ভয়ংকর আইএস
ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব আর পশ্চিমাদের কঠোর নজরদারিতে দুর্বল হয়েছে একসময়ের ভয়ংকর জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা। গত কয়েক মাসে আল-কায়েদার তেমন কোনো তৎপরতার কথা শোনা যায়নি। এর মধ্যে হঠাৎ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে আরেক জঙ্গি সংগঠন ইসলামি স্টেট-আইএস। ইরাক ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি অঞ্চলজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে করছে সুন্নি আরব জঙ্গিদের এই সংগঠন। অন্য জঙ্গি সংগঠনের তুলনায় এরা ভয়ংকর অন্য কারণে। ধর্মভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো চোরাগোপ্তা হামলা করে এলেও আইএস প্রথমবারের মতো প্রকাশ্য যুদ্ধে জড়াচ্ছে। নিয়মিত সেনাবাহিনীর মতো স্থল অভিযানে অংশ নিয়ে এলাকাও দখল করছে তারা।
মূলত আল-কায়েদা থেকে বের হয়ে আসা সংগঠনই এই আইএস। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। কিছুদিন আগেও সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অব দি ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট/ সিরিয়া বা আইএসআইএল/আইএসআইএস।
ইরাকে রাজনৈতিক সংঘাতের সুযোগে প্রকাশ্যে চলে আসা এই জঙ্গিগোষ্ঠী অল্প কয়েক দিনেই আলোচনায় এসেছে তাদের আক্রমণাত্মক মনোভাব আর বর্বরতার জন্য। জীবন্ত কবর দেওয়া, ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা, লাইনে দাঁড় করে গুলি করে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে তারা। আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘ। শিশুদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার অভিযোগও আছে আইএসের বিরুদ্ধে।
নবীর মাজার ধ্বংস
ইরাকের দখলকৃত মসুল রাজ্যে কয়েকটি শিয়া তীর্থস্থান ধ্বংসের পর জুলাইয়ের শেষ দিকে দুজন নবী হজরত ইউনুস (আ.) ও দানিয়েল (আ.)-এর সমাধি হিসেবে পরিচিত একটি মাজার বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা।
ইরাকের মসুল শহরের উত্তরাঞ্চলে একটি পাহাড়ের ওপর অবস্থিত ইউনুস নবীর কবর। মাজারে উপস্থিত লোকজনদের বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে অনেকটা ফিল্মি কায়দায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সমাধিটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয় আইএস জঙ্গিরা।
সম্প্রতি উত্থানের পর আইএস ইরাকে বহু মসজিদ, খানকাহ ও মাজার ধ্বংস করেছে। শুধু জুলাইতে এরা ইরাকে প্রায় ৩০টির মতো মাজার এবং ১৫টির মতো হুসেইনিয়া ও মসজিদ ধ্বংস করেছে। মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন হজরত দাউদ (আ.)-এর মাজার, ইমাম ইয়াহিয়া ইবনে আল কাশেমের মাজার এবং আয়ান আল-দ্বীনের মাজার এবং ইমাম আওন বিন আল হাসান মসজিদ ধ্বংস করে জঙ্গিরা। মসুল অঞ্চলে বেশ কিছু শিয়া তীর্থস্থানও একইভাবে ধ্বংস করেছে তারা।
মসজিদে ঢুকে হত্যা
ইরাকের পূর্বাঞ্চলীয় দিয়ালা প্রদেশের বাকুবা শহরে সুন্নি মুসলমানদের একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে ৭৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় এ হামলা চালানো হয়। ইরাকের কর্মকর্তারা জানান, একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর পালানোর চেষ্টা করা মুসল্লিদের ওপর বন্দুকধারীরা গুলি চালায়। শিয়া মিলিশিয়ারা প্রতিশোধমূলকভাবে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। তবে কেউ কেউ আইএস জঙ্গিদের এ হামলার জন্য দায়ী করছেন।
শত্রুদের জীবন্ত কবর!
ইরাকের উত্তরে সংখ্যালঘু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে সুন্নিপন্থি এই জঙ্গি সংগঠনটি। আইএস বিদ্রোহীরা সিনজারের ৪৫ কিলোমিটার দূরে ইয়াজিদিদের গ্রামে গিয়ে হত্যা করে। জঙ্গিরা বলে, হয় ইসলাম গ্রহণ করো, নয় মৃত্যুকে গ্রহণ করো। এ সময়ে পুরুষদের হত্যা করে নারী ও শিশুদের তুলে নিয়ে যায় আইএস জঙ্গিরা।
জানা যায়, এ হত্যাযজ্ঞ চালানোর পাঁচ দিন আগে থেকে আইএস জঙ্গিরা ইয়াজিদিদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য প্ররোচিত করছিল। যেসব ইয়াজিদি আইএস জঙ্গিদের কথা মানেনি তাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে।
ইরাকের মানবাধিকার মন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি জানান, আইএস জঙ্গিরা এ পর্যন্ত ইরাকের ৫০০ ইয়াজিদিকে হত্যা করেছে। নারী ও শিশুসহ কয়েকজনকে জীবিত কবর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩০০ নারীকে দাস হিসেবে ব্যবহারের জন্য তুলে নিয়ে গেছে।
সৌদি আরবে হামলার হুমকি
পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে আমেরিকার বিভিন্ন কাজে মৌন সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে সৌদি আরবে হামলার পরিকল্পনা করছে আইএস। জঙ্গি সংগঠনটি এক ঘোষণায় বলেছে, হজ ও ঈদুল আজহার কথা বিবেচনা করে তারা আপাতত হামলা করছে না। ঈদের পর সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে হামলা করবে।
সিরিয়ার এলান নিউজ পোর্টালের এক খবরে বলা হয়েছে, সৌদি আরবে হামলার জন্য আল-কায়েদার এজেন্টদের থেকে অস্ত্র ও টাকা নেবে আইএস। তবে কাতার আইএসের গতিবিধি সম্পর্কে নজর রাখছে। তারা এ ব্যাপারে সৌদিকে সহায়তা করবে।
খবরে আরো বলা হয়, ইরাক ও সিরিয়া থেকে চুরি করা জ্বালানি তেল বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করছে আইএস। তবে সৌদি আরবের প্রতিবেশী দেশগুলো আইএসের অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো ঠেকাতে সর্বাত্মক সতর্ক রয়েছে।
আইএস বর্তমানে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে এবং ইরাকের উত্তরাঞ্চলে শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে। তারা সব ধরনের সম্প্রদায় ও গোত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শিয়া, সুন্নি, কুর্দি, খ্রিস্টানসহ অন্যরাও হুমকির মুখে আছে।
সিরিয়াতে ৭০০ মানুষকে হত্যা
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দিয়ের আল জর প্রদেশে আল শেইতাত নৃগোষ্ঠীর প্রায় ৭০০ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা।
গত তিন বছরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করে আসা এ মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, নিহতদের অনেকের শিরচ্ছেদ করেছে আইএস জঙ্গিরা। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ জন যোদ্ধা। বাকিরা বেসামরিক নাগরিক। শেইতাত আদিবাসী অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি গ্রামে গত দুই সপ্তাহে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
গণহত্যার অভিযোগ
সিরিয়ায় আইএস গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। সবশেষ মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএস জিহাদিরা সেখানে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা প্রায়ই প্রকাশ্যে লোকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে থাকে এবং শিশুসহ স্থানীয় অধিবাসীদের এই দৃশ্য দেখতে বাধ্য করা হয়। হত্যার পাশাপাশি সেখানে লোকজনের হাত-পা কেটে দেওয়া, নিয়মানুযায়ী পোশাক না পরার জন্য নারীদের প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত ইত্যাদিও ঘটছে। তাদের মরদেহ ক্রুবিদ্ধ করে তা প্রকাশ্য স্থানে রাখা হয়, যাতে স্থানীয়রা ভয় পায়।
ইসলামিক স্টেট সেখানকার ১০ বছর বয়েসের শিশুদেরও সৈনিক হিসেবেও ব্যবহার করছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ বলছে, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী সেখানে হেলিকপ্টার থেকে ব্যারেল বোমা এবং ক্লোরিন গ্যাস ফেলছে। তারা হাসপাতালের ওপরও গোলাবর্ষণ করে।
মেয়েদের খৎনা করার নির্দেশ
ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর ভয়ংকর শাসন চালাচ্ছে আইএস। মসুলসহ উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোর ১১ থেকে ৪৬ বছর বয়সী নারীদের খৎনা করার নির্দেশ দিয়েছে তারা। ইরাকে জাতিসংঘের আবাসন এবং মানবাধিকারবিষয়ক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি এ খবর দিয়েছে।
প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের যৌনাঙ্গ কর্তন বা খৎনা আফ্রিকা অঞ্চলের একটি প্রথা। কাজটি অযাচিত নিষ্ঠুরতা হওয়ায় ২০১২ সালে সব সদস্য দেশে তা নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ।
ইরাকে জাতিসংঘের কর্মকর্তা জেকলিন বেডকক বলেন, ইসলামিক স্টেটের ওই ফতোয়ার ফলে তাদের দখলকৃত অঞ্চলের অন্তত ৪০ লাখ নারী এর শিকার হতে পারে।
মার্কিন সাংবাদিকের শিরচ্ছেদ
জেমস ফলি নামের এক মার্কিন সাংবাদিকের শিরচ্ছেদ করে তার ভিডিও প্রকাশ করেছে আইসএস। আরেক মার্কিন সাংবাদিককেও হত্যার হুমকি দিয়েছে তারা।
আমেরিকার কাছে একটি বার্তা এ মেসেজ টু আমেরিকা শিরোনামে প্রায় পাঁচ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, উন্মুক্ত মরুভূমিতে ফলির মতো এক ব্যক্তির শিরচ্ছেদ করছে মুখোশ পরা এক জঙ্গি।
২০১২ সালের নভেম্বরে সিরিয়ায় অস্ত্রধারীদের হাতে অপহৃত হন ৪০ বছর বয়সী ফলি। লিবিয়ার যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার কাজ শেষে সিরিয়ায় যান এই অভিজ্ঞ সাংবাদিক। তিনি গ্লোবাল পোস্ট, এএফপিসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে খবর সরবরাহ করতেন।
ভিডিওটির শেষের দিকে জঙ্গিদের হাতে বন্দি অপর একজন জীবিত ব্যক্তিকে দেখা যায়। তিনি মার্কিন সাংবাদিক স্টিভেন সটলফ বলে দাবি করা হয়েছে। ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলা বন্ধে ওবামার নির্দেশের ওপর ওই ব্যক্তির ভাগ্য নির্ভর করছে বলে সতর্ক করেছে জঙ্গিরা।
গত বছরের আগস্টে সিরিয়ায় অপহৃত হন সটলফ। তিনি টাইমসহ বিভিন্ন মার্কিন সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে লিখতেন।
সামরিক শক্তি
কট্টরপন্থি এ সংগঠনটির অস্ত্রাগারে রয়েছে ট্যাংক, বিমান বিধ্বংসী কামান। এ ছাড়া সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া যোদ্ধাবাহী সাঁজোয়া যান। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আইএসের কাছে সোভিয়েত আমলের টি-৫৫ সিরিজের ৩০টি ট্যাংক, টি-৭২ সিরিজের ১০টি ট্যাংক রয়েছে।
মাঝারি ক্ষমতাসম্পন্ন বেশ কিছু কামান রয়েছে যেগুলোর পাল্লা ১৪ মাইলের মতো। এসএ-৭ সিরিজের ভূমি হতে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, বিএম-২১ গ্রেডের একাধিক রকেট লাঞ্চার এবং ফিম-৯২ নামের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ম্যানপ্যাড। এ ছাড়া জেডইউ-২৩-২ বিমান বিধ্বংসী বন্দুক এবং এম৭৯ ওসা, এইচকে-৮ এবং ট্যাংক বিধ্বংসী এটি-৪ স্পিগট। এ ছাড়া প্রত্যেক সদস্যের কাছে তিনটি করে এম-১৬ রাইফেল ও বর্ম আছে।
মূলত সিরিয়া ও ইরাকি সামরিক বাহিনীর কাছ থেকেই এসব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কারো কারো মতে, তাদের কাছে স্বল্পসংখ্যক হেলিকপ্টারও রয়েছে।
অর্থ ও ক্ষমতার উৎস
ইরাক ও সিরিয়ায় কার্যক্রম চালানো সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী সশস্ত্র সংগঠন। শুধু অস্ত্র আর অর্থের দিক থেকেই নয়, সামরিক সক্ষমতার দিক থেকেও সংগঠনটি অন্য আর দশটা সংগঠনের থেকে বেশ এগিয়ে বলে দাবি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের। বিশ্লেষকদের ধারণা, জুন মাস থেকে ইরাকের উত্তরাঞ্চল এবং সিরিয়ায় নিজেদের কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে সংগঠনটি ১২০ কোটি ইউরো খরচ করেছে, যা আয়ারল্যান্ডের মতো ইউরোপীয় দেশের বার্ষিক সামরিক ব্যয়ের থেকেও বেশি।
আইএসের সবচেয়ে বড় আর্থিক বিজয়টা এসেছিল জুনে। মসুল শহর দখলের পর শহরটির বিভিন্ন ব্যাংকে লুটপাট করে তারা। এ সময় তারা আনুমানিক ২৪ কোটি ইউরো নিজেদের তহবিল জমা করে। এ ছাড়া তাদের দখলকৃত পাঁচটি তেলখনি থেকেও প্রতিদিন ১৮ লাখ ইউরো আয় হতো। ইরান ও তুরস্কের সীমান্ত দিয়ে এসব তেল রপ্তানি হতো।
আইএসের আর্থিক উৎস সম্পর্কে ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ পল সুলিভ্যান বলেন, আইএসের অবস্থান আফগানিস্তানের মতো কোনো অনুর্বর পল্লী অঞ্চলে নয়; তারা মরুভূমি কিংবা গুহার ভেতরে লুকিয়েও থাকে না। তাদের কার্যক্রম হলো বিশ্বের অন্যতম তেল, গ্যাস ও বাণিজ্যিক সম্পদপূর্ণ একটি এলাকায়। নিজেদের কার্যক্রম বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তারা এসব সম্পদ দখলে নিতে পারে।
স্থানীয় ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেও সংগঠনটি গত বছর ৫০ লাখ ইউরো আয় করে। এ ছাড়া গত বছর শুধু অপহরণ করেই চার কোটি ইউরো আয় করে। এসব উপার্জন ছাড়াও আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন দেশে থাকা সমর্থকদের অনুদানও সংগঠনটির আয়ের অন্যতম উৎস। যদিও সৌদি আরবসহ ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলো আইএসকে সহায়তার ব্যাপারে তার নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
আল-কায়েদার চেয়ে ভয়ংকর
সাম্প্রতিক সময়ে হামলা-ভয়াবহতার জন্য তালেবানকে ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচনায় চলে এসেছে আইএস জঙ্গিরা।
ইসলামিক স্টেটকে অন্য যেকোনো জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ানক বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়া ও ইরাকে এই সংগঠনটিকে রুখতে একটি আঞ্চলিক কোয়ালিশন দরকার বলেও মনে করে ওয়াশিংটন। এমনকি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে একটি দীর্ঘমেয়াদি হুমকি বলেও মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসলামিক স্টেটের মতো মৌলবাদী কোনো গোষ্ঠীকে সমূলে উপড়ে ফেলা সহজ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
ওবামা বলেন, আইএসের মতো একটি ক্যান্সারকে শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলা সহজ হবে না, আর এটি দ্রুতও করা যাবে না।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল বলেন, এ সংগঠনটিকে শুধু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলা যাবে না। তাদের মতধারা ও সামরিক কর্মকৌশল সব মিলিয়ে তারা এক ভয়ানক হুমকি। আগে দেখা যেকোনো ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের তুলনা করলে ভুল হবে বলে তিনি বর্ণনা করেন।
আইএসের উত্থান নিয়ে গোটা বিশ্বের সঙ্গে শঙ্কিত খোদ যুক্তরাষ্ট্রও। ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের জন্য ওবামার পররাষ্ট্রনীতিকে সরাসরি দায়ী করেছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ওবামার ভুল পররাষ্ট্রনীতির কারণেই সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হিলারি বলেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উৎখাত করতে যখন বিরোধীরা সহিংসতা শুরু করে, তখন ওবামা অনেকটাই চুপচাপ ছিলেন। মনে হয়েছিল তিনি ঘটনাকে এড়িয়ে যেতে চান। এটি তার বড় ব্যর্থতা। আসাদের বিরোধীরা ছিলেন ইসলামপন্থী, জঙ্গিবাদী। তাদের দমন করতে ওবামার ব্যর্থতা বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে। আর এ কারণেই জিহাদিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
এদিকে মার্কিনদের জন্য যেকোনো হুমকি হলে সিরিয়ার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত বলে ঘোষণা দিয়েছে হোয়াইট হাউস। ওবামা প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপ-উপদেষ্টা বের রডস বলেন, আইএসআইএলের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হলে তা সিরিয়া ও ইরাকের উভয় সীমান্তে প্রয়োগ করা হবে। সিরিয়ায় বিমান হামলা জরুরি হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের হুমকিকে একবাক্যে ব্যাখ্যা করেছেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্তা জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি। তার মতে, এটা এমন এক সংগঠন, যাদের চরম ধ্বংসাত্মক কৌশলগত লক্ষ্য আছে, তাদের পরাস্ত করতেই হবে। সিরিয়ায় হামলা ছাড়া আইএসকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে না জড়ানোর বিষয়ে অবস্থান নেওয়া ওবামা প্রশাসনের জন্য এখানেই সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ নিহিত।
সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিশেষজ্ঞ ব্রেইন ফিশম্যানের মতে, আইএসকে সত্যিকার অর্থে পরাজিত করতে ইরাক ও সিরিয়ায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দরকার হবে।
এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সিরিয়ায় আইএসকে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নীতি নেই।
ওবামা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, আইএসকে পরাজিত করার সবচেয়ে ভালো দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হলো সিরিয়ার মধ্যপন্থী বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। তারা একই সঙ্গে আইএস ও বাশার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
পেরে উঠছে না ইরাকি সেনাবাহিনী
আইএসের আক্রমণের মুখে ইরাকের সেনাবাহিনী পর্যদুস্ত হয়েছে সহজেই। পরে দেশটির সরকারের অনুরোধে আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগস্টের শুরুর দিকে মার্কিন বিমান বাহিনীর দুটো এফএ১৮ বোমারু বিমান থেকে ৫০০ পাউন্ড ওজনের লেসার নিয়ন্ত্রিত বোমা দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে।
২০১১ সালে থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর এই প্রথম মার্কিন বাহিনী ইরাকের ভেতর সরাসরি সামরিক অভিযানে অংশ নিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, আইএসের হুমকি মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ দরকার হয়ে পড়েছে।
জুন মাসে যখন আইএস ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল দখল করে নেয়, ইরাকের নুরী আল মালিকির সরকার সামরিক হস্তক্ষেপের আবেদন করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র তখন কান দেয়নি।
আইএস নিয়ে শঙ্কিত খোদ আল-কায়েদা
ইসলামিক স্টেটের চরম নৃশংসতার কারণে তাদের উত্থান নিয়ে শঙ্কিত ছিল খোদ আল-কায়েদাও। আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে পারে- এমন সতর্কবার্তা দিয়ে লেখা একটি চিঠিতে আল-কায়েদার উদ্বিগ্নতার তথ্য জানা যায়। আইএসের উত্থান সম্পর্কে সতর্ক করে গোষ্ঠীটির সঙ্গে আল-কায়েদার সব সম্পর্ক ছিন্ন করার পরামর্শ ছিল এতে।
২০১১ সালে বিন লাদেনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার লেখা এ চিঠিতে বলা হয়, ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীটি বেসামরিক নাগরিকদের জীবনের কোনো তোয়াক্কাই করে না।
চিঠিতে আইএসের নৃশংসতার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, তারা রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে ক্লোরাইন গ্যাস ব্যবহার করে, মসজিদে বোমা হামলা চালায়, ক্রুশবিদ্ধ করে এবং শিরোচ্ছেদ করে। আইএস বর্বরতার দিক দিয়ে আল-কায়েদাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
কী চায় আইএস?
ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান ও লেবাননের অংশবিশেষ নিয়ে একটি অঞ্চলজুড়ে খিলাফত পদ্ধতির ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আইএস। তারা বাগদাদের শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতিমধ্যে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে নিয়েছে। সিরিয়ায় সরকারবিরোধী লড়াইয়েও সংগঠনটি প্রভাব বিস্তার করছে। আইএসের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি নিজেকে তাদের অধিকৃত অঞ্চলের খলিফা হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
আইএসের যোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যা অজানা হলেও সংগঠনটির পক্ষে হাজার হাজার জিহাদি ইরাকে লড়াই করছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের মধ্যে বিদেশি মুসলিমের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। সুন্নি আরব মিলিশিয়াদের সম্মুখ বাহিনী হিসেবে পরিচিত আইএস গত ১০ জুন ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল দখল করে নেয়। এরপর ২৯ জুন ইরাকে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় তারা। সে সময় তাদের নেতার পরিচিতি প্রকাশ করা হয় খলিফা ইব্রাহিম হিসেবে।
নেতৃত্বে খলিফা ইব্রাহিম
জিহাদী নেতা ইব্রাহিম আওয়াদ ইব্রাহিম আলী আল-বদরী আল-সামারাই পরবর্তী সময়ে আবু বকর আল-বাগদাদী নামে পরিচিতি পান। এ ছাড়া তিনি ড. ইব্রাহিম ও আবু দুইয়া নামেও পরিচিত। বর্তমানে তিনি ইরাকের পশ্চিমাঞ্চল এবং সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইসলামিক রাষ্ট্র ঘোষণা করে নিজেকে ওই রাষ্ট্রের খলিফা দাবি করেন।
এর আগে আল-বাগদাদী ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্তের (আইএসআইএল নেতা ছিলেন, যা ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস) নামেও পরিচিত।
আল-বাগদাদী ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিলে প্রথম ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড লেভান্ত গঠনের ঘোষণা দেন। এটি হলো ইসলামিক স্টেট অব ইরাক (আইএসআই) জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্তরসূরি, যা আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার ইরাকের একটি শাখা সংগঠন।
২০১১ সালের ৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট আল-বাগদাদীকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে।
২০১৪ সালের ২৯ জুন খিলাফত ঘোষণা করা হয়। আল-বাগদাদীকে খলিফা হিসেবে মনোনীত করা হয় এবং আরো বলা হয় এখন থেকে তিনি খলিফা ইব্রাহিম নামে অবহিত হবেন। ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্তের নাম পরিবর্তন করে শুধু ইসলামিক স্টেট রাখা হয়।
আল-বাগদাদী ১৯৭১ সালে ইরাকের সামারাতে জন্মগ্রহণ নেন। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীর ইরাক অভিযানের সময় তিনি ইমাম ছিলেন। তিনি বাগদাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
চলতি বছরের জুনে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মসুল দখলের মাধ্যমে সাম্প্রতিক অভিযানের জানান দেয় সংগঠনটি। এর পর থেকেই তারা নৃশংসতা ও ভয়াবহতা শুরু করে। নৃশংসতার দিক দিয়ে আল-ক য়েদা, বোকো হারাম, লস্কর-ই-তায়েবা, জুমা ইসলামিয়া, ইসলামিক ফ্রন্ট, আল সাবাহ, তালেবানের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোও হার মানিয়েছে। সাধারণত ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো আকস্মিক বিমান হামলা বা অতর্কিত হামলা চালিয়ে থাকে। তবে আইএস প্রথমবারের মতো স্থল হামলা শুরু করেছে। ইসলামি মতাদর্শে বিশ্বাসী নয়- শুধু তারাই আইএসের নৃশংসতার শিকার হয় এমন নয়, ইসলামের সুন্নিপন্থায় যারা বিশ্বাসী নয় তাদের ওপরই চলে সংগঠনটির ভয়াবহতা। গুলি করে, ক্রুশ বিদ্ধ করে হত্যা করা হয় তাদের।
আইএসের লক্ষ্য হলো একটি সুন্নি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যা চলবে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী। এ জন্য তারা প্রথমে একটি শহর দখল করে নিয়ে সেখানকার মানুষদের বাড়ি দখলে নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন তাদের মধ্যে চালান করেন। এ কারণেই বাইরের কোনো সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে তাদের ওপর হামলা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আল-কায়েদার সঙ্গে অতীতে সম্পর্ক থাকলেও তাদের ভুলগুলো এড়িয়ে চলছে সংগঠনটি।
আইএসের উত্থানে সাহস পাচ্ছে আরেক জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম
নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর এবং গ্রামগুলোকে ইসলামিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম। দুই লাখ ৬৫ হাজার অধিবাসী অধ্যুষিত গোজাই-নাইজেরিয়ার বোকো হারামের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় শহর।
ধারণা করা হয়, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বোকো হারাম তিন হাজার থেকে ১০ হাজার মানুষ হত্যা করেছে। ২০১২ সালে ৬২০ জন এবং ২০১১ সালে ৪৫০ জন নিরীহ মানুষকে হত্যার জন্য বোকো হারামকে দায়ী করা হয়। দেশটির খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক হামলার জন্য দায়ী সংগঠনটি।
চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল বোকো হারামের জঙ্গিরা বোরনো প্রদেশের শিবন শহরের একটি হাই স্কুলের হোস্টেল থেকে ২৭৬ ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। এদের মধ্য থেকে ৫৩ ছাত্রী বিভিন্ন উপায়ে পালিয়ে আসতে পারলেও এখনো ২২৩ ছাত্রীর কোনো খোঁজ নেই।
অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, জঙ্গিগোষ্ঠীটি এসব ছাত্রীকে পার্শ্ববর্তী চাদ ও ক্যামেরুনে নিয়ে এরই মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছে।
২৭ জুলাই ক্যামেরুনের উপ-প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীকে অপহরণ করে নাইজেরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম। একই দিনে স্থানীয় ধর্মীয় নেতা ও মেয়রকেও অপহরণ করে জঙ্গি সংগঠনটি।
আফ্রিকার আতঙ্ক হয়ে উঠেছে বোকো হারাম। আল-কায়েদার মতো পশ্চিমা শিক্ষা-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাদের শক্ত অবস্থান। বোকো হারামের হামলার বিশেষত্ব হলো এরা বিশেষভাবে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বোকো হারামের প্রধান সামরিক শক্তিই আত্মঘাতী যুদ্ধপদ্ধতি। এরা মূলত আল-কায়েদার মতো একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। বোকো হারামের যোদ্ধারা উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
এদের বেশির ভাগ সদস্যই যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে সোমালিয়া যায় বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া বোকো হারামের বহু সদস্য আফগানিস্তান থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলেও মনে করা হয়।
আল-কায়েদার ইসলামিক সদস্য বোকো হারামকে সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যের কিছু গোষ্ঠী আর্থিক সহায়তা দেয়। এ ছাড়া আল মুনতাদা ট্রাস্টও তহবিলের জোগান দেয়।
হাউসা ভাষার শব্দ বোকো অর্থ পশ্চিমা শিক্ষা। আর আরবি শব্দ হারাম অর্থ নিষিদ্ধ। সুতরাং বোকো হারামের অর্থ দাঁড়ায় পশ্চিমা শিক্ষা নিষিদ্ধ। নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বোকো হারামের প্রধান ঘাঁটি।
মোহাম্মদ ইউসুফ ২০০১ সালে বোকো হারাম প্রতিষ্ঠা করেন। নাইজেরিয়ার বোরনো প্রদেশের রাজধানী মাইদুগুরির নিকটবর্তী শহর দাম্বোয়ায় বোকো হারাম প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে বোকো হারাম শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। মানুষের তৈরি আইন ও আধুনিক বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে দলটি।
বোকো হারামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করা। দলটির মুখপাত্র আবু কাকা বলেন, যখন আমরা দেখব সব কিছু আল্লাহর নির্দেশমতো করা হচ্ছে এবং আমাদের সঙ্গীদের কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, একমাত্র তখনই আমরা আমাদের অস্ত্র একপাশে সরিয়ে রাখব। কিন্তু আমরা তা ত্যাগ করব না। কারণ ইসলামী বিধান অনুসারে আপনি অস্ত্র একপাশে সরিয়ে রাখতে পারেন, ত্যাগ করতে পারেন না।