Image description
মাদকের বিনিময়ে যুক্তরাজ্যের বিপুল অর্থ পাচারের রুশ নেটওয়ার্ক ফাঁস
যুক্তরাজ্যের মাদক গ্যাংগুলোর সঙ্গে রুশ অপরাধীদের দ্বারা পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার নেটওয়ার্কের যোগসূত্র ফাঁস করেছে ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় ব্রিটিশ মাদক গ্যাংগুলোর সঞ্চিত বিপুল অর্থ পাচার করতে এই নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল। বিবিসি জানিয়েছে, রুশ নেতৃত্বাধীন ওই নেটওয়ার্কটি অন্তত ৩০টি দেশে বিস্তৃত। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ৮৪ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭১ জনই গ্রেপ্তার হয়েছে যুক্তরাজ্যে। নেটওয়ার্কটির মূল কাজ ছিল অপরাধীদের অবৈধ টাকা গ্রহণ করে তা ক্রিপটো মুদ্রায় রূপান্তর করা। এই প্রক্রিয়ায় মাদক ব্যবসার লেনদেন ও লাভকে শনাক্ত করা কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এনসিএর পরিচালন বিভাগের পরিচালক রব জোনস বলেছেন, ‘আমরা রুশ অপরাধীদের সেই গোপন জাল উন্মোচন করেছি, যা এত দিন অদৃশ্য ছিল। এই নেটওয়ার্ক এখন পরিচালনা করা অনেক কঠিন হয়ে গেছে।’ মস্কো-ভিত্তিক এই নেটওয়ার্ক ‘স্মার্ট’ ও ‘টিজিআর’ নামে দুটি ক্রিপ্টোকারেন্সি পরিষেবার মাধ্যমে কাজ করত। তারা মাদক চক্রের কাছ থেকে নগদ অর্থ সংগ্রহ করে তা ক্রিপটো মুদ্রায় রূপান্তর করত। পরে সেই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে মাদক চক্রগুলো দক্ষিণ আমেরিকার মাদক সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কোকেন কিনত। বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগও গতকাল বুধবার ওই নেটওয়ার্কের চিহ্নিত কয়েক মূল হোতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ব্রিটিশ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ‘স্মার্ট’ নামের ক্রিপটো নেটওয়ার্কটি মস্কো থেকে পরিচালনা করেন একাতেরিনা ঝডানোভা নামে এক রুশ নারী। মাদকের বিনিময়ে যুক্তরাজ্য থেকে অর্থ পাচার করে নেওয়ার এই প্রক্রিয়াটির কেন্দ্রে অবস্থান করছেন এই ঝডানোভা। রাশিয়ান অভিজাতদের জন্য অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরেই তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মার্কিন কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ২০২১ সালে লকডাউনের সময় যুক্তরাজ্যের মাদক গ্যাংগুলোর বিপুল অর্থ বৈধ পন্থায় প্রবাহিত করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ওই সময়টিতে ফাওয়াদ সাইদির মতো পরিবাহকেরা মাদক চক্রের অর্থ পরিবহনে জড়িত ছিল। সাইদির গাড়িতে আড়াই লাখ পাউন্ড পাওয়া গেলে এই তদন্তের যাত্রা শুরু হয়। পরে জানা যায়, তিনি স্মার্ট নেটওয়ার্কের প্রধান একাতেরিনা ঝডানোভার হয়ে কাজ করছিলেন। ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির তথ্য মতে, সাইদি ও তাঁর মতো অন্যান্য পরিবাহকেরা যুক্তরাজ্যের ৫৫টি স্থান থেকে ২২টি মাদক চক্রের অর্থ সংগ্রহ করতেন। রুশ অপরাধীদের সঙ্গে সংযুক্ত ‘দ্য কিনাহান মাদক কার্টেল’ এবং মধ্যপ্রাচ্যেও তাঁদের কার্যক্রমের খোঁজ পাওয়া গেছে। বিবিসি জানিয়েছে, বিষয়টি নজরে আসার পর এখন পর্যন্ত ২০ মিলিয়ন পাউন্ড নগদ অর্থ এবং আনুমানিক ৭০০ মিলিয়ন পাউন্ড মাদক বিক্রির আয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। মানি লন্ডারিংয়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে চার বছরের বেশি কারাদণ্ড পেয়েছেন সাইদি। অন্যদিকে ১০ সপ্তাহে ১২ মিলিয়ন পাউন্ড পাচার করে ৬ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন সেমেন কুকসভ নামে আরেক অপরাধী। ব্রিটিশ তদন্তে দাবি করা হয়েছে, নিষিদ্ধ কার্যক্রমে অর্থপাচার ছাড়াও গুপ্তচরবৃত্তির কাজে এই নেটওয়ার্কটি ব্যবহার করছে রাশিয়া। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে ‘রাশিয়া টুডে’ প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ হলেও এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই রুশ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এই নেটওয়ার্কের উন্মোচন শুধু মানি লন্ডারিং নয়, বরং আন্তর্জাতিক অপরাধ নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে একটি বড় পদক্ষেপ। এটি ভবিষ্যতে মাদক পাচার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।