ভয় কাটছে না, নির্দেশ থাকলেও অফিসে ফিরতে অনীহা পুলিশ সদস্যদের
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর রাজধানীসহ সারা দেশের সব থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। একে একে পুলিশের সব ইউনিটের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। নিরাপত্তাহীনতায় কর্মবিরতি ঘোষণা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি সংগঠন। তবে এসবের মধ্যেই সদ্য দায়িত্ব নেওয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম পুলিশের সব ইউনিটের সদস্যকে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেন। আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যে কাজে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। তবে ভয় কাটছে না পুলিশ সদস্যদের। কাজে ফিরতে অনীহা রয়েছে অনেকের।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেড কোয়ার্টার, ডিবি কার্যালয় ও আশেপাশের থানাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সবগুলো কার্যালয় এখনও বলতে গেলে পুলিশশূন্য।
দুপুর ১টার দিকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান এই কার্যালয়ের মূল ফটকে সেনাবাহিনী ও স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটালিয়ন (এসপিবিএন) নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। কার্যালয়ে ডিবি সংশ্লিষ্ট অফিসার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়া আর কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে যারা সেখানে ঢুকছেন, সবাইকে পরিচয় নিশ্চিত করে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
Photo
নিরাপত্তার দায়িত্বে সেনাবাহিনী
মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনের সড়কে, যেখানে ডিবির সারি সারি গাড়ি পার্ক করে রাখা হতো, বৃহস্পতিবার সেখানে একটি গাড়িও দেখা যায়নি। মিন্টু রোডে দুইপাশে শুধুই নিরবতা। সেখানে দায়িত্বে থাকা ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, কার্যালয়ে আপাতত ডিবির অফিসার ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সবাইকে পরিচয় নিশ্চিত করে প্রবেশ করতে হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একই দৃশ্য দেখা গেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরেও। প্রবেশ পথে তেমন কোনও মানুষ নেই। সেখানে সেনাবাহিনী বা এসপিবিএন সদস্যদের কাউকেও দেখা যায়নি। সিভিল পোশাকে পুলিশের সদস্যরাই গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। যারা ভেতরে প্রবেশ করছেন, তাদের ইউনিফর্ম ছাড়া সাধারণ পোশাকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তাদেরও গেটে পরিচয় নিশ্চিত করে ভেতরে যেতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই পুলিশ সদস্য জানান, তাদের এখনও ভয় কাটছে না। সদর দফতরে আসার পথে কেউ ধরে কিনা সে ভয় তাড়া করেছে। এ জন্য সিভিল পোশাকে অফিসে আসতে হলো। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে এখনও ভাবতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের।
দফতরের প্রধান ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য জানান, কিছু কিছু কর্মকর্তা বর্তমানে অফিসে অবস্থান করছেন। বেশিরভাগই এখনও আসেননি।
পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান কার্যালয়ের প্রধান ফটকে এখনও সেনাবাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে
এদিকে রাজধানীর থানাগুলোও অনেকটা জনশূন্য। বেলা দেড়টার দিকে ডিএমপির রমনা মডেল থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার প্রধান ফটক আটকানো। ভেতরে দু-একজনকে সাধারণ পোশাকে দেখা গেলেও গেট দিয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, বিকালের মধ্যে অনেকে অফিসে প্রবেশ করতে পারেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় কর্মস্থলে যোগ দিতে পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়। কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হওয়া পুলিশ সদস্যদের পথে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক দলের নেতা, ছাত্র-ছাত্রী ও আপামর জনসাধারণের কাছে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট বিকাল থেকে দেশের অনেক থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে থাকে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়। এ হামলা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এ হামলা থেকে রক্ষা পায়নি পুলিশ হেড কোয়ার্টারও। এরপর রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশি ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে।