Image description
জুলাই গণহত্যা ফার্স্ট প্রায়োরিটি, সেকেন্ডে গুম
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। চলতি বছরের ৭ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে তাকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর আগে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ট্রাইব্যুনালেই তিনি আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ছিলেন। গত আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, এই ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার হবে। এখন সেটার প্রস্তুতি চলছে। কীভাবে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, আগের আইনের কোথায় সংশোধন দরকার হচ্ছে, কাদের বিচার এখানে হতে চলেছে, এসব জানতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলা ট্রিবিউন। বাংলা ট্রিবিউন: আইন দিয়ে শুরু করি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩, সেটাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলছিল। এখন দ্বিতীয় স্তরে পৌঁছালো ট্রাইব্যুনাল। আপনি চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে এই আইনের কোনও জায়গায় পরিবর্তনের দরকার আছে বলে মনে করেন কিনা? কোন জায়গায় পরিবর্তন দরকার? তাজুল ইসলাম ছবি সাজ্জাদ হোসেন (5) সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বাংলা ট্রিবিউনের সিটি এডিটর উদিসা ইসলাম তাজুল ইসলাম: এ বিষয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল যখন আগের সময়ে ফাংশনাল ছিল, সেই সময়ে এই ট্রাইব্যুনালের যে আইনটি আছে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সেটার অনেক সমালোচনা হয়েছিল। বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অনেক মানবাধিকার সংস্থা—তারাও এই আইনের কিছু কিছু জায়গায় সংশোধন দরকার বলে মনে করেছিল। সেরকম আটটি জায়গাকে চিহ্নিত করে এই সরকার যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো যে এই ট্রাইব্যুনালেই জুলাই-আগস্টের যে ম্যাসাকার, ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটি সেটার বিচার করবেন তারা, তখন এই আইনের ব্যাপারে আমরা একটা ওপেন ডিসকাশন আয়োজন করেছিলাম। সেখানে বিভিন্ন অভিজ্ঞ মানুষ, যারা এই বিচার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন, কথা বলেছেন, তারা সেখানে মতামত দিয়েছেন। আমরা সেখানে মোটা দাগে আটটি জায়গা প্রস্তাব করেছিলাম। যেমন- অর্গানাইজেশনের বিচার করা যাবে বলে এই আইনে ছিল, কিন্তু সেই বিচারে কী শাস্তি হবে সেটা বলা ছিল না। আমরা সেটার ক্ষেত্রে একটা প্রস্তাব করেছি। ফরেন কাউন্সিলের ব্যাপার ছিল, ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটির যে সংজ্ঞা বা এলিমেন্ট অব ক্রাইমস— যেটা আমরা আগের সময়টাতে বারবার বলেছি যে এখানে ডিফাইন করা ছিল না। সেগুলো আইসিসির যে রোম স্ট্যাটু সেখান থেকে নেওয়া যায় কিনা, সেসব সংস্কারের প্রস্তাব করেছি। তারপর প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা ওপেন করেছি। বিশেষজ্ঞরা মতামত দিচ্ছেন। সেটা পাওয়ার পরে সার্বিক বিবেচনা করে সরকার এগুলো নেসেসারি অ্যামেন্ডমেন্ট করবেন— যাতে এই বিচারের আইনগত জায়গা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলার যুক্তিসঙ্গত কারণ না থাকে। বাংলা ট্রিবিউন: এই আইন সংশোধন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়া না হওয়ার কোনও কনফ্লিক্ট কি আছে? এই আইন সংশোধনের পরে কি ট্রাইব্যুনাল গঠন হবে? তাজুল ইসলাম: এই আইন সংশোধনের সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কোনও সম্পর্ক নেই, কোনও কনফ্লিক্ট নেই। ট্রাইব্যুনাল আগামী দুদিনের মধ্যে গঠন হয়ে যাবে। আশা করছি, আমি, যদিও গত দুই সপ্তাহ ধরেই এটা আমি বলছিলাম। শেষ পর্যন্ত বুধবার (৯ অক্টোবর) যখন বিচারপতি নিয়োগ হয়েছেন, যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেখান থেকেই আমরা ট্রাইব্যুনালের বিচারক পাবো বলে আশা করছি। সুতরাং, ট্রাইব্যুনাল আগামী সপ্তাহেই ফাংশনাল হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। বাংলা ট্রিবিউন: আগে দুটো ট্রাইব্যুনাল ছিল, পরে একটা বন্ধ করে একটাতেই আনা হয়েছিল। এবার কি একটাই গঠন হবে, নাকি দুটো? তাজুল ইসলাম: শুরুতে একটা ট্রাইব্যুনালই কাজ করবে। পরবর্তী সময়ে মামলার পরিমাণ, কাজের অবস্থা, মামলার সংখ্যা বিবেচনায় যদি মনে হয় যে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো দরকার, তখন সেটা নিশ্চয়ই সরকার বিবেচনা করবে, তখন আমরাও হয়তো প্রস্তাব রাখবো। তবে শুরুতে একটা ট্রাইব্যুনালই ফাংশনাল হবে বলে মনে করছি। তাজুল ইসলাম ছবি সাজ্জাদ হোসেন (17) বাংলা ট্রিবিউন: ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ৫০ থেকে ৫৫টি অভিযোগ দাখিল হয়েছে—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে। পাঠকদের জানার আগ্রহ থেকে বলছি, এই যে ৫০-৫৫টি মামলা, এগুলো পরবর্তী সময়ে কীভাবে প্রক্রিয়াধীন হবে? তাজুল ইসলাম: মানুষ ৫০টা অভিযোগ দিয়েছে। ধরুন, অভিযোগ ৫০ বা একশ’-দুইশ’ যাই হোক। চিন্তা করবো ক্রাইম সিন বেইজড। ধরুন, যাত্রাবাড়ি এলাকায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুইশ’ লোক বা চারশ’ লোক মারা গিয়েছে। আমরা এটাকে ক্রাইম সিন বেইজ ধরে চিন্তা করছি। তদন্তটা সেভাবে করলে সহজ হবে। এখানে ঘটনার বর্ণনা, পারপিট্রেটর, ভিকটিম, সাক্ষী, এগুলো পেতে সুবিধা হবে। সে হিসেবে যাত্রাবাড়িতে ২শ’ বা ৪শ’ মানুষ মারা গেছে, ৫ হাজার মানুষ যদি আহত হয়ে থাকে, তারা ৫ হাজার মামলাই করতে পারবেন আমাদের কাছে এসে। এগুলোসহ সব আমরা একসঙ্গে করে একটা অভিযোগ আকারে কোর্টের কাছে নিয়ে আসবো। এটা আমাদের আপাতত ভাবনা। সুতরাং, যেহেতু ভিকটিম হাজার হাজার, প্রত্যেকেই অভিযোগ নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু প্রত্যেকটার জন্য আলাদা মামলা হবে না। সব সমন্বিত করে বিচারের মতো উপযোগী করে সেভাবে আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে প্লেস করবো বলে চিন্তা করছি। বাংলা ট্রিবিউন: আপনি সদ্য চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ অনেক দিনের। এর আগে আপনি আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবীদের একজন ছিলেন। এই যে গত সময়ের প্রায় ৩০টির মতো মামলা থেকে গেছে বলে জানা গেলো, সেগুলোর কী হবে? তাজুল ইসলাম: ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে এই ট্রাইব্যুনালের গঠন যখন শুরু হয় ২০১০ সালে, তখন আমি ডিফেন্স সাইডের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছি, ২০১৪ সাল পর্যন্ত। তারপরে এখানে আমি আর কোনও কাজ করিনি। আমার যোগাযোগ ছিল কিন্তু যোগসাজশ নেই, এটা বলতে পারি। এখন আগের যে মামলা রয়েছে, যতটা আমি জানতে পেরেছি যে প্রায় ২৯টি মামলা আছে, এগুলো আমরা এখন পর্যালোচনা করবো, পর্যালোচনা করে দেখবো যে কোন মামলাগুলো আছে। আমরা যেটা জেনেছি, অনেক বেশি নিরীহ ও সাধারণ মানুষ তাদেরকে… ট্রাইব্যুনালকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে মামলাগুলো চালু রাখা হয়েছিল। এগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চাই। যেসব নির্দোষ মানুষ আছে, আমরা যদি দেখি এগুলো মামলা চলার মতো না, তাহলে কোর্টে আমরা আবেদন করবো একটা বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এদের যেন ছেড়ে দেওয়া হয়, জামিনের মতো হলে যেন জামিন দেওয়া হয়। এভাবে এই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করতে চাই। বাংলা ট্রিবিউন: ট্রাইব্যুনাল বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল বলছেন আপনি। এই ট্রাইব্যুনাল যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে বলে শেষ করা হতো— সেটা করা সম্ভব হলো না কেন? তাজুল ইসলাম: এটা বিগত সরকারের ব্যাপার। সেজন্য বলেছি যে তাদের কোনও বিশেষ স্বার্থ হাসিলের জন্য হয়তো বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। যেটা এখন নিয়তি যে শেষ পর্যন্ত সেই ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচারের জন্য আমাদের আসতে হচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল যদি বিলুপ্ত হয়ে যেতো তাহলে হয়তো বিকল্প পন্থা এ সরকারকে চিন্তা করতে হতো। এই মুহূর্তে যেহেতু ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটি নিয়ে কাজ, সেটা যেহেতু এই ট্রাইব্যুনাল ও এই আইনের অধীনে পড়ছে, সুতরাং এখানেই কিছু একটা করবো বলে আমরা মনে করছি। তাজুল ইসলাম ছবি সাজ্জাদ হোসেন (15) (1) বাংলা ট্রিবিউন: আমরা এতক্ষণ কথা বললাম যে মামলাগুলোর কাজ বাকি আছে, এখন সেগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই, যে মামলাগুলোর সাজা কার্যকর হয়ে গেছে। আপনারা যেগুলোকে মনে করেন কোনও একটা উদ্দেশ্য থেকে করা হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে আইনিভাবে কিছু করণীয় আছে কিনা, কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা? তাজুল ইসলাম: না, সেগুলো নিয়ে আমাদের কোনও পরিকল্পনা নেই। কারণ সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে যদি এগুলো শেষ হয়ে থাকে, সেই বিচার নিয়ে যে প্রশ্নগুলো ছিল—সেগুলো ভিকটিমদের পরিবার, তারা যদি সে ব্যাপারে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নিতে চান, তারা সেটা করবেন। এটা তাদের ওপর আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে আমি মনে করি, এটা আমার ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সুতরাং, এগুলো নিয়ে আমি কিছু ভাবছি না। যদি ভিকটিমদের পরিবার ভাবে বা রাষ্ট্র বা সরকার ভাবে, সেটা আলাদা ব্যাপার। বাংলা ট্রিবিউন: এই যে প্রক্রিয়াটা শুরু করলেন, এটা এখন দৃশ্যমান কি দেখতে পান? আগামী সময়ের প্রক্রিয়াগুলো কী হবে? তাজুল ইসলাম: এখন যেটা হবে, ট্রাইব্যুনাল বসা মাত্রই আমাদের যেহেতু তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন দুটোই কার্যকর আছে এবং তারা কাজ করছে দিনরাত, আমরা খুব দ্রুত অন্তত প্রধান প্রধান যে ঘটনাগুলো, সেগুলোর ব্যাপারে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই। আমরা ব্যাপকভাবে জুলাই- আগস্টের মানবতাবিরোধী যে অপরাধ বাংলাদেশজুড়ে হয়েছে, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রায় সব জায়গায় হয়েছে, কিন্তু সবাইকে বিচারের আওতায় আনাটা খুবই অবাস্তব একটা ব্যাপার হবে। যদিও তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। কিন্তু আমরা চাইবো যাদের কারণে এটা হয়েছে, যাকে কেন্দ্র করে হয়েছে, যাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশে এটা হয়েছে—সেসব জায়গা থেকেই কেবল আমরা চাইবো, এই প্রধান ব্যক্তিদের বিচারটাই আগে হোক। এ কারণেই আমি চাইবো এই বিচারটা শুধু যারা প্রধান ব্যক্তি আছেন, তাদের সামনে রেখে মূলত শুরু করতে। বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু প্রধান যাদের কথা বলা হচ্ছে এই অভিযোগগুলোতে এবং প্রত্যেকটা অভিযোগেই প্রধান হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ আছে, আমি অন্তত যে কয়টা দেখেছি, তাদের অনেকেই দেশের বাইরে চলে গেছেন, সেক্ষেত্রে কী করণীয়। তাজুল ইসলাম: বাইরে যারা চলে গেছে, কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আসছে, বা আসবে তাদের ব্যাপারে আমাদের আইনে গ্রেফতার করার চেষ্টা করবো। বাংলাদেশের আইন অনুসারে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে যেখানেই তাদের পাওয়া যাবে গ্রেফতার করা যাবে। কেউ যদি জুরিকডিকশনের বাইরে চলে যান, তবে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রের অপরাধীর বহিঃসমর্পণ চুক্তি বলে একটা জিনিস আছে। যেসব রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের এই চুক্তি আছে, বাংলাদেশ সরকার সেই রাষ্ট্রকে সুনির্দিষ্টভাবে এসব অভিযুক্তকে ফেরত আনতে চাইতে পারে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে। এটা তখনই সম্ভব যদি আসামিরা এমন রাষ্ট্রে যায়, যাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তিটা আছে। সেখানে থেকে ফেরত আনা সম্ভব। আর ফেরত যদি নাও আনা যায়, বাংলাদেশের আইনে আপনি জানেন, বাংলাদেশের সাধারণ আইনে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনেও তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারে কোনও বাধা নেই, সেই সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে অনুপস্থিতিতেও বিচার হতে পারে। তাজুল ইসলাম ছবি সাজ্জাদ হোসেন (11) বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু এই যে বললেন, নিয়ে আসার যে প্রক্রিয়া, আমরা এর আগেও দেখেছি, অনেক আসামিকে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। কেননা, কোনও আইনে ফাঁসি হতে পারে—এটা জানলে সেই দেশগুলো আশ্রিত আসামিদের ফেরত পাঠাতে চায় না। এটার ক্ষেত্রে আমরা যেতে পারি কিনা যে আইনে সর্বোচ্চ দণ্ড ফাঁসি থাকবে না। ওই জায়গায় পৌঁছালে হয়তো কাজটা সহজ হয়। সেটার বিষয়ে আপনার কোনও মন্তব্য আছে কিনা। তাজুল ইসলাম: এই বিষয়ে বিতর্ক আছে। এই বিষয় নিয়ে আমার ব্যক্তিগত যে ভাবনা, বাংলাদেশের সাধারণ আইনে যেখানে মৃত্যুদণ্ড আছে, সেখানে ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটি নিয়ে কথা হচ্ছে, যেটাকে ক্রাইম অব দ্য ক্রাইমস বলা হয়। সেখানে যদি মৃত্যুদণ্ড না রাখেন, সেটা বাংলাদেশের কোনও মানুষের কাছে, ভিকটিম পরিবার বলেন, এই আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেসব দেশ মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করেছে সেটা ধরেন ইউরোপ অথবা কানাডার মতো দেশ, তাদের যে সামাজিক অবস্থা, তার সঙ্গে বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা মেলালে চলবে না। এবং সেই পর্যায়ে বাংলাদেশ যায়নি। সুতরাং, এই সমস্যা থাকবে যে ওইরকম কোনও দেশে যদি কোনও আসামি চলে যায়, মৃত্যুদণ্ড যেহেতু আইনে আছে, সে কারণে তাদের ফেরত আনাটা কঠিন হতে পারে। কিন্তু সেই কারণে বাংলাদেশ থেকে মৃত্যুদণ্ড অ্যাবুলিশ করা, বাংলাদেশ এখনও এ পর্যায়ে গিয়েছে বলে আমার মনে হয় না। বা আমি মনে করছি না। এগুলো চ্যালেঞ্জেস আছে। এখন দায়টা ছিল বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর যারা ছিলেন, যারা এই অপরাধীদের বাইরে চলে যেতে বা যাওয়ার ব্যাপারে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন, তারা আসলে দায়ী হবেন। কারণ এরা বাংলাদেশে ছিল। কে তাদের যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। এটা আমরা তদন্তের মধ্য দিয়ে দেখবো নিশ্চয়ই। আমাদের কাজটা হচ্ছে বিচারটা করা। এখন বাংলাদেশ থেকে যদি কেউ আসামিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে, তো পালিয়ে যেতে দেওয়ার জন্য হয়তো আমি তাকে ধরতে পারি। কিন্তু তাকে ওই রাষ্ট্র থেকে আনার জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আমার খুব বেশি কিছু করার নেই—বহিঃসমর্পণ চুক্তির আশ্রয় নেওয়া ছাড়া। সুতরাং, আমরা আইন অনুযায়ী যতটুকু করার ক্ষমতা ও সুযোগ থাকবে সেটার চূড়ান্ত সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করবো। আর বাকিটা আমার হাতে নেই। বাংলা ট্রিবিউন: এই ট্রাইব্যুনাল শুধু জুলাই গণহত্যার বিচার করবে, নাকি মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে মনে করলে—যে কেউ এসে সেই অভিযোগটা করতে পারবে। যেমন ধরুন, আয়নাঘরের কথা বলা হচ্ছে, সেই অভিযোগগুলো এখানে বিচারের আওতায় আসবে কি? তাজুল ইসলাম: যেহেতু এই আইনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখানে করা যাবে এবং এখানে এই অভিযোগ আসতেই পারে। ইতোমধ্যে এসেছে। গুমের ঘটনা ও আয়নাঘরের ঘটনার বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে, বুধবারেও এসেছে। আমরা প্রায়োরিটি দিচ্ছি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনাকে এবং সেকেন্ড প্রায়োরিটি হিসেবে গুমের বিষয়টিকে নিয়ে আসতে চাই। যেহেতু এটা পলিটিক্যাল পারসিকিউশন, গণহত্যার সঙ্গে ধারাবাহিক একটা প্রক্রিয়ার মতোই আমরা মনে করছি। সুতরাং, সেটার ব্যাপারেও আমাদের তদন্ত চলছে। আমরা আশা করি এটারও বিচার করা যাবে। এটা নির্ভর করবে পরবর্তী সময়ে আমরা কতটুকু প্রগ্রেস করতে পারছি সেটার ওপরে। বাংলা ট্রিবিউন: শেষ প্রশ্ন, কবে থেকে পুরো প্রক্রিয়াটা শুরু হবে বলে আশা করছেন? তাজুল ইসলাম: এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ আগামী সপ্তাহে হবে। আগামী সপ্তাহে নিয়োগ এবং আগামী সপ্তাহেই ট্রাইব্যুনালের প্রথম অধিবেশন বসবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি। সুতরাং, এটা বলতে পারি আগামী সপ্তাহ থেকে ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে যাবে। যদিও অনানুষ্ঠানিকভাবে আমাদের তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশনের কাজ চলছে। বাকিটা ইনশাআল্লাহ, সামনের দিনে আপনারা দেখতে পাবেন এর অগ্রগতি। বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে ধন্যবাদ। তাজুল ইসলাম: আপনাদেরও ধন্যবাদ।