Image description
উ. কোরীয় সেনারা কি পারবে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিতে?
ইউক্রেনে রাশিয়ার সমর্থনে কয়েক হাজার উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের খবর আসার পর অনেকেই অনুমান করছেন এই যুদ্ধে কীভাবে তারা ভূমিকা রাখবে। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, যুদ্ধে অভিজ্ঞতাহীন এই সেনারা কতটা কার্যকর হবে এবং কত জন সেনা যুদ্ধের পটভূমিতে প্রভাব রাখতে পারবে। মার্কিন সামিয়কী নিউজউইক এ খবর জানিয়েছে। ইউক্রেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার সেনা রাশিয়ায় পাঠাচ্ছে। যা মূলত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে জানিয়েছেন, রুশ সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরে ৩ হাজার উত্তর কোরিয়ার সেনা রয়েছে, যা যুদ্ধ ক্ষেত্রের খুব কাছাকাছি। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রথম ব্যাচের ১ হাজার ৫০০ জনকে ইতোমধ্যে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে, যাদের রুশ সেনাবাহিনীর পোশাক, অস্ত্র এবং সাইবেরিয়ায় বসবাসের ভুয়া কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ৮ হাজার উত্তর কোরীয় সেনাকে ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করেছে রাশিয়া। ওয়াশিংটনের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এশিয়া পলিসি স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো অ্যান্ড্রু ইও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনারা রাশিয়ার শক্তি বাড়াবে, কারণ তাদের উপস্থিতিতে যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়ার সেনা সংখ্যা দ্রুত বাড়বে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের ফলে কিয়েভ ও মস্কো উভয়ই এখন তাদের বাহিনী পুনরুদ্ধারে বিকল্প পথ খুঁজছে। কারণ তরুণদের জন্য বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিষয়টি জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। কিয়েভের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান ওলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কো বলেছেন, ইউক্রেন নতুন করে ১ লাখ ৬০ হাজার সেনা নিয়োগ দেবে। কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রামন পেচেকো পার্ডো মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার সেনারা রাশিয়াকে কৌশলগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে সক্ষম হবে। যদিও উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা সীমিত, তবু এই যুদ্ধের বাস্তবিক পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণ তাদের জন্য এক ধরনের নতুন অভিজ্ঞতা হবে। কিন্তু এতে কিছু সংকটও রয়েছে। এই যুদ্ধের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার সেনারা যুদ্ধে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের অ্যান্ড্রু ইও আরও বলেন, ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামরিক অনুশীলনে পার্থক্যের কারণে রুশ বাহিনীর সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের পুরোপুরি একীভূত হতে সময় লাগতে পারে। একাধিক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের প্রশিক্ষণের ছবি এবং ভিডিও রুশ সীমান্তবর্তী প্রাইমোর্স্কি অঞ্চলে পাওয়া গেছে। তাদের শরীরের গঠন এবং ছোটখাট শারীরিক গড়নের কারণে কিছুটা খারাপ স্বাস্থ্য অবস্থারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। উত্তর কোরিয়ার সেনারা তাদের নেতৃত্বের প্রতি অটুট আনুগত্য এবং মানসিক সহিষ্ণুতার জন্য প্রশংসিত। তবে, এটি ইউক্রেনের মতো আধুনিক এবং কঠিন প্রতিরোধের মুখে তাদের যুদ্ধের মনোবল কতটা ধরে রাখতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সেন্টার ফর এশিয়া প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির সিনিয়র ফেলো এবং উত্তর কোরিয়ার সাবেক নাগরিক জি হিউন পার্ক বলেন, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের মানসিক প্রস্তুতি হলেও তাদের শারীরিক সহিষ্ণুতা বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য যথেষ্ট নয়। ইউক্রেনীয় সরকারের একটি হটলাইন থেকে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের উদ্দেশে একটি বার্তা প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিনা কারণে বিদেশের মাটিতে প্রাণ দেবেন না। ইতোমধ্যে ১৮ জন উত্তর কোরীয় সেনা পালিয়ে যাওয়ার খবরও এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি কোনও সেনা পালিয়ে যায় বা ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে বন্দি হয়, তবে তারা হয়তো রাশিয়া বা উত্তর কোরিয়ায় ফিরে যেতে চায় না।