বাংলাদেশের মসনদে থেকে ১৫ বছর দিল্লির স্বার্থ সংরক্ষণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশ, র্যাব, বিচারক, গণমাধ্যম, ব্যবসায়ীসহ প্রতিটি সেক্টরে ‘দিল্লির স্বার্থরক্ষা এজেন্ট’ তৈরি করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে হাসিনা পালিয়ে সেই ‘আপন ঠিকানা’ দিল্লি গেছেন। হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের উপর হিংস্র হয়ে উঠেছে হিন্দুত্ববাদী ভারত। জুডিশিয়াল ক্যুসহ বিভিন্ন সেক্টরে একের পর এক বিশৃংখলা সৃষ্টির টার্গেট করে ব্যর্থ হয়ে এখন গার্মেন্টস শিল্পকে টার্গেট করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার ভারত দখল করতে চায়। ভারত চায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে বিশৃংখলা দীর্ঘায়িত করে নিজেদের পণ্যের বাজার গড়ে তুলতে। সে জন্য পরিকল্পিতভাবে দেশীয় তাবেদারদের দিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পে বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। ভারত এক সময় টার্গেট করে শ্রীলংকার গার্মেন্টস ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের পাটশিল্প ধ্বংস করেছে। গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, যারা গার্মেন্টস শিল্পে বিশৃংখলা করছে তারা মূলত সন্ত্রাসী। শ্রমিকদের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার পরও একের পর এক বিশৃংখলা করছে। সরকার কঠোরভাবে দমন না করলে আগামীতে আরো গার্মেন্টসসহ অন্যান্য সেক্টরেও বিশৃংখলা করবে। গতকালও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘গুজব ছড়িয়ে আশুলিয়ায় সহিংসতা করা হচ্ছে এবং বিক্ষোভরত শ্রমিকদের মধ্যে ঢুকে অনুপ্রবেশকারীরা গুলি চালিয়েছে।’
গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা নিয়ে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গতকাল একটি গণমাধ্যমকে বলেন, দিল্লির আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে ফের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে ভারত। এ জন্য তাদের ইন্ধনে ছাত্রলীগ নেতারাই শ্রমিক নেতা সেজে সমাবেশে বক্তৃতায় যে সব গার্মেন্টস কোম্পানি বেতন দেবে না তারা সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা সন্ত্রাস করছে। আওয়ামী লীগের সাবোটাজের রাজনীতি বুঝতে হলে আওয়ামী লীগের চরিত্র বুঝতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমান গুণ্ডা পাঠিয়ে ভাসানীর সমাবেশ পণ্ড করেছিল। এমনকি ওয়ান ইলেভেনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ঢাকা সফরে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শেরাটনে বৈঠক করেন। সে সময় শাহবাগে গান পাউডার বাসে ছিটিয়ে আগুন দিয়ে কয়েকজন মানুষকে হত্যা করা হয়। কয়েক বছর পর পৈশাচিক সে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আওয়ামী লীগ নেতারাই স্বীকার করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর গোটা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ভারত তাদের নাচের পুতুল হাসিনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে এবং প্রশাসক হিসেবে ড. ইউনূসকে চরমভাবে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। আর দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রশাসনের আমলা, পুলিশের বড়কর্তা, কিছু ব্যবসায়ী, কিছু গণমাধ্যম এবং কিছু গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিক নামধারী নেতা। এক মাসের বেশি সময় ধরে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা চালানো হচ্ছে অথচ আইনশৃংখলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বরতরা ঘুমিয়ে রয়েছেন। দুর্নীতিবাজ, বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী অপরাধীদের গ্রেফতার ও অপতৎপরতা ঠেকাতে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হলেও কার্যকর কোনো সুফল দেখা যাচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার আওয়ামী লীগ প্রীতি কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রখ্যাত দার্শনিক রাষ্ট্রচিন্তক কবি ফরহাদ মজহার সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন ‘উপদেষ্টা সরকারের আওয়ামী প্রীতি ও দুর্বলতা গভীর সন্দেহ তৈরি করছে যে আসলে আওয়ামী-ফ্যাসিস্ট শক্তি টিকিয়ে রাখা ও পুনর্বাসন করা তাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূস জাতিসংঘের অধিবেশনে নিউইয়র্ক গেলে বিশ্বের প্রভাবশালী নেতারা তার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। সংস্কার, রাষ্ট্র মেরামত, গতিহীন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাসহ সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দেন। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের অর্ধশত দিন পার হলেও এখনো প্রশাসনে ‘দিল্লির তাবেদার আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট’ ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব হয়নি। যারা নতুন করে দায়িত্ব পেয়েছেন এবং প্রশাসনে আগে থেকেই রয়ে গেছেন তাদের বেশির ভাগই যেন দেশ ও জনগণের স্বার্থের চেয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের স্বার্থের প্রতি বেশি নজর রাখছেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ গ্রহণের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে। কথাবার্তায় ‘আওয়ামী প্রেম’ প্রকাশ পাওয়ায় তাকে সরিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই দেড় মাসে তার অর্জন কি? গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে সীমান্তে দালালদের জনপ্রতি ২০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত দিয়ে দুর্নীতিবাজ, খুনি, লুটেরা সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা ভারতে পালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, শেখ হাসিনা রেজিমে আওয়ামী লীগ ভারতের মদতে সিভিল প্রশাসনে অলিখিতভাবে আমলা লীগ (এরা নির্বাচনে কাজ করেছে), আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীতে পুলিশ লীগ (এরা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত এবং কাজে যোগদান করেনি), ব্যবাসীয়দের মধ্যে এফবিসিসিআই লীগ, বিজিএমইএ লীগ, বিকেএমইএ লীগ, এমনকি পরিচ্ছন্নকর্মী লীগ পর্যন্ত তৈরি করেছিল। তারা শেখ হাসিনাকে খুশি করতে সবকিছুই করেছেন এবং বৈধ-অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। বিতর্কিত ওই ব্যক্তিরা গ্রেফতার না হওয়ায় তারা এখন দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার আঙ্গুলের নির্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের গতি মন্থর করার অপচেষ্টা করছেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনা লীগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত কিছু আমলাকে নিয়োগ বদলি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে একরাতে আমাদের ১০ লাখ লোককে হত্যা করা হবে।’ কিন্তু হাসিনা পালানোর পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সেটা হতে দেয়নি। হাসিনা পালনোর পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল নেতারা বিক্ষুব্ধ জনগণকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার নির্দেশনা দেন। ফলে গণহত্যায় হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হলেও বিক্ষুব্ধ জনতা ধৈর্য্য ধারণ করায় নতুন সরকার গঠনের ‘মধ্যবর্তী সময়ে’ তেমন প্রাণহানি ঘটেনি। ফলে এটার সাফল্য রাজনৈতিক দলগুলোর। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য কি? এখনো বিতর্কিতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পর যেসব পুলিশ সদস্য এখনও কাজে যোগ দেননি, তারা ‘ক্রিমিনাল’ (অপরাধী)। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ প্রশ্ন হচ্ছে এখনো আইনের আওতায় আনা হয়নি কেন? অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কাজ বক্তৃতা বিবৃতি দেয়া আর সেমিনার সিম্পোজিয়াম করা নয়। দায়িত্বশীল পদে বসলে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয়। মানুষের প্রত্যাশা ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হলে পিলখানায় ৫৭ সেনাকর্মকর্তা হত্যার ফাইল নড়াচড়া শুরু হবে। এ নিয়ে শহীদ সেনাকর্মকর্তাদের পরিবার থেকে দাবিও জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে রাতের আঁধারে গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। কোনোটিই দেখা যাচ্ছে না। গণহত্যায় অভিযুক্ত এবং বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড মামলার আসামী সাবেক মন্ত্রী-এমপি-বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা, সাবেক আমলা, পাতানো নির্বাচনের জনপ্রতিনিধিরা সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন পালিয়ে ভারত যাচ্ছে। তাদের পালানো ঠেকানো হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিতর্কিতদের পালাতে সহায়তা করছে।
সভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে গার্মেন্টসে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে প্রায় এক মাস ধরে। শ্রমিকের বেশ ধরে আওয়ামী লীগের এজেন্ট এবং হাসিনার তাবেদার মালিকরা ভারতের নীল নকশা বাস্তবায়নে গার্মেন্টসে সংকট জিইয়ে রাখছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে আগাম বার্তা দিচ্ছে না কেন? নাকি বার্তা দেয়া হলেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না? তারা কি হাসিনা পালানোর পর ড. ইউনূসের সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে ঘুমিয়ে রয়েছেন? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ কি? নাকি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে বসে ড. ইউনূসকে ব্যর্থ করতে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা হচ্ছে? শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে কাল্পনিক হত্যাচেষ্টার মামলায় শফিক রেহমানকে জামিন দিলেও একই মামলায় মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রখ্যাত ইউটিউবার ডা. পিনাকি ভট্টাচার্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে ভারতীয় তাবেদার রয়েছেন এবং তারা দিল্লির এজেন্ডা অনুযায়ী চলছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় ড. আসিফ নজরুলের দৌড়ঝাপ দেখেই বুঝেছিলাম ড. ইউনূসের সরকারের ভিতরে ভারতের এজেন্ট ঢুকে যাচ্ছে। এখন দিল্লি দেশী এজেন্টদের দিয়ে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। একই মামলায় একজনকে জামিন দিয়ে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর কারণ হচ্ছে মাহমুদুর রহমান ভারতের জন্য হুমকি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমান প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তবে এটা ঠিক ভারতীয় এজেন্টরা যতই চেষ্টা করুক ছাত্র-জনতা নিশ্চিত করেছে যে এ দেশে আর ভারতীয় আধিপত্য ফিরে আসবে না।
এদিকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্য আত্মগোপনে রয়েছে। বিশেষ করে গোপালগঞ্জি পুলিশ কর্তারা বিদেশে পালানোর ধান্দায় রয়েছেন। পুলিশ বাহিনীর ব্যর্থতার কারণে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি, গার্মেন্টস সেক্টরের বিশৃংখলা ঠেকাতে ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (দু’দিন আগে বিমান বাহিনী ও নৌ বাহিনীকেও একই ক্ষমতা দেয়া হয়)। কিন্তু ১৫ দিনে সেনাবাহিনীর অর্জন কি? উল্টো হাসিনা রেজিমে গুম হওয়া পরিবারগুলোর প্রতিবাদের প্ল্যাটফরম ‘মায়ের ডাক’ এর সংগঠক সানজিদা তুলির ভাই সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে ধরে সেনাক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তিন ঘণ্টা পর আবার ফিরিয়ে দেওয়ায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছে। কিন্তু সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। নেটিজেনদের অনেকেই সাজেদুল ইসলাম সুমনের ভাইকে সেনাবাহিনীর তুলে নিয়ে যাওয়া ভালভাবে নেননি।
ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) সর্বশেষ তথ্যানুসারে, দেশে বর্তমানে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ১১৪টি। এর মধ্যে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য ২ হাজার ৮৩১। আর এই দুই সংগঠনের সদস্য নয় এমন কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ২৮৩। পোশাক কারখানায় ৪০ লাখ শ্রমিকসহ প্রায় ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। গ্রামের ৩০ লাখ নারী শ্রমিক স্বাবলম্বী হয়ে আর্থিকভাবে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন পোশাক শিল্পে কাজ করে। গণতন্ত্র হত্যাকারী হাসিনা রেজিমে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পোশাক আমদানিকারক যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করলেও এখন তা ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জিএসপির পাশাপাশি আরো কিছু সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রফতানিমুখি এ শিল্পে কিছু মালিক রয়েছেন যারা হাসিনার তাবেদার হিসেবে চিহ্নিত এবং তারা গার্মেন্টস শিল্প থেকে আয়ের বড় অংশ দিয়ে কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, লন্ডন, দুবাই, সিংগাপুরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তাদের পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এদের কেউ কেউ ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিজের কারখানার শ্রমিকদের বেতন বন্ধ করে তাদের রাস্তায় আন্দোলনে নামার কৌশল নিয়েছেন। সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়ার গার্মেন্টস পল্লীতে দেখা যায় বেশির ভাগ কারখানায় উৎপাদন অব্যহত রয়েছে; কিন্তু কিছু কিছু কারখানার মালিকরা বেতন না দিয়ে হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে উস্কে দিচ্ছেন। শ্রমিকরা (মূলত শ্রমিকদের পোশাকে আওয়ামী সন্ত্রাসী) রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সে খবর দিল্লির তাবেদার এ দেশীয় কিছু গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করে বিশ্ববাসীকে শ্রমিক অসন্তোষের চিত্র দেখাচ্ছে।
গার্মেন্টস নিয়ে ভারতের নীল নকশার প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের তৈরি পোশাক খাতে যে অস্থিরতা চলছে, তা ‘পতিত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী মালিকদের পরিকল্পিত চক্রান্ত’। শুধু গার্মেন্টসে নয়, যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে একটা তুচ্ছ ঘটনাকে নিয়ে একটা বড় ঘটনা হল। প্রকৃত স্বৈরাচারের দুষ্ট চক্র প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জায়গায় তারা সুতার টান দিচ্ছে এবং একটার পর একটা ঘটনা তারা এখানে ঘটাচ্ছে। কৃত্রিমভাবে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করতে শেখ হাসিনার অত্যন্ত সুবিধাভোগী গার্মেন্টসের মালিকরা গার্মেন্টস পল্লীতে গণ্ডগোল পাকানোর ক্ষেত্র তৈরি করছে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেছেন, বহিরাগতরা নিখোঁজের গুজব রটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করছে। কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা অসন্তুষ্ট। সময়মতো আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা মিলছে না। আমরা নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন