Image description
 
দেশে গ্যাস খাতের কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ পাওনা অর্থ গ্রাহকের কাছে আটকে রয়েছে। পেট্রোবাংলার সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, এর পরিমাণ ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
দেশে গ্যাস খাতের কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ পাওনা অর্থ গ্রাহকের কাছে আটকে রয়েছে। পেট্রোবাংলার সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, এর পরিমাণ ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ বকেয়ার সঙ্গে কোম্পানিগুলোর আর্থিক চাপকে আরো বাড়িয়ে তুলছে গ্যাসের সিস্টেম লস ও চুরি। এর মধ্যেই রাজস্ব আয়ের বড় একটি অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে। আবার একই সঙ্গে বাড়ছে উচ্চমূল্যে আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভরতা। পতিত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রকট হয়ে ওঠা গ্যাস খাতের এ অদক্ষতা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও একই ধারায় রয়েছে। আর চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে এর খেসারত দিতে হচ্ছে ভোক্তাকে। কিন্তু উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত নানা পর্যায়ের এমন লোকসান-অসংগতি আর অপচয়কে এড়িয়ে আবারো গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে বারবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা দেশের অর্থনীতিকে আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর খাতটির অদক্ষতা ও অনিয়ম দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনাকে আরো জটিল করে তুলেছে। অভ্যুত্থানের পর গ্যাসসহ সার্বিক জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তা পূরণ হয়নি। বরং দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও আমলাতান্ত্রিকতাকে সঙ্গে নিয়ে বিগত সরকারের দেখানো পথে পরিচালিত হচ্ছে দেশের গ্যাস খাত।যদিও জ্বালানি বিভাগ বলছে, গ্যাস খাতে সিস্টেম লস, বকেয়া আদায় ও এ খাতের দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সরকার বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে আগামীতে বকেয়া ও সিস্টেম লস কমে আসার পাশাপাশি গ্যাসের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গ্যাস খাতের বকেয়া আদায়, সিস্টেম লস, চুরি এগুলো আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। গ্যাসের সিস্টেম লস কমাতে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পয়েন্টে মিটার বসিয়েছে। এগুলো কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। বকেয়া আদায়, সিস্টেম লস, চুরি এগুলো তাৎক্ষণিকভাবে কমিয়ে আনা কঠিন। এগুলো জোরালো তদারকির মাধ্যমে আমরা যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

 

গ্যাস খাতের অদক্ষতা দূর না করে কোম্পানিগুলোর নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে না। নতুন শিল্প ও লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমদানীকৃত গ্যাসের মূল্য দিতে হবে। কিন্তু যেসব শিল্পে সংযোগ বিদ্যমান রয়েছে, তাদের গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত থাকছে। এছাড়া সরকার গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে না। আগের সরকার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নিজের হাতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা নিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে বিইআরসির ক্ষমতা পুনরায় ফিরিয়ে দিয়েছে। এটা তারা গণশুনানির মাধ্যমে যৌক্তিক মনে করলে করবে।’বিল হিসেবে পাওনা বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া পড়ে যাওয়ায় গ্যাস কোম্পানিগুলোর অর্থের সংকট বেড়েছে। আটকে থাকা এ পাওনার পরিমাণ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল ৩৮ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে গ্যাস কোম্পানিগুলোর পাওনা বকেয়া বেড়েছে ১২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা।

 

পেট্রোবাংলার হিসাবে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওনা আটকে আছে বিতরণ সংস্থা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (টিজিটিডিসিএল), যার পরিমাণ ১৫ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। যদিও তিতাস বলছে, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্যের কথা উদ্ধৃত করে তিতাস কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের গ্রাহকদের পাওনা বকেয়া এখন ১২ হাজার কোটি টাকার মতো। আর কোম্পানিটির সিস্টেম লস এখন ১১ শতাংশের কাছাকাছি। গ্যাস খাতে গ্যাস চুরি, অপচয় ও সিস্টেম লস তিতাসেরই সবচেয়ে বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে।তিতাসের চলতি ২০২৪-২৫ হিসাব বছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, এ সময়ে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ১৭ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। যদিও এর বিপরীতে কোম্পানিটির ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। এতে ৩২৯ কোটি টাকা গ্রস লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ১৭১ কোটি টাকা গ্রস মুনাফা হয়েছিল।

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে টিজিটিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তিতাসের বকেয়া সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাছে। আমরা অব্যাহতভাবে এ বকেয়া আদায় মনিটরিং করছি। এছাড়া তিতাসের আওতাধীন গ্যাসের অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান চলমান রয়েছে। এগুলো তিতাসের চুরি যাওয়া গ্যাস উদ্ধারে সহায়তা করছে। এছাড়া গ্যাসের ছিদ্র ও পুরনো লাইনে ২ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে। এগুলো নতুন করে স্থাপনে প্রকল্প নিচ্ছে তিতাস। তবে অবৈধ গ্যাস সংযোগে তিতাস জোরালো অভিযান ও মিটারবিহীন গ্রাহক কমানো গেলে এ অদক্ষতা কমে আসবে।’অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর বকেয়াও কম নয়। বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডের পাওনা আটকে আছে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ২ হাজার ৮০৭ কোটি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডের ৬ হাজার ৩০০ কোটি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) ১ হাজার ৭৪৬ কোটি, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) ১ হাজার ৫৫ কোটি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ১ হাজার ১৪১ কোটি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস ফিল্ডের ১ হাজার ৭৬৪ কোটি, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ১ হাজার ৬৯৯ কোটি, বাপেক্সের ১ হাজার ৪৩৫ কোটি ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ৫৪ কোটি টাকা পাওনা গ্রাহকদের কাছে আটকে আছে।

 

দেশের গ্যাস খাতে অদক্ষতার সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে দেখা হয় বিপুল পরিমাণ সিস্টেম লসকে। বৈশ্বিক মান অনুযায়ী, গ্যাসের গ্রহণযোগ্য সিস্টেম লসের মাত্রা দশমিক ২০ থেকে দশমিক ৩০ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিস্টেম লস ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত। গড়ে তা ১০ শতাংশের মতো। বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিস্টেম লস তিতাসের। গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তিতাস গ্যাসের ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ সিস্টেম লস হয়েছে, যেখানে এর অনুমোদিত সীমা ২ শতাংশ। চলতি হিসাব বছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে কোম্পানিটির ৭১১ কোটি টাকা করপরবর্তী লোকসান গুনেছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে প্রায় ৪৭ কোটি টাকা করপরবর্তী মুনাফা হয়েছিল কোম্পানিটির। মূলত সিস্টেম লস বাড়ার পাশাপাশি কর আইনে পরিবর্তন আসার কারণে এ লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিস্টেম লসের নামে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে। সিস্টেম লসে যে পরিমাণ গ্যাস নষ্ট ও চুরি হয়ে যাচ্ছে তার মূল্য অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার।

 

সিস্টেম লসের পাশাপাশি তিতাসের বিপুল পরিমাণ গ্যাস অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে চুরি হয়ে যাচ্ছে। এ চুরি বিতরণ কোম্পানিগুলোর যোগসাজশে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর শিল্প এলাকা এবং শিল্প অঞ্চল গাজীপুর, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, সাভারসহ মানিকগঞ্জ এলাকায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সংযোগ নিয়ে গ্রাহকরা গ্যাস ব্যবহার করছে। এসব গ্রাহক বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কোনো অর্থ দিচ্ছে না। আবার এসব অর্থ আদায় করার জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কোম্পানিগুলোর নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করেছে। তাতে একদিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও অন্যদিকে পুনরায় সেই সংযোগ জোড়া লেগেছে।গ্যাস খাতের অর্থ আদায় করতে না পারা এবং গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি না হওয়ায় বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে জ্বালানি বিভাগকে। এরপর তা জাতীয় গ্রিডে স্থানীয় গ্যাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিক্রি হচ্ছে ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম দামে। এ ঘাটতি পূরণে গ্যাস খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। যদিও শুধু সিস্টেম লস ও চুরি কমিয়েই গ্যাস খাতে আমদানি-নির্ভরতা ও ভর্তুকির প্রয়োজনীয়তা—দুটোই কমানো যেত বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। চলতি অর্থবছরে গ্যাস খাতে ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি লাগবে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা, যা আগের অর্থবছরগুলোয় ছিল গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকি লাগে প্রায় তিন গুণ।

 

গ্যাস খাতের বিতরণ কোম্পানিগুলো এখন পরিচালন তহবিল নিয়ে অর্থ সংকটে পড়েছে। তাদের গ্যাস বিক্রি বাবদ আয়ের বড় অংশই চলে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে, যা কোম্পানিগুলোর আর্থিক চাপকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিতরণ কোম্পানিগুলো ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে। এর মধ্যে তিতাস ১৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা, বিজিএফসিএল ২০০ কোটি ৭০ লাখ, পেট্রোবাংলা ১ হাজার ২৯২ কোটি ৫৪ লাখ ও সিলেট গ্যাস ফিল্ড ১২৬ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে অন্যান্য কোম্পানিও।দেশের একমাত্র সঞ্চালন কোম্পানি হিসেবে কাজ করছে জিটিসিএল। এটিই কোম্পানিটির একমাত্র ব্যবসা। এ খাত থেকে আয় দিয়ে কোম্পানি পরিচালনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে কোম্পানিটি টানা লোকসান করে যাচ্ছে। পেট্রোবাংলার হিসেবে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জিটিসিএলের ক্রমপুঞ্জিত লোকসান ১৫৬ কোটি টাকা। দীর্ঘ সময় কোম্পানি লোকসান না করলেও অব্যাহতভাবে কয়েক বছর ধরে লোকসান করে যাচ্ছে। জিটিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, জিটিসিএলের ওপর সিস্টেম লস চাপিয়ে দেয়া ও সঞ্চালন চার্জ বৃদ্ধি না করায় কোম্পানিটি লোকসানে পড়েছে।

 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গ্যাস কোম্পানিগুলোর সিস্টেম লস ও চুরি যাওয়া গ্যাসের অর্থমূল্য বিপুল। আসলে এগুলো গ্যাস খাতের অদক্ষতারই বহিঃপ্রকাশ। এগুলো ঠিক হওয়া দরকার। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জোরালো সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। এভাবে চলতে থাকলে গ্যাস খাতে কোনোদিকেই সুবিধা করতে পারবে না সরকার। দাম বাড়ানো কেন প্রয়োজন, এর পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর দক্ষতা কেমন, সেগুলোকেও জবাবহিদিতার আওতায় আনতে হবে।’বর্তমানে গ্যাস কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বাড়ানোর জোর প্রয়াস চালাচ্ছে। আবার কোম্পানিগুলো ব্যাংকে বিভিন্ন মেয়াদি ও তলবি আমানতে (এসএনডি) অর্থ জমা রেখে আয়ও করছে। এ অর্থের হিসাব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সাধারণত এ আয় ‘বিবিধ’ হিসাবে দেখানো হয়। পেট্রোবাংলার হিসেবে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংস্থাটির অধীন ১৩টি কোম্পানির বিবিধ খাতে আয় ছিল ৮০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

 

দীর্ঘ দুই যুগ ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্সকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময় অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ কোম্পানিটিকে না দিয়ে উচ্চমূল্যে বিদেশী কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। বাপেক্সের মাধ্যমে গ্যাসকূপ খননে গড়ে যেখানে ৮০-১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়, সেখানে বিদেশী কোম্পানি দিয়ে গড়ে ২০০-২২০ কোটি টাকা ব্যয় করানো হয়েছে। এতে কূপ খননের খরচ বেড়ে গ্যাসের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। আর বাপেক্সের রিগ বসিয়ে রেখে এর ভাড়া বাবদ ব্যয় ও আর্থিক অদক্ষতা দুটোকেই বাড়িয়ে তোলা হয়েছে।গ্যাসের লোকসান ও সিস্টেম লস কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গ্যাস খাতের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য জ্বালানি বিভাগ স্বল্প, দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে দুই বছরে ৩১টি কূপের ওয়ার্কওভার করা হয়েছে। সিস্টেম লস যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা হচ্ছে। তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানির সবচেয়ে বেশি সিস্টেম লস হচ্ছে। এছাড়া পাইপলাইনে বিপুল পরিমাণ লিকেজ রয়েছে। এগুলো সংস্কার ও মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্যাসের চুরি ও সিস্টেম লস কমাতে জোনভিত্তিক ম্যাপিং করা হয়েছে। এতে সিস্টেম লস কমিয়ে আনার টার্গেট দেয়া হয়েছে। এগুলো কমানো গেলে গ্যাস খাতের গতি ফিরে আসবে।’