Image description
মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও দুর্নীতি নিয়ে নানা প্রশ্নে জর্জরিত ডিএনসির ডিজি, বললেন ‘কোনো দুর্নীতি করিনি’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বলেছেন, তিনি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন এবং কখনো দুর্নীতি করেননি। সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসির সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন দাবি করেন মোস্তাফিজুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে মাদকের বিস্তার রোধে ব্যর্থতার অভিযোগ বিষয়ে নানা প্রশ্নে জর্জরিত হন ডিএনজির ডিজি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে মোস্তাফিজুর রহমান দুটি জেলায় ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেসব জায়গায় তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও তার বিরুদ্ধে নানা সময় অভিযোগ করে আসছেন। এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “আমি এখানে আসার আগে যেসব জায়গায় কাজ করেছি বা দায়িত্ব পালন করেছি সেসব জায়গায় আমার বিরুদ্ধে বিন্দু পরিমাণ দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। কেউ বলতে পারবেনা আমি ঐসব জায়গায় দুর্নীতি করেছি। একজন লোকও এই কথা বলতে পারবে না।” তিনি যেসব জায়গায় কাজ করেছেন, সেসব জায়গায় ‘দুর্নীতি বিরুদ্ধে কাজ করেছেন’ বলেও দাবি করেন। মোস্তাফিজুর রহমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আগে যেসব জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছেন সেসব জায়গায় সাংবাদিক প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা দিইনি।” রাজউকের কাছ থেকে একটি ও গৃহায়ণের কাছ থেকে একটি প্লট নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এই প্লটগুলো অনিয়ম করে নিইনি। নিয়মের মধ্য থেকেই নিয়েছি। আমি সরকারি নিয়মনীতি মেনে প্লটের জন্য আবেদন করেছি।” অনেক সময় অভিযানে জব্দ মাদকের পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে কমিয়ে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এ ধরনের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এ সংক্রান্ত চারটি অভিযোগ পেয়েছি। পরে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করেছি। কমিটি তদন্ত করছে এসব অভিযোগের বিষয়ে। কুষ্টিয়াতে এমন একটি অভিযোগ পেয়ে সেটি আমরা তদন্ত করি এবং সত্যতা পাওয়ায় ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।” দায়িত্ব নেওয়ার পর বহর নিয়ে টুঙ্গীপাড়া গিয়েছেন ফুল দেওয়ার জন্য- এই বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকের ডিজি বলেন, “ওই সময় যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সবাই সেখানে গিয়েছেন। কে যায়নি, সাংবাদিকরা সেখানে গিয়েছেন। আমি ঐদিন টুঙ্গীপাড়ায় একটি মাদকবিরোধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছিলাম।” মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে শেখ কামালের জন্মদিন অফিস আদেশে পালন করা হয়েছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, “শেখ কামালের জন্মদিন পালন করা হয়নি।” ডিএনসির গুলশান সার্কেলের পরিদর্শক সুমন রহমানের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে মানিকগঞ্জে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহাপরিচালক বলেন, “গুলশান থেকে মানিকগঞ্জ এটা কি ভালো পোস্টিং হয়েছে‌?” পরিদর্শক সুমন রহমানকে মানিকগঞ্জে পোস্টিং দিয়ে কি পানিশমেন্ট দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে মাদকের ডিজি বলেন, “তার বিরুদ্ধে আমরা তদন্ত করছি। পোস্টিং কোনো শাস্তি নয়।” দিনদিন মাদকসেবীদের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু আপনারা কার স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মন্ত্রণালয়ে মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারীদের সংখ্যা কমিয়ে দেখিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “না কোনো সংখ্যা কমানো হয়নি।” একই ব্যক্তি একাধিক বারের মালিক হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নিয়ম মেনে কোনো ব্যক্তি যদি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বার দিতে চায় তাহলে সেটি সম্ভব, এখানে কোনো আইনি বাধা নেই।” রাজধানী ঢাকায় দেখা গেছে বৈধ বারের তুলনায় অবৈধ বার বেশি- এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো ধরনের কার্যক্রম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কেউ অবৈধভাবে মাদক বিক্রি করতে পারবে না, এ বিষয়ে আমরা সবসময় কাজ করি।” এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসি ডিজি বলেন, “আমাদের প্রতি একটা অভিযোগ রয়েছে, আমরা শুধু ছোট মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করি বা আইনের আওতায় আনি। তবে এটি ঠিক নয়। আমরা শুধু ছোট মাদক ব্যবসায়ী না, বড় মাদক ব্যবসায়ীদেরকেও আইনের আওতায়ন আনি। তবে আমাদের সব লোকজন যে ফেরেশতা তাও আমরা বলি না। আমাদের মধ্যেও কিছু অসৎ ও খারাপ লোক আছে। এ ধরনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করব। কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা মাদককে বিরুদ্ধে কাজ করি।” মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অপকর্মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক আরও বলেন, “আমাদের কাছে অপরাধীর পরিচয় শুধু অপরাধী সে যেই হোক না কেন। কারো বিরুদ্ধে আমাদের বিন্দুমাত্র কোনো ধরনের সহানুভূতি নেই। যারা এ ধরনের অপকর্ম বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।” তিনি আরও বলেন, “ মাদকের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ হাজার ২৬৪টি অভিযান পরিচালনা করে এক হাজার ১৯৮টি মামলা দায়ের করে এক হাজার ২৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ১১ জন গডফাদারসহ ৮৯ জন শীর্ষ মাদক কারবারি রয়েছেন।” ঢাকাটাইমস