খালেদা মুক্তি পেলে ডিসেম্বরে বিএনপির কাউন্সিল, সাংগঠনিক ব্যস্ততায় আওয়ামী লীগ
খালেদা মুক্তি পেলে ডিসেম্বরে বিএনপির কাউন্সিল, সাংগঠনিক ব্যস্ততায় আওয়ামী লীগ
খালেদা মুক্তি পেলে ডিসেম্বরে বিএনপির কাউন্সিল # সাংগঠনিক ব্যস্ততায় আওয়ামী লীগ#
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে আগামী ডিসেম্বরে দলের ৭ম জাতীয় কাউন্সিলের আয়োজন করা হতে পারে। বছরের শেষ মাসের প্রথমার্ধকে সম্মেলনের সময় হিসেবে নির্ধারণের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় সেভাবেই দেশব্যাপী কাজ চলছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সম্মেলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা দল গোছাচ্ছি। বিভিন্ন জেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোও নিয়মানুযায়ী গঠন করা হচ্ছে। সম্মেলন তো অবশ্যই হবে। কবে হবে সেটা সময়মতো জানা যাবে।’ দলীয় নেতারা জানান, বিএনপির বিভিন্ন জেলা ও মহানগর কমিটি ছাড়াও মূল দলের বিভিন্ন শাখা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াও জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল ও জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ২৫টির মতো জেলা কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সেগুলোর পুনর্গঠনের কাজ চলছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কৌশলকে সামনে রেখেই বিএনপিকে এবার ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি ও মেহেরপুর- এই পাঁচটি জেলায় পূর্ণাঙ্গ এবং নীলফামারী জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাজশাহী বিভাগের নাটোর, বগুড়া ও পাবনা। রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়। খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল উত্তর জেলা, বরিশাল মহানগর ও পিরোজপুর জেলা। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলা। ঢাকা বিভাগের গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ। সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ। চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, চাঁদপুর, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা এবং কক্সবাজার জেলা। দলের সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রতি দুই বছর পর জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের আগেই দল এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠন করা হবে। এবারের কমিটি থেকে অনেক পরিচিত মুখও বাদ পড়ে যেতে পারেন। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ত্যাগী ও যোগ্য ব্যক্তিদের যথাযথ মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়টি আসলে চলমান প্রক্রিয়ারই অংশ। বেশিরভাগ জেলার কমিটি গঠনের কাজই ‘ম্যাডাম’ জেলে যাওয়ার আগেই সম্পন্ন করেছিলেন। যেগুলো বাকি আছে- সেগুলোর পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। আর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এটাই তো স্বাভাবিক। এবারও তা অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে। দলের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে কারামুক্ত বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়েই দলের জাতীয় কাউন্সিল তথা জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করতে চান তারা। এর মধ্যে দেশে ফিরতে না পারলে বিগত দুটি সম্মেলনের মতো এবারও স্কাইপির মাধ্যমেই সুদূর লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আশা করি আমাদের আগামী জাতীয় কাউন্সিল ‘দেশনেত্রী’ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই করব। তার আগে তাঁকে আমরা কারামুক্ত করে আনব এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই এদেশে আবার মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির সর্বশেষ ও ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন। তার আগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দলটির পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন।
.......................................................
.....সাংগঠনিক ব্যস্ততায় আওয়ামী লীগ.....
........................................................
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক ব্যস্ততা চলছে। এর মধ্যে রয়েছে- আগামী অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন, গঠনতন্ত্র সংশোধন, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর সম্মেলন ও কমিটি গঠন, সাংগঠনিক সফর, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করা এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি। এ ছাড়া কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়া সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিশেষ দায়িত্ব পাচ্ছেন দলের সিনিয়র নেতারা।
জানা গেছে, আগামী অক্টোবর মাসে শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ। যথাসময়েই জাতীয় সম্মেলন করতে চান দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রস্তুতি নিতে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। সে কারণে খুব একটা সময়ও পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ সময়ের মধ্যে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে তৃণমূলের সব মেয়াদোত্তীর্ণ (৪ থেকে ৫ বছরের অধিক সময়) কমিটিগুলোতে পুনরায় সম্মেলন অনুষ্ঠান এবং সম্মেলনে আগত কাউন্সিলরদের তালিকা ঠিক করে নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে সংগঠিত ও সুসংহত করতে চলতি মাস এপ্রিলেই দায়িত্বপ্রাপ্ত অঞ্চলগুলোয় সাংগঠনিক সফর শুরু করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। দেশের ৮টি বিভাগের প্রস্তাবিত কমিটিগুলোতে থাকছেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে শুরু করে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক। সাংগঠনিক এ মহাযজ্ঞ তদারক করবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। সাংগঠনিক সফরের জন্য এরই মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে কে কোথায় দায়িত্ব পাচ্ছেন তা এখনো না জানালেও নেতাদের মৌখিকভাবে দায়িত্ব সম্পর্কে বলে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলতি মাস থেকেই জেলা সফর শুরু হবে। এই সফরে যেসব উপজেলা-জেলায় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেখানের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে। আগামী শুক্রবার দলের উপদেষ্টা পরিষদ এবং ২০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা দেশব্যাপী সফরে বের হব।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নানা কারণে জেলা সফর এবং সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে দেরি হয়েছে। এ ছাড়া চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন হওয়ার কারণেও তৃণমূলে যেতে পারেননি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সে কারণে তারা এখনই সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী হয়েছেন। আগামী বছর (২০২০) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখে সরকারের ‘মুজিব বর্ষ’ পালনের ঘোষণা এবং ২০২১-এ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মতো বৃহৎ রাষ্ট্রীয় ও দলীয় কর্মসূচি রয়েছে। সব মিলিয়ে এর আগেই সংগঠনকে গুছিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নানা কারণে আমরা জেলা সফরে যেতে পারিনি। জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে গতিশীল করতে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে আমরা তৃণমূলে যাব। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, চলতি মাসেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফর শুরু হচ্ছে। এই সফরে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি খসড়া তালিকা করা হয়েছে এবং দলীয় সভানেত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সে কমিটি অনুমোদন হলেই নেতারা জেলা সফরে বের হবেন। প্রস্তাবিত কমিটিতে রংপুর বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন রমেশ চন্দ্র সেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএম মোজাম্মেল, টিপু মুনশি এবং এইচ এন আশিকুর রহমান। রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন মোহাম্মদ নাসিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, নুরুল ইসলাম ঠা ু এবং মেরিনা জাহান। খুলনা বিভাগে পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, আবদুর রহমান, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, এস এম কামাল হোসেন, আমিরুল আলম মিলন এবং পারভীন জাহান কল্পনা। ঢাকা বিভাগে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মোজাফফর হোসেন পল্টু, কাজী জাফরউল্লাহ, সাহারা খাতুন, মুকুল বোস, আবদুল মান্নান খান, ডা. দীপু মনি, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, নুরুল মজিদ হুমায়ুন, আখতারুজ্জামান, ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা, মৃণাল কান্তি দাস, কামরুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, সিমিন হোসেন রিমি এবং এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার। ময়মনসিংহ বিভাগে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. আবদুর রাজ্জাক, ডা. দীপু মনি, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, অসীম কুমার উকিল, মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার এবং উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং।
বরিশাল বিভাগে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আফজাল হোসেন, শাম্মী আহমেদ এবং শ ম রেজাউল করিম। সিলেট বিভাগে আবুল মাল আবদুল মুহিত, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আহমদ হোসেন, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান এবং অধ্যাপক রফিকুর রহমান। চট্টগ্রাম বিভাগে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মতিন খসরু, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ড. হাছান মাহমুদ, এ কে এম এনামুল হক শামীম, ফরিদুন্নাহার লাইলী, সুজিত রায় নন্দী, ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, আমিনুল ইসলাম, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, হারুনুর রশিদ এবং নজিবুল্লাহ হিরু। এ ছাড়া বিভক্ত ঢাকার দুই সাংগঠনিক অঞ্চল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের সম্মেলন সফলে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন ড. আবদুর রাজ্জাক এবং লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান।
বিডি প্রতিদিন