আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেই মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপরাধ ঘটছেই। দলবদ্ধভাবে একের পর এক দলবদ্ধ ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, হত্যার মতো অপরাধ ঘটছে প্রায়ই। অপরাধপ্রবণতার লাগাম টানা যেন যাচ্ছেই না। এবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ ওয়ালটনের একজন কর্মকর্তা।
আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসায় রবিউল ইসলাম মিল্টন নামের ওই কর্মকর্তা প্রাণে রক্ষা পেলেও ছিনতাইকারীরা তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আদাবর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই কর্মকর্তা বাজার সেরে বাসায় ফিরছিলেন। আদাবর থানা এলাকার ৯/১০ নম্বর গলির মাথায় পাঁচজন ছিনতাইকারী ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার গতিরোধ করে। তারা ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও শারীরিকভাবে আঘাত করে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এ দৃশ্য দেখে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে ছিনতাইকারীরা তার ল্যাপটপ ব্যাগটি ফেলে পালিয়ে যায়। তবে মোবাইলটি ফোন নিয়ে যায় তারা।
ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম মিল্টন বলেন, 'তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাকে যেভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়েছে, আমি কোনো ধরনের কথাবার্তা বললে হয়তোবা জীবনের ওপর বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারত। আল্লাহ রক্ষা করেছেন। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।'
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। তবে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মোবাইলটি উদ্ধার কিংবা কাউকে আটক করতে পারেনি।
আদাবর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, 'আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের আইনের আওতায় দ্রুতই নিয়ে আসা হবে। পাশাপাশি মোবাইল উদ্ধারে প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।'
মোহাম্মদপুরে একের পর এক অপরাধের ঘটনায় পুলিশ তৎপর হয়েছে, তবে অপরাধ প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে অবৈধ মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ, বাজারসহ নানা খাত দখলে নিতে মরিয়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একাধিক গ্রুপ। নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে লিপ্ত হচ্ছে সংঘর্ষে। এসব সংঘর্ষে প্রদর্শন ও ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। সেই সঙ্গে ঝরছে জীবনও। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মোহাম্মদপুর এলাকার পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রও।
গত ১১ অক্টোবর গভীর রাতে মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনী ও র্যা বের পোশাক পরে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল এক ব্যবসায়ীর বাসায় ঢুকে সাড়ে ৭৫ লাখ টাকা ও ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২০ অক্টোবর মোহাম্মদপুরেই দিনে-দুপুরে অস্ত্রের মুখে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সকাল সোয়া ১০টার দিকে মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেড ৩ নম্বর সড়কে নেসলে কোম্পানির পণ্য পরিবহনকারী একটি গাড়ি থামিয়ে ১২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় ডাকাত দলের সদস্যরা।
গত ১০ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় রবিউল ইসলাম (৩৫) নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর বুকে, পিঠে ও হাতে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। এ ছাড়া গত ১৬ অক্টোবর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. শাহনেওয়াজ (৩৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।
১৭ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ কাঁচাবাজার মার্কেট দখলকে কেন্দ্র করে গুলির ঘটনা ঘটে। মার্কেটের সভাপতি আবুল হোসেন (৫০) ও তার ছোট ভাই মাহবুবকে (৪২) গুলি করে দুর্বৃত্তরা।
চলতি মাসে আরও অনেক অপরাধ সংঘটিত হলেও ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগেরই থানা পুলিশে অভিযোগ করতে আগ্রহ কম। ছিনতাই-ডাকাতির শিকার অনেকে পুলিশি সহায়তা অর্থাৎ জিডি কিংবা মামলা করেনি। ভুক্তভোগী বক্তব্য, থানা-পুলিশ-আদালতের ঝামেলা এড়াতে পুলিশের শরণাপন্ন হননি তারা। অনেক ভুক্তভোগী আবার ডাকাতির ঘটনায় ছিতাইয়ের মামলা করেছেন।
পুলিশ বলছে, জিডি-মামলা না করলে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা মুশকিল। একই সঙ্গে অপরাধীদের শনাক্ত করাও অনেক সময় সম্ভব হয় না। অবশ্য এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব এলাকায় বেশি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটবে সেসব এলাকার ওসিসহ দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন