চব্বিশের অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ২০২৫ সাল এসেছিল ‘সব কিছু’ ঢেলে সাজানোর সুযোগ নিয়ে, সেই প্রত্যাশার পূরণ হয়েছে সামান্যই। ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে যে জুলাই সনদের জন্ম হয়েছে, তার বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষা থাকবে ২০২৬ সালেও।
গেল বছর রাজনীতির অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ দেখেছে বাংলাদেশ। টানা ১৫ বছর দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত হয়েছে। ফলে আগামী নির্বাচনে নৌকা থাকছে অনুপস্থিত। গত দুই মেয়াদে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টি ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা নিয়ে এখন অনেকটাই একঘরে।
আওয়ামী লীগ আমলে চাপে থাকা বিএনপি এখন ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর। আর তাদের একসময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী এখন বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ভোটের মাঠে টক্কর দিচ্ছে।
অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল নতুন রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার যে সম্ভাবনা জাগিয়েছিল, আপাতত তা জামায়াতের সঙ্গে জোটের বাস্তবতায় বিলীন হয়ে গেছে।
ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনা ভোটের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ জাগিয়েছে। নির্বাসন ভেঙে তারেক রহমানের ফেরা উপলক্ষে বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে জনসমর্থনের জানান দিয়েছে বিএনপি।
বছরের শেষে এসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি যুগের অবসান ঘটেছে। অন্যদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাথার ওপর ঝুলেছে মৃত্যুদণ্ডের খাঁড়া, যদিও তাকে ভারত থেকে দেশে ফেরানোর কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়নি।
ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন চলছেই। ভিসা এখনো সহজ হয়নি। পাল্টাপাল্টি তলবের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার।
চব্বিশে মব সন্ত্রাসের যে উত্থান দেখা গিয়েছিল, ২০২৫ সালে তার বাড়-বাড়ন্ত হয়েছে। হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ থেকে রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যম, সাংস্কৃতিক সংগঠন। ইতিহাস বিজড়িত ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের আন্দোলন চলেছে বছরজুড়ে, রাজপথে এবার কঠোর হয়েছে পুলিশ। এনবিআরের আন্দোলন নিয়ে রীতিমত তুলকালাম হয়েছে।
মাঝারি মাত্রার এক ভূমিকম্প বাংলাদেশকে বড় বিপদের সতর্কবার্তা দিয়ে গেছে এ বছর। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। প্রতিবারের মতই দুর্যোগে দুর্বিপাকে দেখতে হয়েছে মৃত্যু।
বাংলাদেশ ২০২৬ সালে প্রবেশ করছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেনে চড়ে; এই ট্রেন গণতন্ত্রের স্টেশনে পৌঁছে দেবে বলে আশায় আছে মানুষ।
ক্ষমতার চূড়া থেকে ফাঁসির আসামি
চব্বিশের অভ্যুত্থান বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের শেখ হাসিনাকে পাঠিয়েছিল নির্বাসনে। আর পঁচিশ তাকে ‘পলাতক ফাঁসির আসামি’র তকমা দিয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৭ নভেম্বর প্রাণদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম কোনো সরকারপ্রধানের মাথার উপর মৃত্যুদণ্ডের খাড়া ঝুলল।
হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালেরও একই সাজা হয়েছে। অভ্যুত্থানের সময় পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে দেওয়া হয়েছে ৫ বছরের সাজার লঘুদণ্ড।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা চলে যান ভারতে। তাকে ফেরত চেয়ে দিল্লির কাছে দুই দফায় আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। দিল্লির এমন অবস্থানের কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতির রায় কার্যকরের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।
ওই রায়ের পর শেখ হাসিনা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি কিংবা তার দলকে আত্মপক্ষ সমর্থনের ‘ন্যায্য সুযোগ’ দেওয়া হয়নি।
জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পূর্বাচলে রাজউকের প্লট দুর্নীতির ছয়টি মামলায় হয়েছে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে চারটি মামলার রায় হয়েছে। তাতে শেখ হাসিনার মোট ২৬ বছর, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শেখ রেহানার সাত বছরের কারাদণ্ড, তার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের দুই বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
এর রায়কে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘প্রতিহিংসা’ হিসেবে বর্ণনা করে টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন, পুরো বিচারপ্রক্রিয়াটি ছিল ‘বিশৃঙ্খল, হাস্যকর ও প্রহসনমূলক’।
বিদায় ‘আপসহীন নেত্রী’
পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছেন যে দুজন নেত্রী, তাদের একজন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ বছর চিরবিদায় নিলেন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ‘আপসহীন নেত্রী’ হয়ে ওঠা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের বড় সময় কেটেছে আন্দোলনে আন্দোলনে। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছেন; তবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কখনো তিনি হারেননি।
চার দশকের বেশি সময় তিনি বাংলাদেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিন দফায় দশ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করেছেন। এমপি হয়ে সংসদে গেছেন পাঁচবার, নির্বাচনে কখনো হারেননি।
আওয়ামী লীগ আমলে দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে খালেদা জিয়াকে পাঠানো হয়েছিল কারাগারে। ২০২০ সালে মহামারীর মধ্যে তাকে সাময়িক মুক্তি দিয়েছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘সত্যিকারের মুক্তি’র সুযোগ এনে দেয়। আদালতও তাকে সব মামলার দায় থেকে খালাস দেয়।
কিন্তু দীর্ঘ অসুস্থতা তাকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দেয়নি। বছরের শেষে এসে তার মৃত্যুশোক নাড়িয়ে দিয়ে যায় বিএনপি নেতা, কর্মী আর সমর্থকদের।
এ বছরের শুরুতে লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। মে মাসে দেশে ফেরার পর আগের চেয়ে ভালোই ছিলেন। তবে নাজুক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির কারণে তার সময় কাটছিল বাসায়, চার দেয়ালের ভেতরে।
পুরো বছরে কেবল একবারই তাকে প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়। ২১ নভেম্বর সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বসেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে।
দুই দিনের মাথায় খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর তার ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিলে কেবিন থেকে স্থানান্তর করা হয় ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে’।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ঢাকাতেই তার চিকিৎসা চলে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করে এসএসএফ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
তার বড় ছেলে তারেক রহমান ১৭ বছরের নির্বাসন ভেঙে দেশে ফেরেন ২৫ ডিসেম্বর। সেদিনই তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান মাকে দেখতে।
২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার অবস্থার অবিনতি হলে তারেক রহমান এবং পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে যান। ৩০ ডিসেম্বর ভোরে চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
বছরের শেষ দিন জাতীয় সংসদ ভবনের মাঠের জানাজায় লাখো জনতা খালেদা জিয়াকে শেষ বিদায় জানায়।
‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান’
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের ফলে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও দেশে ফেরার পথ খোলে। যেসব মামলায় সাজা হয়েছিল, আদালতও তাকে সেসব অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।
২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসনে থাকা তারেক কবে দেশে ফিরছেন, বছরজুড়ে সেই আলোচনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু তার ফেরা হচ্ছিল না।
এর মধ্যে জুন মাসে লন্ডন সফরে যান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনের সময় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিএনপির অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে ১৩ জুন তারেক রহমানের সঙ্গে তার বৈঠক হয়।
পরে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, রোজার আগে। সেই ঘোষণার পথ ধরে ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে ইতোমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
তার আগেই বিএনপি নির্বাচনের আংশিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। জানানো হয়, বগুড়া-৬ আসনে প্রথমবারের মত ভোট করবেন তারেক। ওই ঘোষণার পর তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা জোরালো হয়।
২৩ নভেম্বর ফের অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ অবস্থায় তার ছেলে তারেক কেন ফিরছেন না, সেই প্রশ্ন আবার সামনে আসে।
২৯ নভেম্বর তারেক রহমানের এক বক্তব্যের পর পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়। এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “এমন সঙ্কটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যে কোনো সন্তানের মত আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সকলের মত এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।”
তার এমন বক্তব্যের পর সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই। তিনি দেশে ফিরতে চাইলে সহযোগিতার আশ্বাসও আসে একাধিক উপদেষ্টার কণ্ঠে।
শেষ পর্যন্ত ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দেশে ফেরেন তারেক। সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের বিপুল সংবর্ধনার মধ্যে তিনি বলেন, “আই হ্যাভ আ প্ল্যান।”
জ্বলে উঠে নিভে গেলেন হাদি
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক পরদিন, ১২ ডিসেম্বর ভোটের প্রচারে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান বিন হাদি।
চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়।
গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন রাখার পর সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে মারা যান হাদি। তার মৃত্যুতে ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়।
ওইদিন জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় হাদির জানাজা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে তাকে দাফন করা হয়।
২০২৪ সালে জুলাই-অগাস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা হাদি সেই আন্দালনের অনুপ্রেরণায় গড়ে তোলেন সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চ।
হাদিকে গুলির পর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এক সপ্তাহ পর সিঙ্গাপুরে তার মৃত্যুর পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ।
ওই রাতে রাজধানীর শাহবাগে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীর প্রতিবাদের মধ্যে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা কার্যালয়ে ভাংচুর, লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে তছনছ করা হয় ধানমণ্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনও।
শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যায় মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের বিভিন্ন ছবি-ভিডিও প্রকাশ পেলেও এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতায় পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
ইতিহাসের সাক্ষী বত্রিশে বুলডোজার
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার ছয় মাস পূর্তির দিন, এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভাঙা হয়। ভারতে থেকে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যকে ভাঙার কারণ হিসাবে দেখানো হয়।
ওই বাড়ি ঘিরে হাজার তিনেক মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে সেদিন রাত পৌনে ১১টার দিকে সেখানে একটি ক্রেইন পৌঁছায়। মানুষের উল্লাসধ্বনির মধ্যে সেটি মূল সড়ক থেকে ৩২ নম্বরের সড়কে ঢোকে। ক্রেইনে ওপরে উঠে স্লোগান দিতে থাকেন অনেকে। পরে আসে একটি এক্সক্যাভেটর।
রাত সোয়া ১১টার দিকে ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। ঘণ্টাখানের মধ্যে ভেঙে ফেলা হয় তিন তলা বাড়ির একটি অংশ।
মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা একবার ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটির সামনে গেলে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান তোলে ছাত্র-জনতা। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখান থেকে সরে যায় সেনাবাহিনী।
গভীর রাতে মাইকে গান ছেড়ে একদল মানুষকে সেখানে নাচতেও দেখা যায়। সারা রাত ধরে বাড়িটি ভেঙে অর্ধেকের বেশি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার দিন ওই বাড়ির অবশিষ্টাংশ ভাঙতে পুনরায় বুলডোজার নেওয়া হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর ১৮ ডিসেম্বরও ৩২ এর ওই ভাঙা বাড়িতে ফের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে একদল বিক্ষোভকারী।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, জাতীয় পার্টি একঘরে
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। ওই দাবিতে জোরালো আন্দোলনের মধ্যে গত ১২ মে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সব কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
অভ্যুত্থান দমাতে ‘গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ এবং ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারার আওতায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এর অর্থ হল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ আপাতত কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি বা প্রচার চালাতে পারবে না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দলটির নিবন্ধনও বাতিল হয়ে যায়। সে কারণে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণের সুযোগও বন্ধ হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দলের শরীকদের পাশাপাশি ‘একতরফা ও বিতর্কিত’ নির্বাচনে বিরোধীদলের আসনে বসা জাতীয় পার্টিও কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এর মধ্যে সাবেক সামরিক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া দলটি আবারও ভাঙন ধরে।
এরশাদের ভাই জিএম কাদেরের নেতৃত্বে একটি গ্রুপের বিপরীতে আরেকটা জাতীয় পার্টি গড়ে উঠেছে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে। আনিসুল ইসলাম মাহমুদরা ১৮টি দল নিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন। পৃথকভাবে ভোটে থাকার চেষ্টায় আছে জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টিও।
তবে রাজনৈতিকভাবে তারা অনেকটাই একঘরে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বা নির্বাচন কমিশন তাদের কোনো বৈঠকে ডাকেনি। ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতে গিয়েও জাতীয় পার্টি বাধার মুখে পড়েছে।
৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নি-সংযোগ করে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। তাতে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয়ের পাঁচতলা ভবনের নিচের দুটি তলা অনেকটা পুড়ে যায়।
ফের আক্রান্ত সংবাদমাধ্যম
চব্বিশের অভ্যুত্থানের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভির পাশাপাশি একাত্তার টেলিভিশন, সময় টেলিভিশন, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজসহ কয়েকটি টেলিভিশন স্টেশনে হামলা ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। দেড় বছরের মাথায় আবার দুটো সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় আক্রান্ত হয়েছে এ বছর।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ১৮ ডিসেম্বর রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ডেইলি স্টার কার্যালয়ের নিচে আগুন দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের ২৮ জন কর্মী ছাদে আটক পড়েন। তাদেরকে উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীর।
এ ঘটনাকে ‘গণমাধ্যমের জন্য কালো দিন’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায় দেশি-বেশি বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে একযোগ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে সম্পাদক পরিষদ এবং নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।
ওই হামলায় জড়িত হিসাবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩১ জনকে ভিডিও দেখে শনাক্ত এবং ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ।
আক্রান্ত ছায়ানট, উদীচীতে আগুন
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্ববায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবরে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ছায়ানট ভবনে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করা ১৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে; দেওয়া হয় আগুন।
৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে এসে হামলা করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। প্রথমে পার্কিং লটের দিকে আগুন দেওয়া হয়। পরে তারা ভবনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
এ সময় হামলাকারীরা ‘ভারতের দালাল’, ‘ভুয়া’,’ নারায়ে তাকবীর’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘ভাঙো’ এসব স্লোগান দেয়। প্রয়াত সন্জীদা খাতুনের প্রতিকৃতি কেটে নষ্ট করার সময় ‘নাস্তিক’ বলে সম্বোধন করে।
হামলাকারীর মিলনায়তনে যা পেয়েছে, সেটাই ভেঙেছে। তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পোড়ানোর পাশাপাশি ও তছনছ করা হয় বই, কাগজপত্র।
পুরো মনিটরিং সিস্টেম, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, স্পিকার, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয় ওই রাতে। সেখানে থাকা মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্প কর্ম, কক্ষ ও অফিস রুমের বেশিরভাগ আসবাব ভেঙে ফেলা হয়।
বাদ যায়নি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষও। তাদের কক্ষের আলমারির গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। চেয়ার-টেবিল ভেঙেচুড়ে ওলট পালট করা হয়েছে। রমেশ চন্দ্র স্মৃতি মিলনায়তন, মূল মিলনায়তনসহ, শৌচাগারও রেহাই পায়নি ভাঙচুরের তাণ্ডব থেকে। হামলাকারীরা সেখান থেকে বাদ্যযন্ত্রসহ নানা ধরনের সামগ্রী লুটপাটও করে।
ছায়ানটে এই তাণ্ডবের পরদিন সন্ধ্যায় তোপখানা রোডে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছে উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠন।
গোপালগঞ্জে সংঘাত
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতাকর্মীদের কর্মসূচি ঘিরে শেখ হাসিনার জেলা গোপালগঞ্জে ১৬ জুলাই দিনভর দফায় দফায় হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় চারজনের প্রাণহানি হয়।
সারাদেশে এনসিপির জুলাই পদযাত্রার মধ্যে ডাকা ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে ‘ফ্যাসিস্ট মুজিববাদীরা’ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন এনসিপি নেতারা।
ওইদিন এনসিপি নেতাকর্মীরা শহরের পৌর পার্ক মাঠে কর্মসূচি শুরুর আগেই সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে আগুন ও ইউএনওর গাড়িতে হামলা হয়।
এনসিপি নেতারা শহরে ঢোকার পরের পরিস্থিতি সামলাতে সাজোঁয়া যান নিয়ে নামতে হয় সেনা সদস্যদের। ছিল বিজিবির চার প্লাটুন সদস্য।
সকালে শহরের উলপুর ও টেকেরহাটে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনার পর বেলা দেড়টার দিকে পৌর পার্কের সমাবেশ মঞ্চে হামলা হয়।
কিছুক্ষণ পর মঞ্চে ফিরে কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে পুলিশ ও সেনা পাহারায় মাদারীপুরের দিকে রওনা দিলে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা লঞ্চঘাট এলাকায় হামলার মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
হাতবোমা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের বিকট শব্দ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। মানুষের চলাচলও সীমিত হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিকালে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তাতেও কাজ না হলে সন্ধ্যার পর জারি করা হয় কারফিউ।
সংঘর্ষের পর অন্তত চারজনের লাশ গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আনার খবর আসে। আহত আরও ১৫ জনকে আনার তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর করতে হয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুতেরেসের ইফতার
নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ১৪ মার্চ ইফতার আয়োজনে যোগ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
কক্সবাজার সফরে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন।
উখিয়ায় আশ্রয় শিবিরের ২০ নম্বর ক্যাম্পে ওই আয়োজনে যোগ দিয়ে গুতেরেস বলেন, “শেষমেষ মিয়ানমারেই সমাধান পেতে হবে আমাদের। এখানে থাকা সব শরণার্থীর স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না।”
কেবল মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা কমানো হলে তা ‘নিয়ন্ত্রণহীন দুর্যোগে’ পরিণত হতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।
লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে শরিক হয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন ইউনূস, যা রোহিঙ্গাদের কাছেও সহজবোধ্য।
রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আল্লার হাছে দোয়া গরি, সামনর ঈদত যেন অনারা নিজর বাড়িত যাইয়েরে ঈদ গরিন ফারন।”
মব সন্ত্রাস বছরজুড়ে
চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর ‘মব’ করে হেনস্তা, হামলা, ভাঙচুরের যে উদ্বেগজনক প্রবণতার সূচনা হয়েছিল, ২০২৫ সালে তা ব্যাপক মাত্রা পেয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে সারাদেশে সারা বছর একের পর এক মব সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। মবকারীদের ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসাবে বর্ণনা করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মব তৈরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে আর প্রতিবাদ বিক্ষোভ চালিয়ে অনেককে পদত্যাগ করানোর ঘটনাও ঘটেছে।
শরিয়ত বিরোধী কবর দেওয়ার অভিযোগ তুলে ৫ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা চালায় ‘তৌহিদি জনতা’ ব্যানারধারীরা।
এ সময় সংঘর্ষে রাসেল মোল্লা নামে নুরুল পাগলের এক ভক্ত নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।
হামলাকারীরা একপর্যায়ে নুরাল পাগলার কবর খুঁড়ে লাশ তুলে মহাসড়কের উপর এনে পুড়িয়ে দেয়। পরে নুরাল পাগলের বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। হামলা হয় পুলিশের ওপরও।
পরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।
একইভাবে নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা মো. আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে চার থেকে সাড়ে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ওই দুটি মামলায় অন্তত ২৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা সে সময় জানিয়েছিল পুলিশ।
সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকায় ‘পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানির’ শ্রমিক ২৮ বছর বয়সী দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এরপর তার লাশ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে রাত আড়াইটার দিকে আধাপোড়া মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
দিপু তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। দুই বছর ধরে তিনি এই কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। দীপুকে কোম্পানির ইনচার্জ জনতার হাতে তুলে দেন বলে জানিয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, দীপুর 'ধর্ম অবমাননা'র কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ তারা পায়নি।
দিপু হত্যার ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার; ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ।
বহু চর্চিত জুলাই সনদ
রাষ্ট্র সংস্কারের যাত্রায় এ বছর ১৭টি বিষয়ে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৮৪ দফার জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন; বাকি ৬৭টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ বিরোধিতা করেছে এবং দিয়েছে নোট অব ডিসেন্ট।
১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং ২৪টি রাজনৈতিক দল এই সনদে সই করে। কিন্তু জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তার সুপারিশ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে করবে বলে জানানো হয়।
এরপর ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন। সেখানে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সম্মতি নেওয়ার কথা বলা হয়।
ঐকমত্য কমিশনের তৈরি করা বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ায় স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্ট না থাকায় তীব্র আপত্তি জানায় বিএনপি। আর, জাতীয় ভোটের আগে গণভোট আয়োজন এবং সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায় জামায়াত ইসলামীসহ আট দল।
রাজনৈতিক মতভিন্নতার মধ্যে ১৩ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ (বাস্তবায়ন) আদেশ চূড়ান্ত করার ঘোষণা দেন। ওই ভাষণে জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। আর গণভোটের প্রশ্নে চারটি অংশ রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ মেটানো হয়।
ভোটের অপেক্ষা
আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের দিন রেখে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন।
জুলাই অভ্যত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র দুই বছরের মাথায় এ নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
তফসিল ঘোষণা করতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি বলেন, “ভোট আপনার শুধু নাগরিক অধিকারেই নয় বরং পবিত্র আমানত ও দায়িত্ব। এই দায়িত্ব সচেতনভাবে আপনারা পালন করবেন এ আমার বিশ্বাস।
“যে কোনো ভয়ভীতি, প্রলোভন, প্রবঞ্চনা এবং সীমাবদ্ধতার ঊর্ধে উঠে নিঃসংকোচে আপনাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। আপনাদের নিরাপদ ও উৎসবমুখর অংশগ্রহণকল্পে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও বাহিনী কাজ করবে।”
সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ভোট হবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে, ব্যালট পেপারে। ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। এবার নির্বাচনে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৭ লাখ ১১ হাজার ৭৯৩ জন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থবারের মত গণভোট হতে যাচ্ছে এবার। এর আগে ১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে গণভোটে ভোট দিয়েছে দেশের মানুষ।
জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য এবারের গণভোটের ব্যালট পেপারে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এসব প্রশ্নের বিপরীতে ভোটারদের কাছে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট চাওয়া হবে।
+
চার ছাত্র সংসদে শিবিরের জয়
জুলাই অভ্যুত্থানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের প্রথম সারির চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিপুল জয় পায় ইসলামী ছাত্রশিবির, অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে অন্তত দেড় দশক প্রকাশ্য কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল তাদের।
এসব নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও ভোটের ফল নিজেদের ঘরে তুলতে পারেনি।
চার ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিবিরের জয়ের সূচনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মধ্য দিয়ে।
জামায়াতে ইসলামীর এই সহযোগী সংগঠন যেখানে অতীতে কখনও ডাকসুর কোনো পদে জয় পায়নি, সেখানে এবার ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে এবং ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে নয়টি জিতে নিয়েছে।
ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ-জাকসুর ভিপি বাদে জিএসসহ অধিকাংশ পদে জয়ী। ভিপি পদে জিতেছেন স্বতন্ত্র আব্দুর রশিদ জিতু।
নাটকীয়তায় ভরা ওই নির্বাচনে মেশিনে ভোট গণনার কথা থাকলেও ছাত্রদল এবং কিছু শিক্ষকের আপত্তিতে সেটা হাতে গোণা হয়। ফলাফল ঘোষণা করা হয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর।
ডাকসু ও জাকসুর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনেও সংগঠনটির প্রার্থীদের ধারেকাছে ছিল না কেউ; কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদের ২৪টিই তাদের।
এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (রাকসু) ভিপি, এজিএসসহ ২০টি পদে জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। বাকি তিনটি পদের মধ্যে কেবল ক্রীড়া সম্পাদক পদে নার্গিস খাতুন জয় পেয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেল থেকে।
জিএস নির্বাচিত হয়েছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার, যিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আলোচিত সমন্বয়ক ছিলেন। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের সহ-সভাপতি।
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি
২১ জুলাই দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের একটি ভবনের মুখে বিধ্বস্ত হয়। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই বিমান দুর্ঘটনায় ৩৬ জনের মৃত্যু হয়, যাদের বেশির ভাগই শিশু।
ওই ঘটনার পরদিন পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে আটকা পড়েন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। নয় ঘণ্টা পর পুলিশ পাহারায় বের হতে পেরেছিলেন তারা।
ওই দুর্ঘটনায় দগ্ধ ও আহত হন শতাধিক। তাদের মধ্যে একজনকে ট্রমা ম্যানেজমেন্টের জন্য মানসিক হাসপাতালে পাঠাতে হয়।
মাইলস্টোনের দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি গত ৫ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, প্রশিক্ষণার্থী পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটির কারণে বিমান বিধ্বস্ত ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।
মৃত্যু ঘটাল ভূমিকম্প
২১ নভেম্বর কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে তিন জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়, আহত হয় ছয় শতাধিক মানুষ। ঢাকার বহু ভবনে ফাটল, কোথাও কোথাও হেলে পড়ার ঘটনা ঘটে।
ছুটির দিনের সকালে শক্ত ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠল ঘরবাড়ি, আতঙ্ক ছড়াল ঢাকাসহ সারা দেশে। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশালে।
ওই ভূমিকম্পের রেশ না কাটতেই পরদিন সকালে এবং বিকালে দুই দফা ভূমিকম্পের তথ্য দেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
২২ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি ভূমিকম্প হয়, যেটি ছিল মৃদু মাত্রার। রিখটার স্কেলে সেটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩ মাত্রা। ওই ভূমিকম্পেও ক্ষয়ক্ষতির তথ্য মেলেনি।
ওইদিন সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝাঁকুনি অনুভূত করা ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭ মাত্রার। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী ঢাকার বাড্ডা।
রাসায়নিক গুদামে ১৬ মৃত্যু
২০২৫ সালে বেশ কয়েকটি বড় আকারে অগ্নিকাণ্ড দেখেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের রূপনগর এলাকায় পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মৃত্যু হয়।
রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগার পর চারদিকে বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দ্রুত আক্রান্ত হন ঠিক পাশের চারতলা পোশাক কারখানার ভবনটির কর্মীরা।
কারখানা দুটির আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার কাজের সময় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, পাশের কারখানার আগুন দ্রুত সরু গলির ওপারের পোশাক কারখানার ভবনের নিচে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে পোশাক কারখানার কর্মীরা নিচে নামতে পারেননি। আবার ছাদের দরজায় তালা থাকায় ধোঁয়া থেকে বাঁচতে ওপরেও যেতে পারেননি।
প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু ছয়দিনের মাথায়ও আগুন পুরোপুরি নেভাতে না পারার কথা বলে সংস্থাটি।
শাহজালালের কার্গো টার্মিনালে আগুন
গত ১৮ অক্টোবর দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে রাত ৯টার দিকে। পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয় ২৭ ঘণ্টা পর।
ওই অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা দেয় এক্সপোর্টার্স অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইএবি।
শাহজালাল বিমানবন্দরের আট নম্বর গেইট সংলগ্ন আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে আগুন লাগার পর কয়েক ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রাখতে হয়েছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে।
ওই ঘটনার দুমাস পরও বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
দুর্ভাগ্যজনক দুই মৃত্যু
রাজশাহীতে উন্মুক্ত গর্তে পড়ে নিহত শিশু সাজিদের মর্মান্তিক মৃত্যু দেশবাসীকে নাড়া দেয়। ১০ ডিসেম্বর রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়ায় গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে নিখোঁজ হয় দুই বছরের সাজিদ।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা টানা ৩১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ৪৫ ফুট মাটি খুঁড়ে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। তার মৃত্যুতে শোকের প্রকাশ ঘটায় সারাদেশের মানুষ, রাজশাহীতে জানাযায় নামে মানুষের ঢল।
ব্যক্তিমালিকানায় অবৈধভাবে সেমিডিপ বসানোর উদ্দেশ্যে ওই গর্তে খনন করা হলেও প্রায় এক বছর ধরে তা উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও প্রশাসনিক উদাসীনতার বিষয়টি সামনে আসে।
ঢাকাবাসীর চলাচলে স্বস্তি নিয়ে আসা মেট্রোরেলে ২০২৫ সালে কয়েকটি ঘটনা বড় ধরনের আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়।
২৬ অক্টোবর মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ে খামারবাড়ি এলাকায় আবুল কালাম নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ফার্মগেট মেট্রো স্টেশনের পশ্চিম পাশের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি।
মেট্রোরেলের পিয়ার থেকে বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ে ২০২৪ সালেও একদিন দীর্ঘ সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। আবার একইরকম ঘটনায় প্রাণহানির পর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ।
কম্পন প্রতিরোধের জন্য সেতু বা উড়াল সেতুতে ইলাস্টোমোরিক বিয়ারিং প্যাড বসানো থাকে। এ প্যাড নিওপ্রেন বা প্রাকৃতিক রাবার দিয়ে তৈরি, যা পিয়ার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো হয়। কোনোটির ভেতরে কয়েক পরতে থাকে স্টিলের কাঠামো, আর উপরে থাকে রাবার। এগুলো ওজনে অনেক ভারী হয়।
৩০ নভেম্বর রাতে মেট্রোরেলের ছাদে এক কিশোর উঠে পড়ার পর ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা মই লাগিয়ে তাকে নামিয়ে আনলেও রাতে আর ট্রেন চালানো যায়নি। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে বহু মানুষ।
নিরাপত্তার ফাঁক গলে শিশুটি কীভাবে বিদ্যুতায়িত বগির উপর উঠে পড়েছিল, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়।
পাহাড়ে ঝরল রক্ত
২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায় মারমা এক কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পর নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে।
ঘটনার তিনদিন পর ২৭ তারিখ থেকে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’ ব্যানারে তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। পরিস্থিতি অবনতি হলে ওই দিন দুপুরে খাগড়াছড়ির গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।
কিন্তু এর মধ্যেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি বাজারে আগুন দেওয়া হয়। পরে অবরোধকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে তিনজন নিহতের খবর আসে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে সহিংসতার জন্য পাহাড়ি সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট–ইউপিডিএফকে দায়ী করে।
খাগড়াছড়িতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ‘ভারতের ইন্ধন’ থাকার কথা বলেছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
দূরত্ব ঘোচেনি
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, ২০২৫ সালেও তার অবসান টানা যায়নি। বরং ২০২৫ সালে পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আর তলবের ঘটনা ঘটেছে।
গত ৮ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রান্সশিপমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট বাতিল করে ভারত। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ভারতের স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানি করত। ভারতের স্থল ও বিমানবন্দর ব্যবহারের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের পণ্য যেত ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলে।
ভারতে এ চুক্তি বাতিলের পেছনে বন্দর ও বিমানবন্দরে লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ ও জটকে কারণ হিসাবে দেখালেও এর পেছনে সম্পর্কের টানাপোড়েনকেই ধরছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতের ওই পদক্ষেপের এপ্রিলের ১৫ তারিখে বাংলাদেশের বন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ করে ঢাকা। ফলে ভারতের টেক্সটাইল মিলগুলোর সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয়। বিশেষ করে সেখানকার যারা রঙ করা ভ্যাট বসানো সুতা বিক্রি করেন তারা সমস্যায় পড়েন।
এরপরই ভারত পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তাদের স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ সাতটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। পরে ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আরও কিছু পণ্যকেও যুক্ত করেছিল ভারত।
পাল্টাপাল্টি এই নিষেধাজ্ঞায় দুদেশের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারত থেকে চাল ও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্য পণ্য আমদানি অব্যাহত রেখেছে ঢাকা।
এদিকে ওসমান হাদির মৃত্যুর রাতে চট্টগ্রামে ভারতীয় মিশনের সামনে বিক্ষোভ ও ঢিল ছোড়ার ঘটনার পর দুই দেশের সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে। ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা এবং লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ মিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন।
এর জেরে দুই দেশই হাই কমিশনারদের ডেকে পাল্টাপাল্টি উদ্বেগ জানায়।
ভারত থেকে পুশইন
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে সীমান্ত দিয়ে মানুষকে ঠেলে দেওয়া বা ‘পুশ ইন’ বাংলাদেশের জন্য নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দেয়।
এপ্রিল থেকে কয়েক হাজার মানুষকে ‘বাংলাদেশি নাগরিক’ হিসেবে বর্ণনা করে সীমান্তের এপারে ঠেলে দেয় ভারত। বাংলাদেশের কাছে তালিকা পাঠালেও তাদের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া দ্রুত না হওয়ার কথা বলে আসছে ভারত।
‘পুশ ইনের’ মধ্যেই ভারতে অবস্থানরত ২ হাজার ৪৬১ জনকে ২১ মে চিঠি দেওয়ার কথা জানান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল। শুধু মে মাসেই ১ হাজার ২২২ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এর মধ্যে অনুপ্রবেশের মামলায় কারাগারে থাকা ভারতীয় নারী সখিনা বেগমের ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। ২৫ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সখিনাকে ভাষানটেক থানার টিনশেড টেকপাড়া গলির মাথায় পাওয়া যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে ভারতের নাগরিক বলে দাবি করেছেন।
আসামের নলবাড়ী জেলার বরকুড়া গ্রামের বাসিন্দা সখিনার পরিবারের অভিযোগ, বিএসএফ তাকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে।
পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য ‘দ্য কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট, ১৯৫২’-এর অধীনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। কয়েক দফা জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর ২৩ নভেম্বর তার আবেদনে সাড়া দেয় আদালত।
৭ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়
২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে নানা সমস্যা, জটিলতা আর আন্দালন পেরিয়ে ঢাকার বড় সাত সরকারি কলেজ মিলে স্বতন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকারীন সরকার।
সাতটি কলেজকে নিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের প্রক্রিয়া গুছিয়ে এনেছে। তবে এ নিয়ে কলেজগুলোর স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।
‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ এর প্রস্তাবিত কাঠামোতে সাতটি কলেজসহ সারা দেশের সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক হিসাবে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতির মত মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কায় আছেন।
আর কলেজগুলোর বর্তমান শিক্ষার্থীরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনি কাঠামো দ্রুত নিশ্চিত করার পক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্রুত অধ্যাদেশ জারির দাবি জানিয়েছেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
খসড়ায় সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি’ কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী কলেজগুলোর উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানও চালু থাকবে।
এ কাঠামোর বিরোধিতা করছে কলেজগুলোর শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পরিষদ’। তারা ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রস্তাবিত ‘স্কুলিং পদ্ধতি’ বাতিল ও একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
এনবিআর নিয়ে তুলকালাম
এনবিআর দুই ভাগ করে গত মে মাসে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনা হবে। আর সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোতেই চলবে এনবিআরের সব কাজ।
এর মধ্যে সংস্থাটির কর্মীরা নানা অভিযোগ তুলে এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
দাবি আদায়ে ২৮ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম। পরের দিনও কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে সংস্থাটির সেবাকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
সংকট নিরসনে সেদিন এনবিআর কর্মীদের অবিলম্বে কর্মস্থলে ফেরা এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়। পরে সংকট সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার।
পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়।
এরপর আন্দোলনের সামনের সারির নেতাদের ‘দুর্নীতির তথ্যানুসন্ধানে’ নামে দুদক। তিন দফায় ১৬ জনের তথ্যানুসন্ধান শুরুর তথ্য দেয় সংস্থাটি।
আন্দোলন থামার পর একের পর এক কঠোর ব্যবস্থা নেয় এনবিআর। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর এবং আন্দোলনে সম্পৃক্তদের একের পর এক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আসে।
বিদেশিদের হাতে বন্দর
চট্টগ্রামের লালদিয়ার চরে কনটেইনার টার্মিনাল এবং ঢাকার পানগাঁওয়ের নৌ টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়ে দুটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
১৭ নভেম্বর লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনিশ কোম্পানি এপিএম টার্মিনালস এবং পানগাঁওয়ের নৌ টার্মিনাল নির্মাণের সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি মেডলগের সঙ্গে ওই চুক্তি হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার মাস কয়েক ধরে বিভিন্ন বন্দর ও টার্মিনাল সচল এবং সক্ষমতা বাড়াতে বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ নেওয়ার কাজ জোরেশোরে শুরু করে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং লালদিয়ার কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার ঘোষণা আসে সরকারের তরফে।
এরপর আন্দোলনে নামে বিভিন্ন বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি এসব দলের শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গড়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা।
প্রতিবাদ-আন্দোলনের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে ৩৩ বছরের লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় চুক্তি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আবার ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকে এ বন্দরে লাভই দেখছেন বেশি। দীর্ঘদিন থেকে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা এ টার্মিনালের কাজের সঙ্গে ইউরোপের একটি কোম্পানি যুক্ত হওয়া বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ভালো বার্তা বলে মনে করছেন তারা।