ভোলায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার গ্যাসের সন্ধান
ভোলায় ৫ দশমিক ১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুতের সন্ধান পাওয়া গেছে। শাহবাজপুর ও ইলিশায় ২.৪২৩ টিসিএফ এবং চর ফ্যাশনে ২.৬৮৬ টিসিএফ মজুত গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এর বাজারমূল্য সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১ টিসিএফ গ্যাস দিয়ে দেশের ১ বছরের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা যায়। সেই হিসেবে মজুত এই গ্যাস দিয়ে বাংলাদেশ অন্তত ৫ বছর চলতে পারবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও রাশিয়ার জ্বালানি জায়ান্ট গ্যাজপ্রমের যৌথ গবেষণায় গ্যাস মজুদের এ তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণাটি ২০২০ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরের জুনে শেষ হয়। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সে গবেষণা প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ বর্তমানে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের চাহিদা পূরণ করছে। খোলাবাজার প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দর ১০.৪৬ মার্কিন ডলার, সেই হিসাবে ৫.১০৯ টিসিএফ গ্যাসের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।
ভোলায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার গ্যাসের সন্ধান
সামিটের টার্মিনাল চালু হলেও হচ্ছে না গ্যাস সরবরাহ
গবেষণায় বলা হয়েছে, ভোলার শাহবাজপুর থেকে ইলিশা পর্যন্ত ৬০০ বর্গকিলোমিটার থ্রিডি সিসমিক সার্ভে করা হয়। এতে ২.৪২৩ টিসিএফ উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত আবিষ্কৃত হয়। ভোলার চরফ্যাশনে ১৫২.৬ লাইন কিলোমিটার টুডি সিসমিক সার্ভে করে ২.৬৮৬ টিসিএফ গ্যাসের মজুত পাওয়া যায়।
বাপেক্স এর সাবেক মহাব্যবস্থাপক (ভূতাত্ত্বিক বিভাগ) আলমগীর হোসেন একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাস্তবে ৫ টিসিএফ থেকেও বেশি গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ অতীতে আমরা এসব লোকেশানে ২ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলনের স্টাডি নিয়ে কাজ করলেও–পরে গিয়ে ওই জায়গায় ৩ থেকে ৪ টিসিএফ পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করতে সক্ষম হয়েছি।
গ্যাজপ্রমের মুখপাত্র এলেক্সি বেলবেজিয়াভ বলেন, গবেষণাটি আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা করা হয়েছে, যেখানে সিসমিক ডাটা, অয়েল লক ডাটা, কোর ডাটা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে আধুনিক প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার, সুপার কম্পিউটার সিস্টেম এবং উন্নতমানের ল্যাব ব্যবহার করার ফলে গবেষণার তথ্যগুলো খুবই নির্ভরযোগ্য।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, গবেষণা প্রতিবেদনটি নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনতে ভোলা-বরিশাল, বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপলাইনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে এলএনজি ও সিএনজি করে ঢাকায় আনা হবে।
তিনি বলেন, শিগগিরই একটি টেন্ডার দেওয়া হবে। এখন থেকে সব কাজ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে হবে। একাধিক কোম্পানিকে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। এই গ্যাস পেলে এলএনজি আমদানি সীমিত করা হবে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, ভোলার গ্যাসক্ষেত্রগুলো ৩০ বছর আগে আবিষ্কৃত হলেও, অর্থনৈতিক কারণে পাইপলাইন নির্মাণের কাজ বিলম্বিত হয়। এখন আবিষ্কৃত রিজার্ভ বাড়ায় পাইপলাইন নির্মাণকাজ গতি পেয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পগুলোতে সীমিত পরিমাণে ভোলার গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
দেশের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৬৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে দৈনিক ঘাটতি থাকছে ১ হাজার ৩৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এই ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
১৯৯৮ সালে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পরে এটিই সবচেয়ে বড় গ্যাস মজুতের আবিষ্কার। শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রটি ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি আবিষ্কৃত হলেও–সাম্প্রতিক গবেষণার আগপর্যন্ত এটিকে একটি ছোট গ্যাসক্ষেত্র হিসেবেই ধরা হতো।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে ভোলায় পাঁচটি কূপ দিয়ে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। আরও ৪টি কূপ খনন করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকেও দৈনিক আরও ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এছাড়া, আরও ৫টি কূপের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে, সেখান থেকেও আগামী ২ বছরের মধ্যে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। এ ছাড়াও আরও ১৪টি কূপের স্থান শনাক্ত করা হয়েছে। যা থেকেও আরও ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব।