দেশজুড়ে কয়েকদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর অবশেষে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ। দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মধ্যপন্থী রাজনীতিক ফ্রাঁসোয়া বায়রুর নাম ঘোষণা করেছেন তিনি।
ফ্রান্সের পার্লামেন্টে ঐতিহাসিক অনাস্থা ভোটে গত ৪ ডিসেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ার। পরের দিন জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে মাক্রোঁ নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু সেদিন তিনি তা করেননি। এরপর মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দলের নেতাদের বৈঠকে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে তাকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়।
তবে সেই সময়সীমাও অতিক্রান্ত হলে আজ (শুক্রবার) নতুন প্রধানমন্ত্রীর নামের ঘোষণা আসতে পারে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। অবশেষে সেই খবর সত্যি করে ফ্রাঁসোয়া বায়রুকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
মাক্রোঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ৭৩ বছর বয়সী বায়রু মধ্যপন্থী জোটের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। গত কয়েক দশক ধরে ফরাসি রাজনীতিতে তিনি সুপরিচিত নাম। তিনি দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একজন মেয়র এবং মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (মোডেম) দলের শীর্ষ নেতা। ২০০৭ সালে তিনি নিজেই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে রক্ষণশীল সরকারের শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে ফরাসি জনগণের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন এই রাজনীতিক। এরপর ২০০২, ২০০৭ ও ২০১২ সালে তিনবার দেশটির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন তিনি।
পরে ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় মাক্রোঁকে সমর্থকন দেন বায়রু। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে মাক্রোঁ তাকে ফ্রান্সের বিচারমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিলেও পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের তহবিল তছরুপের অভিযোগে মোডেমের বিরুদ্ধে তদন্তের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেন।
চলতি বছর প্যারিসের একটি আদালত ওই মামলায় মোডেমের ৮ কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত ও দলটিকে জরিমানা করলেও বায়রুকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে অব্যাহতি দেয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন মাক্রোঁ। বাইরু হতে যাচ্ছেন তার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী।
চলতি গ্রীষ্মে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। তারপর থেকেই দেশটির রাজনৈকিক অঙ্গনে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বায়রুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বায়রুর কাজ হবে একটি নতুন সরকার গঠন করা। নতুন মন্ত্রী নির্বাচনে আগামী দিনগুলোতে তিনি বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে এই কাজ বায়রুর জন্য মোটেও সহজ হবে না। কারণ, ফ্রান্সে সর্বশেষ সংসদীয় নির্বাচনে কোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় একটি ঝুলন্ত সংসদ গঠিত হয়। সেখানে মাক্রোঁর মধ্যপন্থী জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। ফলে সরকার গঠনে বাম ও ডান উভয় পক্ষের মধ্যপন্থী নেতাদের ওপর তার নির্ভর করতে হবে। এমনকি, রক্ষণশীল নেতাদের কেউ কেউ নতুন সরকারের অংশ হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র : ইউএনবি