‘পারমাণবিক অস্ত্র শান্তি আনে না’
পারমাণবিক অস্ত্র কখনোই শান্তি আনে না বলে মন্তব্য করেছেন ২০২৪ সালে নোবেল পুরস্কারজয়ী হিরোশিমা ও নাগাসাকির পরমাণু বোমা হামলায় বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সংগঠন নিহন হিদানকিও-এর সহ-সভাপতি তোশিইয়ুকি মিমাকি। শুক্রবার নরওয়ের নোবেল কমিটি এই সংগঠনটিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ওসলোতে নোবেল কমিটি জানিয়েছে, বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার প্রচেষ্টায় এবং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার কখনোই মেনে নেওয়া উচিত নয় তা প্রমাণ করার জন্য এই সংগঠনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
পুরস্কার ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তোশিইয়ুকি মিমাকি আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি যে এমন কিছু ঘটতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলেন পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কারণে বিশ্বে শান্তি বিরাজ করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতেও চলে যেতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, যদি রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বা ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে তা সেখানেই থামবে না। রাজনীতিবিদদের এই বাস্তবতা বুঝতে হবে।
মিমাকি উল্লেখ করেন যে, ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের সদস্যদের গড় বয়স বর্তমানে ৮৫ বছর। তিনি বলেন, আমি আশা করি, পরমাণু বোমা হামলায় বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা এবং সাধারণ মানুষও পরমাণু অস্ত্রমুক্ত শান্তির জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।
মিমাকি গাজার শিশুদের পরিস্থিতির সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জাপানের পরিস্থিতির তুলনা করেন। তিনি বলেন, গাজায় রক্তাক্ত শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের কোলে। এটি ৮০ বছর আগের জাপানের মতোই। হিরোশিমা ও নাগাসাকির শিশুরা তাদের বাবাদের হারিয়েছিল যুদ্ধে, আর মায়েদের হারিয়েছিল পরমাণু বোমার আঘাতে। তারা এতিম হয়ে গিয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপর পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট প্রথম পারমাণবিক বোমা হিরোশিমার ওপর নিক্ষিপ্ত হয়। যা ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। তিন দিন পর ৯ আগস্ট নাগাসাকির ওপর আরেকটি পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে আরও ৭৪ হাজার মানুষ নিহত হয়। অনেকেই তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণ হারায়, বাকিরা তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে পরবর্তী সময়ে মৃত্যুবরণ করে। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা নোবেল পুরস্কার প্রদানকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহন হিদানকিও দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপের জন্য যে কাজ করেছে, সংগঠনটির জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।