Image description

ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর এ ক্ষেত্রে তিনি যে কোনো দেশের পরমাণু কর্মসূচিকে বড় শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন।

তার রাজনৈতিক জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেখা গেছে, তিনি বারবার যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয়েছেন। বিশেষ করে ইরান কিংবা ইরাকের মতো দেশগুলো যখন পরমাণু শক্তি বাড়ানোর দিকে এগোচ্ছে।

২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে নেতানিয়াহু সরাসরি সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ইরাকের কাছে যদি পরমাণু অস্ত্র চলে আসে, তবে তা শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে। তিনি সেই সময়ে আমেরিকার প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তিনি দাবি করেন, ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেন পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাকে থামানোই একমাত্র উপায়।

এই বক্তব্যের কয়েক মাস পরেই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে সামরিক অভিযান চালায়। যদিও পরে জানা যায়, ইরাকের কাছে প্রকৃতপক্ষে কোনো পরমাণু অস্ত্রই ছিল না। তবুও নেতানিয়াহু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, আগেই ব্যবস্থা না নিলে বিপদ আরও বড় হতে পারে।

ঠিক একই কৌশল আজ ইরান প্রসঙ্গেও দেখাচ্ছেন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, ইরান যদি পরমাণু শক্তি অর্জন করে, তবে তা ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তিনি ইরানকে ‘বিশ্বের প্রধান সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র’ হিসেবে আখ্যা দেন এবং বলেন, তাদের হাতে যদি পরমাণু বোমা চলে যায়, তাহলে কেউ নিরাপদ থাকবে না।

ইরান-ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে এ দুই দেশ একে অন্যকে শত্রু হিসেবে দেখে আসছে। ইরান এমন একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন করে যাদের ইসরায়েল তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। যেমন, লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজাভিত্তিক হামাস ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এ উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলে।

তবে ২০২৫ সালে এসে এবার ইসরায়েল ‘দ্য রাইজিং লায়ন’ নামের এক মিশন শুরু করে ইরানের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে নেতানিয়াহু। এর জবাবে ইরানও শুরু করে পাল্টা হামলা।

এদিকে ইসরায়েলের নিজের পরমাণু কর্মসূচি থাকলেও তারা কখনোই তা স্বীকার করে না। কিন্তু অন্য কোনো দেশ মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু শক্তি অর্জনের পথে এগোলে, তা নেতানিয়াহুর কাছে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর এই উদ্বেগ থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান বারবার।

এর কারণ সহজ—যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যাদের সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে এমন হুমকি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। আবার আমেরিকার ভেতরেও ইসরায়েলের একটি শক্তিশালী লবিং গ্রুপ রয়েছে, যারা নেতানিয়াহুর দাবিগুলোর পক্ষে জনমত তৈরি করে। এ ছাড়া ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের জটিল রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সম্পর্ক তো ‍আছেই।

নেতানিয়াহুর কাছে এই কৌশলটি শুধু নিরাপত্তার বিষয় নয়, রাজনীতিরও বড় একটি অস্ত্র। নিজ দেশের জনগণের সামনে তিনি নিজেকে একজন ‘নিরাপত্তার রক্ষক’ হিসেবে তুলে ধরতে চান। আমেরিকার সহায়তা চেয়ে তিনি যেমন বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তেমনি দেশের ভেতরে নিজের অবস্থান আরও শক্ত করতে চান। যদিও নিজ দেশের মুসলিমদেরও তিনি রক্ষা করছেন না।

সব মিলিয়ে, নেতানিয়াহুর বারবার যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়ার পেছনে রয়েছে নিরাপত্তা, রাজনীতি ও কৌশলগত স্বার্থের এক মিশ্র জটিলতা। অতীতের ইরাক প্রসঙ্গ হোক বা বর্তমানের ইরান-নেতানিয়াহুর কাছে পরমাণু হুমকির সমাধান সব সময়ই থাকে আমেরিকার দিকেই চেয়ে থাকা।