জাবেদ পাটোয়ারী কেন পালালেন, কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন? কেন তিনি বাংলাদেশে ফিরলেন না?
জাবেদ পাটোয়ারী কেন পালালেন, কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন? কেন তিনি বাংলাদেশে ফিরলেন না?
বাংলাদেশের সাবেক আইজিপি এবং সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারীকে নিয়ে গত কয়েক দিন সামাজিক গণমাধ্যম এবং দু একটি পত্রপত্রিকায় অল্প বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ২০১৮ সালে যে নির্বাচনকে নিশিরাতের নির্বাচন বলে বিএনপিসহ সুশীল সমাজ এবং বাংলাদেশের একটি বড় অংশের মানুষ সেই নির্বাচনের সময় যিনি আইজিপি ছিলেন তিনি হচ্ছেন জাবেদ পাটোয়ারী।
অনেকেই বলেন জাবেদ পাটোয়ারী খুব ঠান্ডার মাথার লোক, অনেকেই বলেন জাবেদ পাটোয়ারী মেধাবী, জাবেদ পাটোয়ারী চুপচাপ থাকেন। কিন্তু তিনি যথেষ্ট ক্ষমতালোভীও বটে। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি জাবেদ পাটোয়ারী যখন এসবি প্রধান ছিলেন তখন থেকেই তিনি আইজিপি হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে ১৯৮৪ ব্যাচের তারই ব্যাচম্যাট শহীদুল হক যিনি মেধা তালিকায় একটু নিচের দিকে থাকা সত্ত্বেও আইজি হয়ে যাওয়ায় তিনি কেন আইজিপি হবেন না— এই বিষয়টি তখন তার মাথায় ঘুরতে থাকে। ঢাকা টাইমস নিশ্চিত তথ্য পেয়েছে সাবেক হুইপ গাইবান্ধা থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক এমপি মাহবুব আরা গিনির মাধ্যমে জাবেদ পাটোয়ারী ব্যাপক লবিং চালান। তারা উভয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী। এই মাহবুব আরা গিনির মাধ্যমে জাবেদ পাটোয়ারী শেখ হাসিনার আস্থা অর্জনের কাজ করেন। এসবি প্রধান হিসেবে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য বিশেষ করে বিরোধী দলকে কীভাবে দুর্বল করা যায়, নিষ্ক্রিয় করা যায়, তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি করা যায় সেলক্ষে কাজ করেন। একইসঙ্গে অতীতের বিভিন্ন গোপন দলিল খুঁজে বের করে শেখ হাসিনার হাতে দেন। পুরস্কারস্বরূপ শহীদুল হক অবসরে গেলে জাবেদ পাটোয়ারীকে আইজিপি করা হয়। ২০১৮ সালে তার জন্য একতরফা এবং ভোটের আগের দিন রাতে পুলিশের সহযোগিতায় ভোট হয়।
অবসরে যাওয়ার পর জাবেদ পাটোয়ারীকে সৌদি আরবের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করা হয়। জাবেদ পাটোয়ারী একাধিকবার চুক্তি পান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের শেখ হাসিনার একজন আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের অনেক সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। যদিও জাবেদ পাটোয়ারীর কোনো জায়গায় নাম নাই। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন জাবেদ পাটোয়ারী আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হলেও তিনি ভেতরে ভেতরে একটি ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং তাদেরকে নানাভাবে সুবিধা পাইয়ে দিতেন।
ঢাকা টাইমস খোঁজ নেওয়ার চেষ্ট করেছে এই সত্যতা কতটুকু। কিন্তু নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারেন না। জাবেদ পাটোয়ারীর সঙ্গে একাধিক বিরোধী দলের নেতার যোগাযোগ ছিল। একথা কেউ কেউ নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেও নিয়েছেন। জাবেদ পাটোয়ারীকে সরকার দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। তার সৌদী আরবের রাষ্ট্রদূতের যে চাকরির মেয়াদ সেই মেয়াদ শেষ হয়েছিল। কিন্তু তিনি দেশে ফেরেননি। কী কারণে তিনি দেশে ফেরেননি? কেন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন? এ নিয়ে অনেক কথাবার্তা আছে।
কেউ কেউ বলেন জাবেদ পাটোয়ারী যখন আইজিপি ছিলেন তখন বড় বড় কেনাকাটায় কমিশন হাতিয়ে নিতেন। পুলিশের নিয়োগ ও বদলি এসব থেকে টাকা পয়সা নিতেন না নিজেকে সৎ হিসেবে প্রচার করার জন্য। নিজের একটি অনুগত কর্মকর্তা বলয়ও সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিকই কেনাকাটার কমিশন নিতেন। সেই কমিশনের টাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক আগেই পাচার করেছেন। দেশে ফিরে এলে তাকে আইনি ঝামেলায় পড়তে হতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে তার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছে।
ঢাকাটাইমস