কালো পতাকায় ছেয়ে গেছে ফেনী। ইতিহাসে আর কোনো দিন জেলায় এত কালো পতাকা উড়তে দেখেননি কেউ। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দল-মত ভুলে সবাই শোকে একাকার হয়ে গেছেন।
বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকেরা শোকে কাতর। পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক জানিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা, মানুষের অধিকার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার ত্যাগকে স্মরণ করছেন। জামায়াতে ইসলামীর নেতারাও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
জেলার প্রায় সব সড়ক ও বাড়িতে উড়ছে কালো পতাকা।
যে নামটি এতদিন ফেনীর পরিচয়ের সঙ্গে ইতিহাস ও অহংকার হয়ে মিশে ছিল, সেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো জনপদ। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ‘অভিভাবক’ হারানোর বেদনা নিয়ে ফুলগাজীর দক্ষিণ শ্রীপুরের পৈত্রিক বাড়িসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কোরআন খতম, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে প্রিয় নেত্রীর শেষ বিদায়ে শামিল হতে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই ফেনী থেকে ঢাকায় ছুটে যান বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বেগম খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই শামীম হোসেন মজুমদার বলেন, পারিবারিক পরিবেশে খালেদা জিয়া ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল ও বিনয়ী। বাবার বাড়িতে এলে তিনি পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন এবং ছোটদের প্রতি দেখাতেন অকৃত্রিম ভালোবাসা ও মমতা। সবার খোঁজখবর নেওয়া এবং আপন করে কাছে টেনে নেওয়ার মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেত তার আন্তরিকতা।
খালেদা জিয়ার প্রতিবেশী খন্দকার জামাল উদ্দিন বলেন, মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরপরই আমরা মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় কোরআন খতমের আয়োজন করেছি। তিনি শুধু একজন দেশনেত্রী ছিলেন না, ছিলেন মানুষের আপনজন।
ফেনী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন খন্দকার বলেন, বেগম জিয়ার মৃত্যুতে আমাদের দুঃখ প্রকাশ করার ভাষা নেই। ছাত্রদলের রাজনীতি শুরুর দিন থেকেই ‘ফেনীর মেয়ে’ হিসেবে আমরা তাকে পেয়েছি। তিনি সবসময় আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তিনি ছিলেন একজন আপসহীন নেত্রী। গত ১৭ বছরে রাজনীতিতে আমরা নানা জুলুমের শিকার হলেও তিনি ছিলেন আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।
গণঅভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে থাকা ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এবং ফেনী পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানান।
এছাড়া ফেনী জেলা জামায়াতের আমির মুফতি আব্দুল হান্নান এবং জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁঞাও শোক প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য এবং তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ আসনের প্রার্থী ছিলেন। গত সোমবার তার পক্ষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন দলীয় নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার ভোর ছয়টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ‘গণতন্ত্রের মা’ ও ‘আপোসহীন’ খ্যাত এই প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদের।