সাম্প্রতিক সময়ে চলতি অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বেশ কিছু জটিল মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ। শনিবার রাজধানীর বনানী দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাবেক এই স্বৈরশাসক।
এরশাদ বলেন, ‘এই বাজেট শুধুমাত্র উচ্চাভিলাসীই নয় বরং অপূরণীয় স্বপ্নের মত’। এরশাদের সংবাদ সম্মেলনে দলের অনেক নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ সেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। রওশন এরশাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে এরশাদ বলেন, আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। আমি রওশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে আমাদের দলীয় প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি।
তবে এরশাদের বক্তব্য সম্ভবত রওশন এরশাদের পছন্দ হয়নি। তাই মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান রওশন এরশাদ। প্রস্তাবিত বাজেটের প্রশংসা করে বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আমাদের দলীয় প্রধান যে মন্তব্য করেছেন তা তার নিজস্ব মতামত।
এর মানে হল রওশন এরশাদ প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে কোনো জটিল মন্তব্য করতে রাজি নন। কারণও অবশ্য স্বচ্ছ পানির মত পরিষ্কার। সরকারের আশীর্বাদ ও কৃপায় রওশন এরশাদ আজ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার মর্যাদা পেয়েছেন। বিরোধী দলীয় নেতা একজন মন্ত্রী মর্যাদার মানুষ। তাই তিনি নানান সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান। তাই অযথা একটি মন্তব্য করে সরকারের বিরাগ ভাজন হওয়ার দরকার কি? মূলত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন থেকে এরশাদের সরে যাওয়া ও বুঝিয়ে শুনিয়ে এরশাদকে সরকারের বশবর্তী করার জন্য রওশন এরশাদকে পুরষ্কৃত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।
তাই এখন রওশন এরশাদের বাজেট প্রতিক্রিয়াকে নিজস্ব মন্তব্য বলে বাতাসে উড়িয়ে দিতে পারেন এরশাদের পাড় সমর্থকরা। এর মানে হল সরকারের ভূল সিদ্ধান্তের সমালোচনা করাতো দূরে থাক বিরোধী দল নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়ে গেছে। এই ধরনের পরিস্থিতি জাতীয় পার্টির ভঙ্গুর রাজনৈতিক অবস্থার স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরছে এবং বিরোধী দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে তারা ছায়া মন্ত্রীসভার অংশ হতেও ব্যর্থ হয়েছেন এবং সংসদে সরকারের ভূল সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে সম্পুন্ন ব্যর্থ।
এরই মধ্যে দেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্টে সরকার বিরোধী বিভিন্ন রকমের বেফাঁস কথাবার্তা বলায় সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলেছেন রাজনীতির সুযোগ সন্ধানী পুরুষ এরশাদ। তাই উপায়হীন হয়ে ক্ষমতাসীন দলটি কখনো এরশাদকে মামলার ভয় দেখিয়ে দমে রাখার চেষ্টা করেছে আবার যখন দাবি-দাওয়া এবং মানসিক অত্যাচারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তখন বাধ্য হয়ে চিকিৎসার নামে নির্মল সবুজ ঘাসের বুকে এরশাদকে গলফ খেলতে বাধ্য করেছে সরকারি দলটি। তবে সরকারের প্রসঙ্গে সব সময় বুঝে শুনে কথাবার্তা বলাটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন রওশন এরশাদ। এইচ এম এরশাদ দেশের রাজনীতি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলেও রওশন এরশাদ বিচক্ষণতার সাথে রাজনীতির মাঠে চলাফেরা করেছেন। বরং সরকারকে খুশি করে নিজের সুযোগ সুবিধা আদায় করে নেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন রওশন এরশাদ।
তবে মিঃ ও মিসেস এরশাদের মধ্যে একটি বিষয়ে মিল রয়েছে। এই দুজনই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন। রওশান এরশাদের মত এইচ এম এরশাদও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। এরশাদ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। যার ফলে মন্ত্রী মর্যাদা ভোগ করেন এরশাদ। রাষ্ট্রের অনুকম্পা পাওয়া এরশাদের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলার বিচারকার্য স্থগিত হয়ে আছে। বিশেষ করে জেনারেল মঞ্জর হত্যা মামলায়তো সরকার ভেলকি দেখিয়ে দিল। একটি মামলায় বিচারকার্য পরিচালনা ও রায় আটকে দেওয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে ২২ জন বিচারককে বদলি করা হয়েছে। সুতরাং বুঝুন এই বর্ণচোরা এরশাদ ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এরশাদকে নিয়ে সরকারের অবস্থা বিড়ালের গাছে চড়ায় মত। এরশাদ বর্তমান রাজনীতির ৫০ গ্রাম বাটখারার মত ভূমিকা পালন করছেন। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে এরশাদের মত বাটখারার প্রয়োজন আছে। সুতরাং এরশাদকে বাইপাশ করে কিছু করা যাবে না।
এটি সত্য যে এরশাদের কোনো কথা কোনো গ্যারান্টি নেই। এরশাদ সকালে এক কথা বললে বিকাল হতে হতে সুর পাল্টে যায়। এরশাদের উপর ভরসা করলে বোকামী করবে যে কোনো রাজনৈতিক দল। মিঃ এবং মিসেস এরশাদ যখন সরকারের কোনো বিষয়ে সমালোচনা করেন তখন বুঝতে হবে শুধুমাত্র সরকারি বেতন-ভাতা নিশ্চিত করার জন্য উভয় এই ধরনের নাটকের অবতারনা করেন।
ডেইলি স্টার
পাঠক মন্তব্য
sujog pele amio oder moto hobo
এরশাদ একজন ভাল মানুষ, সুষ্ঠ রাজনীতিবিদ, এরশাদ হানাহানি চুরি ডাকাতির ও জনগণকে বলি দেওয়ার রাজনীতি করে না। তবে।1990 থেকে আওয়ামী লীগ ও বি এন পি, এরশাদকে সুযোগে বেব্যহার করে ও মামলা জেল অকারণে সাজা দিয়ে আসছে। সেওতো একজন মানুষ, এই যে অকারণে এত অত্যাচার সয্য করে আসছে, সেই বিষয়ে তো কেউ মুখ খোলেনি। আপনারা জিতের নৌকায় সবাই উটতে জানেন।
আসলেই এরশাদের মত বুদধিমান নেতা বতমান দুনিয়ায় বিরল।
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন