Image description
শুল্ক-কর কমলেও আমদানি বাড়েনি, দামও কমেনি
দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার পাম ও সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক–কর কমিয়েছে। এতে প্রতি কেজি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক–কর ১০–১১ টাকা কমেছে। কিন্তু সরকার শুল্ক–কর কমালেও আমদানি বাড়েনি; বরং বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম এখন বাড়তি। সরকার শুল্ক–কর কমানোর ফলে বাজার খুব বেশি অস্থিতিশীল হয়নি। আবার আমদানি সাময়িকভাবে কমলেও সামনে বাড়তে পারে। অন্যদিকে ভোক্তাদের অভিযোগ, দামে কোনো সুখবরই নেই। বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেলের উৎপাদন ব্যয় পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি সংস্থাটি আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত অক্টোবরে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে দুই দফায় শুল্ক–কর কমানো হয়েছে। প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ক–কর কমিয়ে তা নামিয়ে আনা হয়েছে ৫ শতাংশে। তাতে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলে শুল্ক–কর ১৭-১৮ টাকা থেকে কমে ৭ টাকায় নেমে এসেছে, অর্থাৎ প্রতি কেজিতে শুল্ক–কর কমেছে ১০-১১ টাকা। * প্রতি কেজি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক–কর ১০–১১ টাকা কমেছে। * উৎপাদন ব্যয় পর্যালোচনায় ট্যারিফ কমিশন আজ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছে। শুল্ক–কর কমানোর ফলে আমদানি বাড়বে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু উল্টো আমদানি কমে গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। সে হিসাবে আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিনবীজ আমদানিও খুব বেশি বাড়েনি। এটি সোয়া দুই লাখ টন আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে মাত্র ৯ হাজার টন বেশি। সয়াবিনবীজ মাড়াই করে ১৫–১৮ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। আমদানির চিত্র অনুযায়ী, গত অর্থবছরও ১০টি শিল্প গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান দেশে ভোজ্যতেল আমদানি করেছিল। গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর আমদানিকারকের সংখ্যা কমেছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ১ লাখ ৬৯ হাজার টন সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানিগুলো আমদানি করেছে দুই হাজার টন। বাকি ১ লাখ ৬৭ হাজার টন বাজারজাত করেছে সাতটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ এনেছে টি কে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই) ও চট্টগ্রামের স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস। বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের আমদানি নেই। বসুন্ধরা গ্রুপের আমদানি কমেছে। অন্য যারা আছে, তাদেরও আমদানি কম। আমদানি কমার কারণে বাজারে ভোজ্যতেলের জোগান কিছুটা কম। খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে এখন সব কোম্পানির বোতলজাত তেলের সরবরাহ কম, বিশেষ করে এক লিটারের বোতলজাত তেল সরবরাহ করছে না কোম্পানিগুলো। তবে বোতলজাত সয়াবিনের লিটারপ্রতি দাম একই রয়েছে। যদিও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক সপ্তাহে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১ শতাংশ কমেছে। সামান্য বেড়েছে পাম তেলের দাম। শুল্ক কমানোর পর গত এক মাসে সার্বিকভাবে খোলা পাম ও সয়াবিনের দাম ৫–৬ শতাংশ বেড়েছে। জানতে চাইলে ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েই চলেছে। শুল্ক–কর না কমালে আগেই লিটারপ্রতি ১৩–১৪ টাকা দাম বাড়ত। আবার শুল্ক–কর যা কমেছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে বিশ্ববাজারে। বেশি দামে কিনে সামনে বাজারে দাম পাওয়া যাবে কি না, এমন অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় আমদানি কমেছে। শফিউল আতহার আরও বলেন, সরকার এখন ভোজ্যেতেলের দর যৌক্তিকভাবে সমন্বয় করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। তাতে আগামী ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে ভোজ্যতেলের ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার বাড়তে পারে। রোজার আগেই পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল আমদানি হবে বলে তিনি জানান। এদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্যেতেলের দাম কমার আভাস নেই। ৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের পণ্যদরের তালিকা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম গড়ে টনপ্রতি ৫০ থেকে ৯১ ডলার বেড়েছে। তাতে সয়াবিন তেলের দাম ৫০ ডলার বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৫ ডলার। পাম তেলের দাম ৯১ ডলার বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১৬৮ ডলার। দুই মাস আগেও পাম তেলের টনপ্রতি দর ছিল এক হাজার ডলারের নিচে। কাস্টমসের হিসাবে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে টনপ্রতি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৮ থেকে ১ হাজার ৯৮ ডলারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। পাম তেল আমদানি হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ ডলারে। কয়েকটি চালান ১ হাজার ১৬৩ ডলারে এসেছে। আমদানিকারকেরা জানান, বিশ্ববাজার থেকে বাড়তি দরে কেনা তেল আমদানি শুরু হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে ভোজ্যতেলের যেসব চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে, সে ক্ষেত্রে আমদানি মূল্য আরও বেশি পড়বে।