বন্দরনগরীর জলাবদ্ধতা ‘নিরসনে’ আগামী বর্ষার আগে খাল-নালা পরিস্কারসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ সরকারের কাছে ২৯৮ কোটি টাকা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের বড় কবরস্থান সংলগ্ন কৃষিখাল খনন কাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব জানান চসিক মেয়র।বর্ষার আগে জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিকের পদক্ষেপের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগে আমরা দুটি প্রকল্প দিয়েছি। একটা হচ্ছে থোক বরাদ্দের মাধ্যমে ড্রেন ও খাল পরিষ্কার করা। কারণ আমাদের তো ওই পরিমাণ বাজেট নেই। ওই বাজেটটা ১০০ কোটি টাকা আমরা চেয়েছি। আরেকটা হচ্ছে, যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প।’ তবে বরাদ্দ পাবার ক্ষেত্রে ধীরগতি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সামান্য ৩০০ কোটি টাকার বাজেট চেয়েছি। সেগুলোতে এত বেশি ধীরগতি, এত বেশি প্রবলেম হচ্ছে সেটা আমাদের জন্য অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। এখন নিজস্ব অর্থায়নে আমরা খাল নালা পরিষ্কার করছি। যে টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স হিসেবে পাচ্ছি, সেখান থেকে। হোল্ডিং ট্যাক্সগুলোও ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না।’
সিডিএর প্রকল্পে আদৌ জলাবদ্ধতা নিরসন হবে কি না সংশয় প্রকাশ করে মেয়র বলেন, ‘শুরু থেকে ৫৭টি খালকে অ্যাড্রেস করে যদি আমরা কাজ করতে পারতাম তাহলে শতভাগ না হলেও ৯০ ভাগ জলাবদ্ধতা নিরসন হতো। কিন্তু ৩৬টি খাল করার কারণে ৫০-৬০ ভাগ জলাবদ্ধতা নিরসন হবে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।’ বাকলিয়া কৃষিখাল খননের প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘বর্ষাকালে বহদ্দারহাট-বাকলিয়ায় সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা হয়। এজন্য কৃষিখাল খনন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মেয়র হওয়ার পর তিন-চারদিনের মধ্যেই এই খাল পরিস্কার করার উদ্যোগ নিই। কিন্তু আজ এখানে এসে দেখছি আবারও খাল ময়লায় ভরে গেছে। তাই এখন ৯০০ ফুটের খালটি পরিষ্কার করবো। খালটি যদি পরিষ্কার হয় সেটা বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও এলাকায় বর্ষায় যে জলাবদ্ধতা হয়, সেটার পানিগুলো নেমে চাক্তাই খালে পড়বে এবং সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীতে চলে যাবে। শুধুমাত্র এ খালটা নয় আমরা যে ৩৬টা খাল সিডিএর প্রকল্পের অধীনে আছে এর বাইরে যে ২১টি খাল রয়ে গেছে, এই ২১টা খাল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পরিস্কার করব। আমরা চাই এ শহর আমাদের সবার, তাই সবাই মিলে এ শহরকে আমরা সুন্দর রাখব। এই খাল দিয়ে এক সময় পণ্য পরিবহণ করতো, মানুষ সাঁতার কাটতো। এ খাল পুনঃখনন করে আমরা খালের স্বাভাবিক জলপ্রবাহ ফিরিয়ে দিতে চাই।’এ সময় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ দুটি, সিটি করপোরেশন একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চার প্রকল্পে মোট ব্যয় প্রায় ১৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক আট হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৭৫ শতাংশ। এর বাইরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় বারইপাড়া নামে একটি খাল খনন করছে। এ অবস্থায় গত ১৯ জানুয়ারি তিন উপদেষ্টা চট্টগ্রামে সমন্বয় সভা করে জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রমে ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা দিয়ে বাস্তবায়নের জন্য চার মাস সময় বেঁধে দেন।