রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। তবে সেখানে দেখা মেলেনি ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের। আসেনি আরেক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও। আজ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই রায়েরবাজার বধ্যভূমি এলাকায় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ।
বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারেও হাজারও মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রায়েরবাজার শহিদ বেদিতে। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বধ্যভূমিতে আসা মানুষের সংখ্যা কম।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বুদ্ধিজীবীদের ভিড় থাকে। তবে এবার তাদের দেখা নেই।
আওয়ামী লীগ ঘরনার একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে রায়েরবাজার এলাকায় আসলে সাধারণ মানুষের রোষানলে তাকে বধ্যভূমি এলাকা ত্যাগ করতে হয়।
রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আজকের এইদিনে শহীদ জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি অত্যন্ত ভাবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। তাদের আত্মত্যাগ একটি জাতি গঠন হয়েছে।
এ দিবসগুলো আমাদের মূল পরিচয়ের স্মারক। আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থান এ বছর আলাদা তাৎপর্য বহন করেছে।
আত্মত্যাগের যে ধারাবাহিকতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার একটি স্রোত। আমরা জাতি হিসাবে এ সূর্য সন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে এ জাতি আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছে, অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে কিভাবে রুখে দাঁড়াতে হয়।
তারা আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে, সেটি পালন করাই আমাদের কাজ।'
সকালে সোয়া ১০টার দিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফ সোহেল বলেন, '৭১ এবং ২৪ নিয়ে একটি মহল জলঘোলা করা চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্টের দোসররা বার বার দেখানোর চেষ্টা করছে যে, আমরা তরুণ প্রজন্ম যারা রক্ত দিয়ে নতুন বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছি। তারা ৭১ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা ২৪’কে মনে করি ৭১ এর ধারাবাহিকতা। আমরা ৭১ এর লড়াইকে একটি চলমানতার সঙ্গে দেখতে চাই। আওয়ামী লীগ সবসময় দেখানোর চেষ্টা করছ ৭১ যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে এবং তারা ক্ষমতায় এসে দেখানোর চেষ্টা করেছে এটাই হলো বাঙালি চূড়ান্ত পরিণতি।
তারা তাদের ক্ষমতার ধরে রাখতে এধরণের কৌশল অবলম্বন করেছে। মুক্তিযুদ্ধকে তাদের দলীয় ব্যানারে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা বারবার বলার চেষ্টা করছি, ৭১ ছিল এ পুরো জনগোষ্ঠীর লড়াই। এ দেশের ছাত্র-জনতা, কৃষি, দিনমজুর সবার লড়াই। এটা শুধু আওয়ামী লীগের লড়াই নয়।'
তিনি বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র উল্লেখিত সাম্য, মানবিকতা, সামাজিক ও সুবিচার। যেটা আওয়ামী লীগ সংবিধানের মূলনীতিতেও রাখেনি। তারা চার মূলনীতি আমদানি করেছিল তাদের মতো করে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাকে কুক্ষিগত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে লড়াই করার কথা, সেটা আওয়ামী লীগ করেনি। তারা নিজেদের স্বার্থে বিদেশি শক্তির মদদে আমাদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করেছে। তাই আমাদের ২৪ এর লড়াই লড়তে হয়েছে। এই রায়েরবাজারে বধ্যভূমির জায়গায় ২৪-এর শহীদদের গণকবর দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন