Image description

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধকে সমর্থন বা অর্থায়নে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে নতুন একটি আইন পাস করেছে ভেনেজুয়েলা। দেশটির জাতীয় পরিষদে অনুমোদিত এই আইনে সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর দলের নিয়ন্ত্রণাধীন সংসদেই আইনটি পাস হয়।

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) আইনটি অনুমোদনের ঠিক আগমুহূর্তে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। কারাকাস এসব পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করে একে ‘সমুদ্রদস্যুতা’র শামিল বলে মন্তব্য করেছে।

গাজায় চিকিৎসা সংকট চরমে, সহায়তা প্রবেশে জরুরি আহ্বানগাজায় চিকিৎসা সংকট চরমে, সহায়তা প্রবেশে জরুরি আহ্বান
জাতীয় পরিষদে আইনটি উপস্থাপনের সময় আইনপ্রণেতা জিউসেপ্পে আলেসান্দ্রেল্লো বলেন, দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়া এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও অবনতির হাত থেকে রক্ষা করাই এই আইনের মূল উদ্দেশ্য। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা ও বাহ্যিক চাপ ভেনেজুয়েলার অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

ভেনেজুয়েলার অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্যে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে বড় আকারের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি, তেলবাহী জাহাজ জব্দ, মাদক পাচারের অভিযোগে নৌযানে অভিযান এবং স্থল অভিযান চালানোর হুমকির মতো বিষয় রয়েছে। কারাকাসের দাবি, এসব কর্মকাণ্ডের আন্তর্জাতিক বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত সামুয়েল মোনকাদা বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করা একটি শক্তির মুখে দেশটি পড়েছে, যারা ভেনেজুয়েলার জনগণকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করতে চাইছে। তাঁর ভাষায়, হুমকির উৎস ভেনেজুয়েলা নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র সরকারই এই উত্তেজনার জন্য দায়ী।

যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের সমালোচনায় চীন ও রাশিয়াও সরব হয়েছে। জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া সতর্ক করে বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রশাসন এমন একটি কৌশল অনুসরণ করছে, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য লাতিন আমেরিকান দেশের বিরুদ্ধেও প্রয়োগ করা হতে পারে।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি কলম্বিয়াসহ কয়েকটি দেশ ভেনেজুয়েলার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ওয়াশিংটনকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা ও উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে আর্জেন্টিনা, পানামা ও চিলির মতো ডানপন্থি সরকারগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বিমান ও সেনা পরিবহনকারী উড়োজাহাজ মোতায়েন করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌবহর।

মাদুরো সরকারের অভিযোগ, ভেনেজুয়েলার বিপুল তেলসম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। বিপরীতে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বলেন, তেল রপ্তানি মাদুরো সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক ভরসা, পাশাপাশি তিনি দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগও পুনরুল্লেখ করেন।

অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে, আন্তর্জাতিক চাপকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলা সরকার অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের ওপর দমনমূলক ব্যবস্থা জোরদার করেছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পরিস্থিতি আরও কঠোর হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলোর বক্তব্য, প্রকৃত বিজয় তাদের হলেও আন্তর্জাতিক পরিসরে মাদুরোর জয় খুব অল্পসংখ্যক দেশই স্বীকৃতি দিয়েছে।

শীর্ষনিউজ