ইরান জানিয়েছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে তারা 'আত্মরক্ষার' কৌশল গ্রহণ করেছে। এখন 'ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ যদি আরো প্রতিশোধের আমন্ত্রণ না জানায়' তবে তাদের পদক্ষেপ এখানেই সমাপ্ত হবে। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরকচি বুধবার সকালে এক এক্স পোস্টে এ দাবি করেন।
মঙ্গলবারের পরপরই ইরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিল, ইসরাইল যদি এই হামলার জবাব দেয়, তারা ইসরাইলে পাল্টা হামলা চালাবে এবং সম্ভাব্য আমেরিকান লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আক্রমণ করবে।
এছাড়া ইরাকে ইরানি মিত্র গ্রুপগুলো জানিয়েছে, সেখানে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলো টার্গেট হতে পারে।
জাতিসঙ্ঘে নিয়োজিত ইরানি মিশন এক্স পোস্টে লিখেছে, 'জায়নবাদী জান্তা যদি প্রতিক্রিয়া দেখায় বা আরো কিছু করে, তবে এর পাল্টা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আসবে।'
মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে- ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি ৪০০-এর বেশি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এই হামলা চালিয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে- বৃষ্টির মতো ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানছে ক্ষেপণাস্ত্র।
পুরো ইসরাইল ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় এসেছে এবং রাজধানী তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
আইআরজিসি বলেছে, আত্মরক্ষার তাগিদে তারা এই হামলা চালিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরপরই আইআরজিসি এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেছে ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু’।
আইআরজিসি পরিষ্কার করে বলেছে, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং আইআরজিসি’র ডেপুটি কমান্ডার আব্বাস নীলফোরুশানের শাহাদাতের বদলা নিতে এই হামলা চালানো হয়েছে। আইআরজিসি বলেছে, 'আমরা অধিকৃত ভূখণ্ডের হৃদপিণ্ডে আঘাত করেছি।'
আইআরজিসি ঘোষণা করেছে যে, ইসরাইল যদি কোনো রকমের প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করে তাহলে আরো মারাত্মক হামলা চালানো হবে
হামলার পরপরই নেতানিয়াহু তেহরানকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন যে সে 'একটি বড় ভুল' করেছে এবং তাকে 'এর মূল্য চোকাতে হবে।'
তিনি বলেন, ইরানের শাসকরা নিজেদের আত্মরক্ষা করার এবং আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণেরর ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়প্রত্যয় বোঝেনি। হামাস নেতা সিনওয়ার আর কমান্ডার মোহাম্মদ দেউফও বোঝেনি। হিজবুল্লাহ নেতা নাসরুল্লাহ আর কমান্ডার শুকরও বোঝেনি। আর সম্ভবত তেহরানের ওই লোকগুলোও বোঝেনি।
তিনি বলেন, তারা এবার বুঝবে। আমাদের ওপর যেই আক্রমণ করবে, আমরা তাদের ওপর হামলা করব।
ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরান প্রায় ১৮১টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা এগুলোর একটি বড় অংশকে আটকে দিয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ থেকে পশ্চিম তীরে এক ফিলিস্তিনি নিহত এবং দুই ইসরাইলি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
হামলার শব্দ জেরুসালেম থেকে জর্ডান উপত্যকা পর্যন্ত ইসরাইলের বেশিভাগ অংশজুড়ে শোনা গেছে। লাইভ সম্প্রচারের সময় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সাংবাদিকরা শুয়ে পড়েন।
একটি রকেট মধ্য ইসরাইলের একটি স্কুলে আঘাত হানে। ছবিতে দেখা যায়, এতে স্কুলটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ইরান জানিয়েছে, তারা হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইরানি সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালিয়েছে। তারা হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং ইরানি রেভ্যুলশনারি গার্ডের জেনারেল আব্বাস নিলফোরুশানের কথা উল্লেখ করেন। উভয়ে গত সপ্তাহে বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন। এতে জুলাই মাসে তেহরানে হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যার কথাও উল্লেখ করে।
ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড জানিয়েছে, তারা ইসরাইলের তিনটি সামিরক ঘাঁটিকে টার্গেট করেছে।
ইরানের এক সিনিয়র কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহ আলী খামেনির নির্দেশে এই হামলা চালানো হয়। আর খামেনি এখন নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন।
গত এপ্রিলে প্রথমবারের মতো ইরান থেকে ইসরাইলে হামলা চালানো হয়েছিল। তাতে ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী ও তাদের মিত্রদের সহায়তায় বেশিভাগকে থামিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওইবারও ইসরাইল প্রতিশোধ নিয়েছিল। তবে তা প্রতীকী ছিল। ফলে বৃহত্তর উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানি হামলা মোকাবেলায় ইসরাইলের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করার জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুম থেকে হামলা পর্যবেক্ষণ করেন।
সূত্র : আল জাজিরা