সরেজমিন ঢামেক: এখানে এখন লাশের সারি, স্বজনের আর্তনাদ
এ যেন ভিন্ন এক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। জরুরি বিভাগের মর্গে লাশের ওপরে রাখা লাশ। আরো মরদেহের অপেক্ষায় সারিবদ্ধ ভাবে রাখা খালি স্ট্রেচার। অ্যাম্বুলেন্স আসতেই ঘিরে ধরছেন উৎকণ্ঠিত স্বজন, ঘিরে ধরছেন গণমাধ্যমের কর্মীরা। নিহতদের স্বজনের কান্না আর আর্তনাদ হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে মিশে যাচ্ছিল প্রতিধ্বনি হয়ে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না হাসপাতালে আসা অন্য রোগী ও তাদের স্বজনরাও।
বৃহস্পতিবারের রাতে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় আগুনে হতাহতের ঘটনায় রাত দেড়টায় সরেজমিনে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এ ঘটনায় ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৩ টি মরদেহ রাখা হয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে। ১০ টি মরদেহ রাখা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। আর আর রাজার বাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ছিল একটি মরদেহ। আগুনের ঘটনায় উদ্ধার বেশিরভাগকেই এ হাসপালে নিয়ে আসে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
সরেজমিনে রাত ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে প্রিয়জনের মরদেহ সনাক্ত করতে ভিড় জমিয়েছেন স্বজনরা। শনাক্ত করেই বিলাপ করতে করতে মর্গের সামনে থেকে বেরিয়ে আসছিলেন তারা। কোনো কোনো মরদেহ এতটা পুড়ে গেছে যে চিনতে পারছিলেন না স্বজনরা।
এদিকে রাত ২টা ২২ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান। তারা হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহতদের খোঁজখবর নেন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিহতদের স্বজনদের সান্তনা দেন।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের পোস্টে জবাবে পুলিশ প্রধান বলেন এ ঘটনায় কারো ত্রুটি থাকলে ছাড় দেয়া হবে না। আগুনের ঘটনা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে বলেও জানান আইজিপি।
রাত সাড়ে ৩ টায় এ খবর লেখা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জুড়ে ছিল কান্না, স্বজন হারানোর শোক। হাসপাতালের মেঝেতে আহাজারি করছিলেন স্বজনহারারা। অন্যদিকে মরদেহ দ্রুত নিয়ে যেতে জরুরি বিভাগের ভেতরের টেবিলে নিহত সর্বজনের নাম দেখাচ্ছিলেন হাসপাতালের খাতায়। কেউ কেউ চোখের জল মুছে পড়ার চেষ্টা করেছিলেন সদ্য হাতে পাওয়া স্বজনের মৃত্যু সনদ।