সম্পর্ক টানাপড়েনের মধ্যেই আগামী সপ্তাহে ঢাকা আসছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি। ৫ই আগেস্টের পর এটা হবে ভারতের দায়িত্বশীল কোন প্রতিনিধির প্রথম বাংলাদেশ সফর। সফরকালে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং পরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক আলোচনা অর্থাৎ ফরেন অফিস কনসালটেশন- এফওসি অনুষ্ঠিত হবে। সেই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের মূল্যায়ন মতে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে যে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেই প্রেক্ষাপটে সচিবের সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে উভয় দেশের কেউই এখনও সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। কিন্তু না, ঢাকায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন দিল্লির বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি আসছেন এটা কনফার্ম। তার সফর এবং এফওসি’র বৈঠকটি আগামী ১০ই ডিসেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও সম্ভবত এটি একদিন আগে হবে। স্মরণ করা যায়, গত ২৩শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অবসরে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তখন অবশ্য তারিখ ঠিক হয়নি। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি এই ক’দিনে সবই বলেছি। সামনের এফওসিটা হোক। তারপর কথা বলা সমীচীন হবে। সম্পর্কের বিষয়ে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা চাই ভালো সম্পর্ক। তবে সেটা দুই পক্ষ থেকে চাইতে হবে, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ভারতীয় অন্য সংবাদমাধ্যম রাতে সচিবের সফরের রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়, বিক্রম মিশ্রির এই সফরটি এমন সময়ে হতে চলেছে যখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে অভূতপূর্ব উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ই আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়া এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই এটি চলছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সমপ্রদায়কে নির্যাতনসহ বেশকিছু অভিযোগ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত অতিরঞ্জিত এবং অসত্য খবর ধরে দেশটির সরকার যে রিয়েক্ট করেছে তাকে সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া অতি সম্প্রতি উভয়ের জাতীয় পতাকার অবমাননা উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে নিয়েছেন। যার রেশ ধরেই ২রা ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের হামলা হয়, যাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ হিসেবে বর্ণনা করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। বর্বরোচিত ওই হামলার পর থেকে বাংলাদেশ জুড়ে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন