জীবন দিয়েছেন সাংবাদিকরাও
দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার এক অভাবনীয় গণবিপ্লব দেখল বাংলাদেশ। দেড় দশক ধরে নিপীড়িত মানুষের ক্ষোভের বারুদ বিস্ফোরিত হয়েছে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে। বিপ্লবীদের ভাষায় ছত্রিশ জুলাইয়ে। গণবিস্ফোরণের মুখে করুণ পতনই শুধু নয়, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে দুর্বিনীত ও ক্ষমতার দম্ভে আচ্ছন্ন এক শাসককে।
আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ প্রায় দুহাজার ছাত্র-জনতা শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। রক্তে ভেসেছে পিচঢালা রাজপথ। অঙ্গ হারিয়ে, দগদগে ঘা নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রায় ২০ হাজার বিপ্লবী। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে বাকি জীবনের জন্য অন্ধকার পৃথিবীতে চলে গেছেন চার শতাধিক জানবাজ। পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব ও নিকটজনদের হারিয়ে পরিবারে পরিবারে এখনো চলছে শোকের মাতম।
শহীদদের কাতারে যেমন শিশু, কিশোর, আবালবৃদ্ধবনিতা আছেন, তেমনি রয়েছেন নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ। রয়েছেন বেশ কজন সংবাদকর্মী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের জীবন দিতে হয়েছে। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছয় সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন পুলিশের গুলিতে; অপর দুজন হামলা ও সহিংসতায়। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫০ সাংবাদিক। তাদের অনেকে পঙ্গুত্বের মুখে পড়ে কাতরাচ্ছেন বিছানায়।
জীবনবাজি রেখে ফ্যাসিবাদের পতন আন্দোলনের যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের সংবাদ পাঠক-দর্শককে জানাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন এই সংবাদকর্মীরাও। দেশের ও বহির্বিশ্বের পাঠক-দর্শকের কাছে শিক্ষার্থী ও স্বাধীনতাকামী মানুষের আত্মত্যাগ, সাহসিকতা ও বীরত্বের গল্পগুলো তুলে ধরেছেন তারা। সাংবাদিক নামধারী গুটিকতক ফ্যাসিবাদের দোসর ছাড়া অধিকাংশ গণমাধ্যমকর্মী আন্দোলনের পুরো সময়টা শিক্ষার্থী ও জনমানুষের পাশেই ছিলেন। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যে নিষ্ঠুর সহিংসতা হয়েছে, তা প্রকাশ ও প্রচার করতে নিজেদের সক্ষমতা ও মেধার পূর্ণ ব্যবহার করেছেন।
শহীদ সাংবাদিকদের ছোট ছোট সন্তান পিতাকে হারিয়েছে, স্ত্রী বিধবা হয়েছেন। স্বজনেরা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়ে আজ পাগলপারা। পরিবারগুলো তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। অনেক শহীদ সাংবাদিক পরিবারে এখনো চলছে শোকের মাতম। গুরুতর আহত সাংবাদিকদের পরিবার অসহায়-অনিশ্চিত জীবনের মুখোমুখি।
পুলিশের বুলেটে ১৮ জুলাই প্রথম শহীদ হন সাংবাদিক হাসান মেহেদী। তিনি নিউজপোর্টাল ঢাকা টাইমসে কর্মরত ছিলেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে খবর সংগ্রহের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। একই দিনে সিলেটে দৈনিক নয়াদিগন্তের প্রতিনিধি আবু তাহের মুহাম্মদ তুরাব পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। ওই দিনই ভোরের আওয়াজ নামের একটি দৈনিক সংবাদপত্রের প্রতিবেদক শাকিল হোসাইন শহীদ হন উত্তরায়।
১৯ জুলাই তাহির জামান প্রিয়ো নামের আরেক ভিডিও সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে। আর গণঅভ্যুত্থানের আগের দিন ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জে দৈনিক খবরপত্র-এর সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিক প্রাণ হারান। মো. সোহেল আখঞ্জি নামের আরেক সাংবাদিক জীবন দিয়েছেন হবিগঞ্জে। তিনি স্থানীয় দৈনিক লোকালয় পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে পাঁচজন পুলিশের গুলিতে এবং অন্যজন হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
অবুঝ নিশা ও মেহেরের সামনে ঘোর অমানিশা
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ঢাকায় না আসতে ছোট ভাই জাহিদ হাসান আশিককে সতর্ক করেছিলেন সাংবাদিক হাসান মেহেদী। জাহিদের এখন আক্ষেপ—‘আমাকে সতর্ক করে ভাই নিজেই পরপারে চলে গেলেন।’ গত ১৮ জুলাই সংবাদ সংগ্রহের কাজে গিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন ঢাকা টাইমস-এর সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই হাসান মেহেদী যাত্রাবাড়ী এলাকায় পেশাগত দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ নেন। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি গল্পও করেন সেদিন। দৈনিক বাংলাদেশের আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ইমান হোসেন ইমন ছিলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টার পর যখন পুলিশের একটি এপিসি আসে এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংর্ঘষ শুরু হয়, তখন পুলিশের সঙ্গে দৌড়ে দৌড়ে ভিডিও করছিলেন হাসান মেহেদী। একপর্যায়ে এপিসি থেকে ছোঁড়া শটগানের গুলিতে বিদ্ধ হন মেহেদী।
ইমন বলেন, ‘পুলিশের গুলিতেই হাসান মেহেদী নিহত হয়েছেন। আমি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পাই। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রায় ১০ মিনিট রাস্তায় পড়েছিলেন হাসান। এরপর আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
হাসান মেহেদী ঢাকা টাইমসের হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন। এর আগে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোর, দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক বাংলাদেশের আলোয় কাজ করেছেন।
হাসান মেহেদী রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে অনার্স করেছেন। তার দুই শিশুসন্তান রয়েছে। বড় মেয়েটির বয়স সাড়ে তিন বছর। ছোট কন্যাশিশুর বয়স মাত্র সাত মাস। ছোট ভাই জাহিদ বলেন, ‘নিশা ও মেহের ছিল আমার ভাইয়ের কলিজার ধন। তাদের নিয়েই ছিল তার স্বপ্নের স্বর্গ। অবুঝ সন্তানগুলো জানেও না তাদের বাবা আর নেই।
পটুয়াখালীর বাউফলের হোসনাবাদ গ্রামে দাফন করা হয় হাসান মেহেদীকে। স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকলেও সাংবাদিক হাসান মেহেদী মা-বাবার ভরণপোষণ ও ছোট দুই ভাইয়ের পড়ালেখার দায়িত্বও সামলে আসছিলেন। তার আয়ের টাকায় পরিবারটির যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ হতো। পরিবারের কর্তাটির নির্মম মৃত্যু দুই সন্তানসহ এই মায়ের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে দিয়েছে।
বড় ছেলেটির এমন মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ মেহেদী হাসানের সত্তরোর্ধ্ব অসুস্থ বাবা মো. মোশাররফ হোসেন হাওলাদার। আদরের বড় ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে বাক হারিয়েছেন বৃদ্ধা মা মাহমুদা বেগমও। বাবা মোশাররফ হোসেনের এক এক করে পাঁচবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। রয়েছে ডায়বেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। মাসে অন্তত আট থেকে ১০ হাজার টাকার ওষুধ নিতে হয় তাকে। এই ওষুধের ব্যয় সামলাতেন হাসান মেহেদী।
হানিমুনের আগেই বিধবা হলেন তানিয়া
লন্ডনি কইন্যা বিয়ে করেছিলেন সিলেটের সাংবাদিক এটিএম তুরাব। মাত্র তিন মাস আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। লন্ডন যাওয়ার সব প্রক্রিয়া এগিয়েও রেখেছিলেন। দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে তার লন্ডন পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয় তাকে। এমন ঘটনায় হতবাক তার পরিবার। শোক কাটাতে পারছেন না। হানিমুনের প্রতীক্ষায় ছিলেন নবদম্পতি। লন্ডনে থাকা সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী তানিয়া ইসলাম বিয়ের তিন মাসের মধ্যে হয়ে গেলেন বিধবা। কাঁদছেন তিনিও। স্বজনদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
তুরাব কাজ করতেন দৈনিক জালালাবাদ ও নয়াদিগন্ত পত্রিকায়। এর আগে বিয়ানীবাজারে সাংবাদিকতায় সক্রিয় ছিলেন। কয়েক বছর আগে এসে সিলেটের সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। নগরের যতরপুরে পরিবারসহ বসবাস করতেন। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, এটিএম তুরাব ২০২৪ সালের ১৩ মে বিয়ে করেছিলেন। কনে লন্ডনি কইন্যা তানিয়া ইসলাম। তাদের বাড়ি জগন্নাথপুরে। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। অনেকের কাছে বড় আদরের ছিলেন তুরাব। এ কারণে বিয়েতে সিলেটের সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ ছিল বেশি। বিয়ের পর কনে তানিয়া ইসলামের সঙ্গে ১৮ দিনের সংসার। এরপর কনে চলে যান লন্ডনে। এটিএম তুরাবকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
ঘটনার দিন ছিল শুক্রবার, ১৯ জুলাই। নগরের কোর্ট পয়েন্টে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ হবে। খবর পেয়ে তুরাব বেলা সাড়ে ১১টায় বাসা থেকে বের হয়ে যান। ছিলেন নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায়। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভ শুরুর পরপরই ফটোসাংবাদিকরা ছবি তুলছিলেন। তুরাবও সাহসিকতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। এমন সময় গুলিবর্ষণ, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও টিয়ারশেল ছোড়া শুরু হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হন তুরাব। এ দৃশ্য দেখে এগিয়ে যান ফটোসাংবাদিকরা। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই তরুণ সাংবাদিক।
তুরাবের শহীদ হওয়ার ঘটনায় সিলেটের সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলার এজাহার দাখিল করেন বড় ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ। লাশের পোস্টমর্টেম হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি মঈন উদ্দিন শিপন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ ঘটনায় আগেই একটি মামলা করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যে এজাহার দেওয়া হয়েছে, সেটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। আগের মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে এ অভিযোগটিরও তদন্ত করা হবে। তুরাব হত্যা মামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা অভিযুক্ত হয়েছেন। গ্রেফতারও হয়েছেন কয়েকজন। এখন প্রতীক্ষা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
শহীদ শাকিলের বাবার প্রশ্ন—‘এখন কে আমাদের দেখবে?’
২৩ বছরের টগবগে তরুণ শাকিল হোসেন। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন সবার ছোট। মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র। টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালাতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করার নেশা পেয়ে বসে। ভোরের আওয়াজ নামে একটি দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন। গাজীপুরের গাছা থানা প্রতিনিধি ছিলেন। এছাড়া ফ্রি ব্লাড ক্যাম্পিংসহ বেশ কিছু সামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও নিজ এলাকায় ছোট-বড় সবার বিপদে দৌড়ে যাওয়া সবার প্রিয়মুখ ও অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন শাকিল। বিগত আট বছর আগে স্ট্রোকের পর প্যারালাইসড হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকা অসুস্থ মাকে শাকিল নিয়মিত নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন। বড় তিন বোনের বিয়ে হওয়ার পর শাকিল সবসময় বাবা-মায়ের বিপদ-আপদে পাশে ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন শাকিল। তার অসুস্থ মা একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে এখন ঠিকমতো খেতেও পারছেন না। সারাক্ষণ শাকিলের জামাকাপড় বুকে জড়িয়ে শুধু আহাজারি করছেন আর বলছেন, ‘আমার শাকিলরে গুলি করে মাইরা ফালাইছে। আমার শাকিল আর ফিরা আইবে নাগো। এখন আমারে কে খাইয়ে দিবেগো?’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপে শাকিল হোসেনকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে সামনের সারিতে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ১৮ জুলাই বিকাল ৪টার পর উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে শাকিল তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ করেছিলেন। পুলিশের টিয়ারশেল ও গুলি ছোঁড়ার দৃশ্য দেখা গেছে সেই লাইভে। তার কিছুক্ষণ পরই মোবাইলে শাকিলের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সংবাদ পান বলে জানান শাকিলের বাবা।
শহিদ শাকিল হোসেনের বাবা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুর জেলার গ্রামের বাড়িতে থাকাবস্থায় আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর মোবাইল ফোনে আমার শাকিলের উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়ার সংবাদ পাই। ফোন করেছিলেন শাকিলের পরিচিত বড় ভাই ফুয়াদ আলম। তাঁর বাসাও টঙ্গীতে শাকিলদের এলাকাতেই।
শাকিলের বাবা বেলায়েত হোসেন জানান, টঙ্গীতে ও মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ে শাকিলের পৃথক তিনটা জানাজা শেষে পরদিন সকাল ৯টায় শাকিলের লাশ গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদরের কাকিলাতলীতে পৌঁছায়। সেখানে সর্বশেষ জানাজা দিয়ে শাকিলের দাদা-দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
শহিদ শাকিলের বাবা মো. বেলায়েত হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের বড় তিন মেয়ের পর শাকিল ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় পুরস্কার। মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীর সংসার করছে। শাকিল সবসময় আমার ও তার মায়ের কাছে ছিল। আমাদের দেখাশোনা করত। এখন কে আমাদের দেখবে? কে আমাদের পাশে থাকবে?
তাহির জামান প্রিয়
দিনটি ১৯ জুলাই, ২০২৪। সারাদেশ তখন উত্তাল। ঢাকার অন্যান্য জায়গার মতো কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে ধানমণ্ডির সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়। বিকাল ৫টায় সেখানেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সহকর্মী ও বন্ধুরা তার লাশ শনাক্ত করেন। প্রিয় ঢাকায় থাকলেও তার পরিবারের বাস রংপুর শহরে। মা শামসী আরা জামান আর চার বছরের মেয়ে পদ্মপ্রিয় পারমিতাকে নিয়ে ছিল তার সংসার।
সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করে গণঅভ্যুত্থানের গানের অনুষ্ঠান ‘আওয়াজ উড়া’। সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা জামান। সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা বলেন, ‘ও জীবনটা গুছিয়ে এনেছিল। মেয়েকে স্কুলে দিয়েছিল। ঢাকায় নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। একটা স্বপ্ন ছিল। এখন ওর ছোট্ট সন্তানটাকে বড় করাই আমার স্বপ্ন। ওর মতো ছেলেদের জন্য আমি সুস্থ-সুন্দর একটা সমাজ চাই।’
তাহির জামান প্রিয়র কথা বলতে গিয়ে প্রায় বাকরুদ্ধ মা বলেন, তার ছেলে প্রচুর বই পড়তেন। দেশ-জগতের খবর রাখতেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্র নির্মাণের। তাহির জামান প্রিয়কে দাফনের তিন দিন পর রাত ৩টায় তাদের রংপুরের বাসার দরজা ভেঙে একদল পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে বলেও জানান শামসী আরা জামান। কিছুদিন পর খবর আসে, পুলিশ তাকেও তুলে নিয়ে যেতে পারে। ছোট নাতনি আর ৯ বছরের মেয়েকে নিয়ে তখন ভয়ের ভেতর বসবাস করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রিয়র চার বছরের মেয়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার ছোট্ট নাতিটাকে স্কুলে নিয়ে যাই, সামনে পুলিশের গাড়ি দেখলে ও রিকশায় দাঁড়িয়ে বলে, ‘তোমরা আমার বাবাকে মেরেছ! তোমরা ভালো না, পচা!’ আমি ওর কথাটা শুনে অবাক হই। রিকশা এগিয়ে নিয়ে গেলে, সেনাসদস্যরা বলেন, আমরা তোমার বাবাকে মারিনি।”
শামসী আরা জামান জানান, একদিন তিনি মেয়েটাকে নিয়ে কোথাও গেছেন। সেখানে দুই পুলিশ অফিসার হোটেলে ঢোকেন। এটা দেখে তাহিরের মেয়েও পুলিশের পিছে পিছে যেতে চায়। কেন যাচ্ছ—জানতে চাইলে বলে, ‘ওদের জিজ্ঞেস করব কেন আমার বাবাকে মেরেছে। আমার প্রিয় বাবা আমার কাছে আসে না। প্রিয় বাবা আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে।’
প্রিয়র মা জানান, তিনি ঢাকায় আসার আগের দিন তাহির জামান প্রিয়র মেয়ে পদ্মপ্রিয় পারমিতা অনেক কেঁদেছে। কাঁদতে কাঁদতে সে বলছিল, ‘আমি আমার প্রিয় বাবার কাছে যাব। প্রিয় বাবাকে নিয়ে আসব। প্রিয় বাবা আমাকে আর ঘাড়ে নেয় না।’
শামসী আরা জামান বলেন, মেয়েটি সবাইকে বলে, তার প্রিয় বাবা মারা গেছে। কিন্তু মাঝে মাঝে সে নিজেই বুঝতে চায় না, বাবা আর নেই। এ সময় ছেলে ও নাতির কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র নিহত হওয়ার ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় মামলা দায়ের করেছেন প্রিয়র মা শামসী আরা জামান। ২০ আগস্ট মধ্যরাতে প্রায় ১২ ঘণ্টা থানায় অপেক্ষার পর এ মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার আসামিরা হলেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ-আল মামুন, রমনা বিভাগের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম, নিউমার্কেট জোনের এডিসি হাফিজ আল-আসাদ, নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রেফাতুল ইসলাম রিফাত, নিউমাকের্ট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ পুলিশ সদস্য এবং বিজিবি বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা।
প্রদীপ কুমার ভৌমিকের মৃত্যু
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আগের দিন (৪ আগস্ট) দুপুরের পর সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে উপজেলা প্রেস ক্লাবে হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে অবস্থানরত সাংবাদিক প্রদীপ কুমারকে পিটিয়ে আহত করেন হামলাকারীরা। হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রদীপ কুমারের মৃত্যু হয়। তিনি দৈনিক খবরপত্রের রায়গঞ্জ প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলাকারীরা ধারালো রামদা দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। গণঅভ্যুত্থানের আগের দিন বেলা সাড়ে ১২টায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা সদরে প্রেস ক্লাবে পত্রিকার জন্য লেখালেখি করার সময় প্রেস ক্লাবে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা ডাক্তার প্রদীপ কুমার ভৌমিককে নিষ্ঠুরভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রদীপ প্রেস ক্লাবের নির্বাচিত সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া খেতমজুর আন্দোলনেরও নেতা ছিলেন।
প্রদীপ কুমার ভৌমিক সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে ১৯৬৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল দিলীপ কুমার ভৌমিক। মা কমলা রাণী ভৌমিক। প্রদীপ কুমার ভৌমিকরা ছয় ভাইবোন ছিলেন, তিন ভাই তিন বোন। ভাইদের মধ্যে প্রদীপ ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি ছিলেন একজন নিম্নবিত্ত কৃষকের সন্তান। আশির দশকে বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতির মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই সময় তিনি ছিলেন স্কুলছাত্র। ছাত্র অবস্থায়ই এসব গরিব মানুষের আন্দোলনের মিছিল-মিটিংয়ে যোগ দিতেন, তাদের লড়াইয়ে উৎসাহ দিতেন। পরে সাংবাদিকতায় জড়ান। চিকিৎসক হিসেবেও পরিচিতি ছিল তার।
সোহেল আখঞ্জির তিন শিশুসন্তান ও স্ত্রী অকূল দরিয়ায়
গণঅভ্যুত্থানের দিন ৫ আগস্ট হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে নিহত হন সাংবাদিক সোহেল আখঞ্জি (২৭)। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ভয়াবহ সংঘর্ষের সময় ভিডিও ধারণকালে হামলার শিকার হন স্থানীয় দৈনিক লোকালয় পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সোহেল আখঞ্জি। সোহেল জেলার বানিয়াচং উপজেলার কমলারাণীর দিঘির পূর্বপাড়ে মোশাহিদ আখঞ্জির ছেলে। আন্দোলনকারীদের মৃত্যুর খবর পেয়ে সোহেল বাড়ি থেকে বের হয়ে থানায় গিয়ে নিজেই লাশ হয়ে ফেরেন। অভিযোগ রয়েছে, হবিগঞ্জের সাবেক ডিসির সামনে সাংবাদিক আখঞ্জিসহ দুজনের প্রাণহানি ঘটে। তিনি নির্বিকার ছিলেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ৫ আগস্ট সকাল ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাগরদিঘির পশ্চিমপাড় ঈদগাহ মাঠ থেকে মিছিল বের করে। গ্যানিংগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ শেষে মিছিলকারী চার-পাঁচ হাজার লোক বড়বাজার শহীদ মিনারে গিয়ে জড়ো হন। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে থানার সামনে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে চারজনসহ মোট সাতজন নিহত হন। সাংবাদিক সোহেল আখঞ্জি যারা নিহত হন তাদের একজন। কেউ কেউ বলছেন, সংঘর্ষের ভিডিও ধারণের সময় তার ওপর হামলা হয়।
এতিম তিনটি শিশুসন্তান রেখে শহীদ হওয়া সোহেলের স্ত্রী মৌসুমি আক্তার মিডিয়ার সামনে স্বামী হারানোর বর্ণনা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মৌসুমী জানান, তার স্বামী নিহত সোহেলের আপন বলতে এই পৃথিবীতে কেউই নেই। তার বাবা, মা ও আপন ভাই-বোন বলতে কেউই নেই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে আখঞ্জির পরিবারের চুলোয় ঠিকমতো আগুনও জ্বলছে না এখন। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনপাত করছেন সোহেলপত্নী মৌসুমী। এতিম বাচ্চাদের দেখার জন্য এবং লেখাপড়া করিয়ে বড় করে মানুষ করার জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চান তিনি। সাংবাদিক সোহেল আখঞ্জির পরিবারের খোঁজ কেউ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ পরিবারের। নিহত সোহেলের অসহায় তিন এতিম শিশু বাচ্চাকে কীভাবে মানুষ করবেন বিধবা স্ত্রী মৌসুমি আক্তার—সে প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
সোহেল আখঞ্জি হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জের আ.লীগের সাবেক দুই এমপি, বানিয়াচং উপজেলার সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান, কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও আ.লীগের কয়েক নেতাকে। মামলার কোনো আসামিকে গ্রেফতার করার খবর পাওয়া যায়নি।
আহত তিন শতাধিক সংবাদকর্মী
