Image description
গ্যাসসংকটে ধুঁকছে শিল্প
গ্যাসসংকটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে। শিল্প ক্ষেত্রে তৈরি হবে হতাশা। দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণ সম্ভব নয়। গ্যাসসংকটে ধুঁকছে শিল্প গতকাল বুধবার রাজধানীতে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে শত ভাগ বিদ্যুতায়নের দিকে যাওয়ায় কথা বলে বিগত সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অনেক অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। সে সুযোগে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। ফলে সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের সিস্টেম লস প্রায় ১০ শতাংশ। এটি অসম্ভব। এ লসের কথা বলে গ্যাস অপচয় ও চুরি হচ্ছে। যেভাবে লসের কথা বলা হয়, বাস্তবে সেটা অর্ধেকও হবে না। এ ছাড়া টেকনিক্যাল লস রয়েছে। এসব কারণে বছরে সরকারের হাত ছাড়া হচ্ছে এক বিলিয়ন ডলার। এসব কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা সম্ভব হলে এখনকার সংকট হয়তো খুব স্বাভাবিকভাবে উতরে যাওয়া যেত। ড. ইজাজ হোসেনের ভাষ্য, সিস্টেম লসের বিষয়টি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি। গ্যাসের সিস্টেম লসটা পুরোপুরি চুরি। বিগত সরকার নিজেও সেটা জানত। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, আমাদের জাতীয় সম্পদ এভাবে চুরি হয়ে গেছে, কেউ কিছু বলেনি। আর এখন তো আমরা অনেকটা সোনার দামে এলএনজি কিনে আনছি। জাতীয় স্বার্থে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গ্যাসের এই চুরি বন্ধ করা উচিত ছিল; কিন্তু রাজনৈতিক মদদে সেটা আরো বেশি হয়েছে। এই চুরি হওয়া গ্যাস দিয়ে কমপক্ষে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। আইবিএফবির সভাপতি হুমায়ুন রশিদ বলেন, জ্বালানিসংকটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে। শিল্প ক্ষেত্রে তৈরি হবে হতাশা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে আইবিএফবির সমর্থন অব্যাহত থাকবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, বিগত সরকারের সময় সব খাতে ‘তথ্যসন্ত্রাস’ হয়েছে, জ্বালানিতে তা আরো বেশি হয়েছে। সরকার একটি উন্নয়নের টার্গেট নিয়েছে; কিন্তু কোনো পরিকল্পনা ছাড়া ওই অবকাঠামো করা হয়েছে। তথ্যে উন্নয়ন দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবে উন্নয়ন কাজে আসেনি। তিনি বলেন, সরকারের কিছু বিষয় জ্বালানি খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। টার্গেট করা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুত্সুবিধা নিশ্চতকল্পে উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার; কিন্তু সেটা ধরে-বেঁধে করা হয়েছে। উৎপাদন অর্ধেক হলেও কাগজে-কলমে শত ভাগ দেখানো হয়েছে। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’র সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল ও বাংলাদেশ সোলার রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল আক্তার প্রমুখ। গ্যাসসংকটে বিদ্যুৎ, সারশিল্পের উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে : জ্বালানি উপদেষ্টা সামিটের এফএসআরইউ গত তিন মাস বন্ধ থাকায় গ্যাস সরবরাহে বিদ্যুৎ, সার ও শিল্প উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে। রূপসায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গ্যাসের জন্য চালু করা যাচ্ছে না। আগামী ১৫ তারিখ থেকে এটি চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। গতকাল মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টিজের সভাপতি আশরাফ আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এ সময় প্রতিনিধিদল জ্বালানি উপদেষ্টাকে জানান, বেশ কিছু দিন ধরে তাঁরা তাঁদের কারখানায় নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সাপ্লাই পাচ্ছেন না, ফলে তাঁদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ সময় তাঁরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান।