয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা। আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মহাপরিচালক জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা। আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া আল হালিমিয়া( মধুপুর মাদ্রাসা) সিরাজদিখান মুন্সিগঞ্জ । মাওলানা আহমাদ দিদার কাসেমী, মুহাদ্দিস হাটহাজারী মাদ্রাসা। আল্লামা জিয়াউদ্দীন, মহাপরিচালক, জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর,বিয়ানীবাজার । আল্লামা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী, মোহতামীম, জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলুম মোমেনশাহী। মাওলানা মুহিব্বুল হক, মোহতামীম, জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ, সিলেট। মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব, মোহতামীম, জামিয়া ইসলামিয়া মাহমুদিয়া বরিশাল। মাওলানা আব্দুল হক, মহাপরিচালক, জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদ মোমেনশাহী। ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, পীর সাহেব আব্বাসী মঞ্জিল নারায়ণগঞ্জ, মাওলানা আনোয়ারুল করিম, মোহতামীম, জামিয়া এজাজিয়া দারুল উলুম যশোর। মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, মহাপরিচালক, শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা। মাওলানা আরশাদ রাহমানী সাহেব– , প্রিন্সিপাল, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার । মাওলানা শাব্বির আহমাদ রশীদ, মহাপরিচালক, আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ। মাওলানা মীর ইদ্রিস চিটাগং। মাওলানা মুশতাক আহমদ, মোহতামীম, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম খুলনা। মুফতি সাঈদ নূর,পীর সাহেব মানিকগঞ্জ। মাওলানা আব্দুল বছীর, মোহতামীম, জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া সুনামগঞ্জ। মাওলানা ইউনুস সাহেব রংপুর। আব্দুল মাবুদ, মোহতামীম, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হাকিমপুর বাগেরহাট। মাওলানা আবু দাউদ, মোহতামীম, জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম কুষ্টিয়া। মাওলানা উসমান গণি, প্রিন্সিপাল, কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসা ঝিনাইদহ। মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, প্রিন্সিপাল, দারুল উলুম দরগাহপুর, সুনামগঞ্জ। মাওলানা জিয়াউদ্দিন, প্রিন্সিপাল, জামিয়া শাহিদিয়া ইমদাদিয়া, নেত্রকোনা। মাওলানা ঈসমাইল নূরপুরী, প্রিন্সিপাল, জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া বৌয়াকুর নরসিংদী। মাওলানা ছামিউর রহমান মু সা, প্রিন্সিপাল, কাজীরবাজার মাদ্রাসা সিলেট। মাওলানা তাফহীমুল হক, প্রিন্সিপাল, জামিয়া ইসলামিয়া উমেদনগর মাদ্রাসা হবিগঞ্জ। মাওলানা মাহফুজুল হক, মহাপরিচালক, জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া ঢাকা। মাওলানা শহিদুল্লাহ কাওসার, দারুল মাআরিফ চট্টগ্রাম । মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, সিলেট। মাওলানা এনামুল হক, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার । মাওলানা মুজিবুর রহমান, প্রিন্সিপাল, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দড়াটানা মাদ্রাসা যশোর। মাওলানা রফিকুর রহমান, খুলনা। মাওলানা মুজিবুর রহমান, সাবেক মোহতামীম, দারুল উলুম খুলনা। মাওলানা তানভীরুল হক সিরাজী, প্রিন্সিপাল, জামিয়া সিরাজীয়া ভাদুঘর, বি-বাড়িয়া। মাওলানা মনিরুল হক, প্রিন্সিপাল, জামিয়া আরাবিয়া সিদ্দিকিয়া কওমিয়া সাতক্ষীরা। মাওলানা আতাউল হক, দরগা মাদ্রাসা সিলেট প্রমুখ। রমজানের মধ্যেই কারাবন্দী আলেমদের মুক্তি দাবি জানিয়েছেন শীর্ষ উলামায়ে কেরামগণ উল্লেখ্য, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে পুলিশ বাহিনী ও সরকারি দলের গুণ্ডাদের যৌথ আক্রমনে ব্রাহ্মবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোরআনে হাফেজ সহ অনেকেই নিহত হন। এই আন্দোলনের সূত্র ধরেই সরকার দেশের বিভিন্ন শীর্ষ আলেমকে আটক করে রিমাণ্ডের নামে নির্যাতন চালায়। অনেকেই রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত না থাকা সত্বেও ওয়াজ মাহফিলে ন্যায়-নীতি এবং ইনসাফের কথা বলার কারণে গ্রেফতার করা হয়। তাদের সকলকে বিনাবিচারে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।