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সংবাদ সংগ্রকালে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী আহত সাংবাদিকের সংখ্যা তিনশর অধিক। তথ্য মন্ত্রণালয় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত ও আহত সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করে। জেলা পর্যায়ে মন্ত্রণালয়ের অধীন গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সারাদেশে হতাহত সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। এছাড়া বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টও সহায়তা দিতে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে হতাহতদের তথ্য আহ্বান করে। এতে দেখা যাচ্ছে, গণযোগাযোগ অধিদফতরের হিসাবে মোট ২২১ সাংবাদিক হতাহত হয়েছেন। তথ্য মন্ত্রণালয় আরও ৯৮ আহত সাংবাদিকের তথ্য পায়। এছাড়া সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কাছেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাংবাদিকের আহত হওয়ার খবর আসে।
আহত সাংবাদিকদের মধ্যে অন্তত ১০০ সাংবাদিকের আঘাত গুরুতর। অনেকে প্রায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে চলেছেন। এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন অনেকে।
পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারাত্মক জখম সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম ইমন পঙ্গুত্ব বরণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। উন্নত চিকিৎসা না হলে তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হতে পারে। পুলিশের গুলি তার শরীর ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। অসংখ্য ছড়রা গুলি এখনো তার শরীরে। দীর্ঘ ৫৩ দিন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন বাসায় রয়েছেন, স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন বলে জানান ইমন। এখন তিনি স্বাভাবিক কাজ করতে পারবেন না। তার পূর্ণ সুস্থতা ও পুনর্বাসনে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
২০ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মালিবাগ রেলগেট এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি অ্যাকশনের দৃশ্য ধারণ করতে গেলে গায়ে ‘প্রেস’ লেখা সিকিউরিটি জ্যাকেট ও বুকে সাংবাদিকের পরিচয়ের আইডি কার্ড ঝোলানো থাকার পরও সরাসরি ইমনকে গুলি করে পুলিশ। একটি গুলি তার শরীরের তলপেটে ভেদ করে, আরেকটি গুলি তার দুপায়ের সংযোগস্থলের পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। তাছাড়া শরীরে বিদ্ধ হয় অসংখ্য ছড়রা গুলি।
এদিকে দেহজুড়ে বিদ্ধ ১৬টি ছড়রা বুলেটের আঘাত সেরে উঠলেও ডান হাতে এখনো তীব্র যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন ঢাকা টাইমস-এর সাংবাদিক জাভেদ হোসেন। দুবার অস্ত্রোপচারের গভীর ক্ষত শুকিয়ে গেলেও হাতটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে তার। গুলিবিদ্ধ হওয়া সেই হাতের তীব্র ব্যথা তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সেই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে গাইবান্ধা শহরের এসকেএস হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি সেন্টারে তিন সপ্তাহ ধরে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। চিকিৎসকরা বলছেন, গুলিবিদ্ধ ডান হাত দিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে পারবেন কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। ৪ আগস্ট পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গাইবান্ধায় গুলিবিদ্ধ হন জাবেদ।
ইমন ও জাবেদের মতো আহত সাংবাদিকদের অনেককেই আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে কষ্ট। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা না পেলে তাদের কষ্টটা বহুগুণে বেড়ে যাবে।
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় এ গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও অঙ্গ হারানো পরিবারগুলোর কষ্ট ও বেদনা আজ পুরো দেশের জনগণের কষ্টে পরিণত হয়েছে। তাদের স্বজনেরা পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিকে দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন। শত শত শহীদের রক্ত এই জমিনকে উর্বর করেছে। নতুন এই বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবের প্রত্যেক শহীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রাখে। আগামীর বাংলাদেশ যেন এই শহীদদের স্বপ্নের আলোকে গড়ে তোলা হয়, সে প্রচেষ্টা থাকা চাই।