চট্টগ্রামে শারদীয় দুর্গোৎসবের মঞ্চে 'ইসলামী সংগীত' পরিবেশন করেছে একদল তরুণ। চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে নগরের জেএম সেন হলের শারদীয় দুর্গোৎসবের মঞ্চে দুটি গান পরিবেশন করেন। ছাত্রশিবিরের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীরা সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জেএম সেন হলে শুভেচ্ছা জানাতে যান। জামায়াতের একদল নেতাকর্মীও সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা একদল নেতাকর্মী মঞ্চে উঠে একটি ইসলামী সংগীত এবং শাহ আব্দুল করিমের একটি গান পরিবেশন করেন।

সূত্রে জানা গেছে, পূজা আয়োজক কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত ওই সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানান। তবে আয়োজক কমিটির সভাপতি আশিস দে এবং অন্য নেতারা জানিয়েছেন, কমিটির বাকি সদস্যরা এই সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণের বিষয়ে জানতেন না। আশিস দে এই ঘটনায় স্টেজে উঠে সজল দত্তকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন বলে একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পাঁচজন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ শিরোনামে একটি ইসলামী সংগীত পরিবেশন করছেন। সংগীতটির গীতিকার চৌধুরী আবদুল হালিম। অন্য গানটি হলো- গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু-মুসলমান...'

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের প্রচার সম্পাদক মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। এখন বাসায় আছি। জামায়াত ইসলামীর কেউ জেএম সেন হলে গিয়েছে কিনা সেটি আমার জানা নেই।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী বলেন, ‘যারা ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেছেন তারাও পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে এসেছিলেন। পূজা উদযাপন পরিষদের অনুমতি নিয়ে তারা সেখানে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেছেন। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হইচই হচ্ছে। কিন্তু এখানে কোনো সমস্যা নেই। তবুও আমরা এ বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করছি। তারা অভিযোগ দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে তথ্য যাচাইকারী বা ফ্যাক্ট চেকার প্রতিষ্ঠান রিউমার স্কানার বলছে, পূজা মণ্ডপে গানের ভিডিওটি এডিটেড নয়, ভিডিওটি আসল।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির বলেন, চট্টগ্রামের জেএম সেন হলে পূজামণ্ডপে গানের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানকার প্রকৃত ঘটনা জানতে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক এবং পূজা কমিটির এক নেতার সাথে কথা বলেছি। ঘটনা হচ্ছে, পূজা আয়োজক কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত স্থানীয় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানান। একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই সংগঠনটি জামায়াতপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মীদের সংগঠন। তারা স্টেজে উঠে দুটি গান গায়: ১. আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম। ২. শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম।