বাংলাদেশের জাতীয় উদ্যান পরিচিত বোটানিক্যাল গার্ডেন হিসেবে। জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেন অবস্থিত। এই গার্ডেনে রয়েছে চেনা-অচেনা নানা ধরনের গাছগাছালি। উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য এ গার্ডেনটি প্রতিষ্ঠা হলেও বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের কারণে সে কার্যক্রম এখন অনেকটাই ব্যহত হচ্ছে। সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পূর্বে গার্ডেন সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নেয়া যাক।
২০৮ একর জায়গার ওপর ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন)। উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল উদ্যানটি। এছাড়া গবেষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের গবেষণা কাজও এখানে হয়ে থাকে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে ৯৫২ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৬ প্রজাতির ৩৫ হাজার, ৩১০ প্রজাতির ১০ হাজার গুল্ম এবং ৩৮৬ প্রজাতির ১২ হাজার বৃক্ষ ও লতাজাতীয় গাছ। আগর, চন্দন, আমলকি, হরিতকি, অশোক, গজারির মত মূল্যবান গাছ রয়েছে এখানে। বৃক্ষ শনাক্ত করার জন্য সেকশন অনুযায়ী গাছে ফলক টানানো রয়েছে। এ রকম ৫৭টি সেকশন রয়েছে পুরো বোটানিক্যাল গার্ডেনে। গোলাপ, পাইন, ফল, বাঁশ, ঔষধি, মৌসুমী নামে বেশ কয়েকটি বাগান রয়েছে এর চারপাশে। আছে পদ্মপুকুর, শাপলা পুকুর, ক্যাকটাস হাউস ও অর্কিড হাউস। সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বোটানিক্যাল গার্ডেনে অবস্থান করা যায়।
মূলত যে উদ্দেশ্যে গার্ডেনটি তৈরি করা হয়েছিল সে উদ্দেশ্য এখন অনেকটাই ব্যহত হচ্ছে। সরেজমিনে গার্ডেন পরিদর্শন করে দেখা যায় বোটানিক্যাল গার্ডেন এখন নিরাপদ ডেটিং জোন। অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায়, ডেটিং জোনের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র বোটানিক্যাল গার্ডেন। মাদক বিক্রেতা, ভাসমান পতিতা, প্রতারক, ছিনতাইকারীসহ নানা অপরাধীচক্র মিরপুরের বিনোদন কেন্দ্রটিতে একচেটিয়া চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মকা-। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে নিয়মিত বসে মাদকসেবীদের হাট। ছিনতাইয়ের ঘটনা নিত্যদিনের নিয়মেই পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসীরা বোটানিক্যাল গার্ডেনকে তাদের হত্যার নিরাপদ জায়গায় পরিণত করেছে। এখানে নিরাপদে হত্যাকা- ঘটিয়ে সহজেই পালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মাদকসেবীরা আশ্রয় নিচ্ছে এই গার্ডেনে। কোনো বৈদ্যুতিক বাতি না থাকায় গার্ডেনে রাতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। গত এক বছরে বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে তরুণীসহ প্রায় ১০-১২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অনেক সময় নিরাপত্তা দিতে অপারগ।
মূলত গার্ডেনের অভ্যন্তরে অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য দায়ী এখানের ইজারাদাররা। কিছু স্থানীয় মাস্তান এবং ইজারাদারের নিয়ন্ত্রণে এখানে চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। গার্ডেনের ভেতরে রয়েছে চিড়িয়াখানা ও গার্ডেনের কর্মচারিদের আবাসিক এলাকা। কর্মচারীদের সন্তানদের অধিকাংশই অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে লোক এসে তাদের কাছ থেকে মাদক ক্রয় করে এখানে বসেই নেশা করছে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলারও সাহস পাচ্ছে না। পুলিশ নিয়মিত তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এরা দিনের বেলায় অনেক দর্শনার্থীর মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিচ্ছে। এদের কারণে দিন দিন গার্ডেনে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমছে। গার্ডেনের আশপাশের বেশ কিছু বখাটের আস্তানা এই গার্ডেন। বেড়াতে আসা তরুণ-তরুণীদের বিভিন্নভাবে নাজেহাল করে এরা এবং তাদের টাকাকড়ি ও মূল্যবান মালামাল হাতিয়ে নেয়। অসামাজিক কার্যকলাপের দৃশ্যে সভ্য মানুষের চোখ বন্ধ করে দেয়।
এখানে অসামাজিক কার্যকলাপের পরিমাণটা এতটাই বেশি যে, এজন্য কেউ কেউ বোটানিক্যাল গার্ডেনকে অভিহিত করছেন রাজধানীর সেক্স প্লেস হিসেবে। এ সম্পর্কিত অনেক খবর বিভিন্ন গণমাধ্যম গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করলেও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকতে গেটে উচ্চদামে বিক্রি হয় পুরাতন পত্রিকা। এখানে ঘুরতে আশা যুগল দর্শনার্থীরা পুরাতন পত্রিকা কেনেন বসে অথবা শুয়ে ডেট করার জন্য। গার্ডেনের গেট দিয়ে ঢুকেই হাতের ডানে দেখা যায় আপত্তিকর অবস্থায় নানা যুগলদের আড্ডা। ছোট ছোট গাছের আড়ালে অথবা নানা ঝোপঝাড়ে আপত্তিকর অবস্থায় ডেট করছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এখানে মধ্যবয়স্ক নারী পুরুষের আনাগোনাও দেখা যায় বেশ। এ বয়সের নারী পুরুষেরা মূলত পরকীয়া করছেন। নিজ নিজ স্বামী-স্ত্রীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এখানেই ডেট করাকে তারা নিরাপদ মনে করেন। বোটানিক্যাল গার্ডেনের এক কর্মচারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছি, একটা বিষয় লক্ষ্য করি, এখানে এখন যারা ঘুরতে আসে তাদের বেশিরভাগই পরকীয়া করে। এখানে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা কম আসে। এছাড়া গার্ডেনে দেখা গেছে বিভিন্ন পতিতাদের আনাগোনা। দিনের বেলায় এদের পরিমাণ কম থাকলেও সন্ধ্যার সাথে সাথে এদের সংখ্যা বেড়ে যায়।
গার্ডেনের প্রথম গেট পেরিয়ে দ্বিতীয় টিকিট চেকিং গেটের পাশে গেলে দেখতে পাই সেখানে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন এক সুন্দরি তরুণী। বেশ নিচু গলায় কথা বললেও অনেকটা কৌতূহলবশত শোনার চেষ্টা করছিলামÑ ‘এ্যাই, তুমি কোথায়? জলদি আসো, আমার হাতে বেশি সময় নাই, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। গত পরশু যেখানে বসেছিলাম সেখানে চলে আস। ওকে ওকে রাখলাম। সোজা ওখানে চলে আসো। আমি চলে যাচ্ছি।’ ফোনটা ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে তরুণী সোজা চলে যায় ঝোপের কাছে। মিনিট কয়েকের ব্যবধানে সেখানে হাতে পেপার নিয়ে চলে আসে মাঝবয়সী ভদ্রলোক। পেপারগুলো মাটিতে বিছিয়ে অন্তরঙ্গ পরিবেশে বসে পড়ে দুজন।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রবেশপথ থেকে একটি সোজা পাকা সড়ক চলে গেছে উদ্যান কর্তৃপক্ষের অফিস পর্যন্ত। প্রবেশদ্বার থেকে কয়েক পা এগুলে পাকা সড়কের পূর্ব পাশ দিয়ে একেবারে উত্তরের শেষ মাথা পর্যন্ত লেকের পাড় দিয়ে রয়েছে অসংখ্য ঝোপঝাড়। এই সব ঝোপঝাড়ের আড়ালে জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতী। শুধু এখানেই নয় উদ্যান কর্তৃপক্ষের অফিসের পেছনে, পদ্মপুকুর পাড়েও দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের বিব্রতকর দৃশ্য। কোন ঝোপঝাড়ের দিকে প্রবেশাধিকার নেই সাধারণ দর্শনার্থীদের। বাঁশের ছোট ছোট চিকন লাঠি হাতে পাঁচ-সাত জন করে যুবক দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে। ওরা পাহারাদার। উদ্যানের ইজারাদার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ওরা। তবে ওদের নেই কোন ডিসিপ্লিন পোশাক ও আইডি কার্ড। হাতের লাঠি হচ্ছে ওদের আইডি কার্ড। লাঠি হাতে দেখলে বুঝে নিতে হবে ওরা উদ্যান ইজারাদারের নিয়োজিত লোক। পুরো উদ্যানে লাঠি হাতে ওদের সংখ্যা পঞ্চাশ থেকে ষাট জন। ওদের কাজ গার্ডেনের দর্শনার্থীদের নিরপাত্তা বিধান করা, যাতে কেউ উদ্যানে গিয়ে প্রতারণার কবলে বা ছিনতাইয়ের কবলে না পড়ে। তবে সরেজমিনে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। তারা লাঠি হাতে পাঁচ-সাতজনের গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঝোপঝাড় এলাকায় বিশেষ দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যস্ত। আরেক জায়গায় দেখা গেল দল বেঁধে বসে সিগারেট ফুঁকছে তারা। তাদের সামান্য দূরে ঝোপের মধ্যে আপত্তিকর অবস্থায় কয়েক জোড়া প্রেমিকযুগল। ও দিকটায় এগুতে চাইলে দল বেঁধে বসা যুবকদের একযোগে উচ্চারণ- এদিকে নয়, ওদিকে যান। তাদের ভাবগতিক দেখে ওদিকে এগুতে সাহস পায় না কেউ। সূত্র জানায়, ১ কোটি টাকা দিয়ে উদ্যানের প্রবেশদ্বারসহ পার্কিং ইজারা নিয়েছেন একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারাদার কোম্পানি তাদের বেশি আয়ের জন্য এখন এখানে অবাধ অশ্লীলতা পর্যন্ত ওপেন করে দিয়েছে।
এসব কারণে এখন আর উদ্যানের শোভা উপভোগ করতে বা বৃক্ষরাজির সঙ্গে পরিচিত হতে উদ্যানে কেউ যান না। আমাদের জাতীয় ওই উদ্যানটি এখন একটি ভাড়ায় চলা ডেটিং জোনে পরিণত হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখতে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় বলে এখানে এখন অনেকেই আসতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ছুটির অবসরে আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরতে যেয়ে চরম বিরক্তকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। তিনি বলেন, আমি আমার সন্তানদের নিয়ে এতটাই বিরক্তিকর পরিবেশের শিকার হই যে, আমরা গার্ডেনে বেশিক্ষণ অবস্থান না করে চলে আসি।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের এমন পরিস্থিতিতে এ ব্যপারে প্রশাসন এবং সচেতন সমাজ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই মনোরম উদ্যানটি তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে স্থায়ীভাবে রাজধানীর সেক্স প্লেস হিসেবে পরিচিতি পাবে।
পাঠক মন্তব্য
Yes, I am totally agree with the report. I always use to have some walk into the Garden but in the morning but their management attitude is negative. And in the afternoon & Evening it's horrible to enter into the garden, i feel shame what the garden administration is doing their. No one who has minimum self respect will not go second time with his /her family. We should protect our priceless resources and govt. should take major initiative to protect the general public interest. Azad
garden bondo na kore illegal prem bondo kora ocit.....
honesty is the best policy
Allah jeno gojob najil koren,Bangladesh sorkarer upor
kita koibam? kicchuta kowar nai. atto subida deikha amr ei mon caitace akta girl friend banaia oikhane gia ** kri
Yes I so that live telecasts they're doing open sex before 10 years I so that's
আমার মনে হয় এখন আর কেউ বোটানিক্যাল গার্ডেনে গাছপালা দেখতে যায়না যায় অশ্লীলতা করতে অথবা দেখতে।
অনেক লোক আছে, যারা গার্ডেনের ভিতরে টিকিট চেকের কথা বলে, দর্শনার্থীদের কাছে থেকে সব টাকা পয়সা, এবং মূল্যবান সব কিছু ছিনিয়ে নেয়। আবার অনেক সময় দর্শনার্থী মেয়েদের সাথে অশ্লীল আচরণও করে।
আগে যখনই ঢাকা যেতাম এক পাক ঘুরে আসতাম বোটানিক্যাল গার্ডেনে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে মনে প্রশান্তি আসত। এখন আর উপায় নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কিভাবে যাব, একা যাওয়ারই সাহস/রুচি হয়না!
এটার কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা, জাতীয় উদ্যাণ হয়েছে বেশ্যা পাড়া। এটা ওপেন সিক্রেট। সরকারি ও উদ্যাণ কর্মকতা এবং সয়ং প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে অবগত আছেন বলে আমার বিশ্বাস।
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন