হঠাৎ করেই ধনকুবের হিসেবে মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া ডটকম। তাকে বাংলাদেশের ধনীদের একজন উল্লেখ করা হয় ওই সংবাদে। শুধু তাই নয়, মুসা বিন শমসেরকে ধনী হিসেবে উল্লেখ করে তার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পদের তুলনা করা হয়েছে।
ইন্ডিয়া ডটকমের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনার চেয়ে ৪০ হাজার গুণ বেশি সম্পদের মালিক মুসা বিন শমসের। তার মোট সম্পদের পরিমাণ বলা হয়েছে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় আজকের হিসাবে যা দাঁড়ায় এক লাখ ৪৩ হাজার ২৪১ কোটি টাকার কিছু বেশি। সেখানে হাসিনার সম্পদের কথা বলা হয়েছে প্রায় তিন কোটি ৪৮ লাখ ৯৯ হাজার ৪৮৮ টাকা।
যদিও ইন্ডিয়া ডটকম বলছে, প্রতিবেদন অনুযায়ী হাসিনার সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি ৪৮ লাখ ভারতীয় রুপি। তবে কোন প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য সংবাদমাধ্যমটি পেয়েছে তা তারা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেনি।
ইন্ডিয়া ডটকমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। দেশের সাধারণ মানুষের তুলনায় ধনীদের সম্পদের পরিমাণ এখনো অনেক বেশি।
এছাড়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকবিলা করছে এবং ক্রমশ ধনকুবেরদের আবাস্থল হয়ে উঠছে। তাদের মধ্যেই একজন হলেন মুসা বিন শমসের। তিনি ছাড়া পরিচিত অন্য ধনকুবেরদের মধ্যে আছেন সালমান এফ রহমান, সজীব ওয়াজেদ জয়। চলমান অস্থিরতা সত্ত্বেও তারা দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনটিতে মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের ‘আম্বানি’ মুসা বিন শমসরকে প্রিন্স মুসা ডাকা হতো। তিনি বাংলাদেশে কেবল ধনকুবের ব্যক্তি হিসেবেই নয়, খুবই বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত। তিনি আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসা এবং পাওয়ার ব্রোকারেজের সঙ্গে জড়িত কোম্পানি ডেটকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।
প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে মুসা বিন শমসেরের সম্পদের সঙ্গে ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মুকেশ আম্বানি এবং গৌতম আদানির সম্পদেরও তুলনা করা হয়। বলা হয়, নভেম্বরে ফোর্বসের রিয়েল টাইম বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় মুকেশ আম্বানির সম্পদের পরিমাণ ১০১.১ বিলিয়ন ডলার। আর ফোর্বসের তালিকায় থাকায় গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ বলা হয় ৬৩.৭ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে মুসা বিন শমসেরের সম্পদ কমই উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
দারিদ্র্য এবং বেকারত্বের মতো আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। মুসা বিন শমসের এবং সালমান এফ রহমানের মতো লোকেরা বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিফলিত করে। তবে মুকেশ আম্বানির মতো আন্তর্জাতিক ধনকুবেরদের তুলনায় এই ধনকুবেরদের সম্পদের পরিমাণ কমই।
উল্লেখ্য, মুসা বিন শমসের নিজের সম্পদ নিয়ে নানান সময়ে নানা দাবি করেছেন। তার সম্পদ নিয়ে ধোঁয়াশা কখনো কাটেনি। ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর দেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বলেছে, মুসা বিন শমসের যে অঢেল সম্পদের মালিক দাবি করেন তা ভুয়া। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বলে, মুসা বিন শমসের একজন অন্তঃসারশূন্য ও রহস্যময় মানুষ। তিনি যে অঢেল সম্পদের মালিক দাবি করেন তা ভুয়া।
সেদিন ডিবি কার্যালয়ে মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্ধ্যায় ডিবি উত্তরের যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেছিলেন।
তিনি বলেন, মুসা বিন শমসের দাবি করেন সুইস ব্যাংকে তার ৮২ মিলিয়ন ডলার আছে। টাঙ্গাইলে ৩ লাখ একর জমি আছে। গাজীপুরে এক হাজার একর জমি আছে। কিন্তু আমাদের কাছে সবই ভুয়া মনে হয়। গুলশানে তার একটি বাড়ি আছে সেটিও তার স্ত্রীর নামে।
এদিকে, ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলা হয়, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে করা এক মামলায় লিখিত বক্তব্যে মুসা বিন শমসের জানান, সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে আছে। তবে এই টাকার উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। এ ব্যাপারে তিনি গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এ বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন বলে তখন মামলায় উল্লেখ করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরে শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে, তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও ভয়ংকর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বলে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে সেখানে শেখ হাসিনা সরাসরি কোনো অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িত কিনা কিংবা তিনি কোনো অর্থ পাচার করেছেন কিনা তা উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া এখন পর্যন্ত তার কি পরিমাণ সম্পদ আছে তা জানা যায়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন