বেগম খালেদা জিয়া নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা দলকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেননি। তার কাছে, যে ব্যক্তি বা দল তার রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে সেই ব্যক্তি বা দলই তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। ১৯৮৪ সালের ২ মার্চ বিচিত্রাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন। সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবদাল আহমেদ তার ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া: সংগ্রামমুখর জীবনের আলেখ্য’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন এ তথ্য।
বিচিত্রা ২ মার্চ ’৮৪ সংখ্যায় তাকে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল তিনি কাকে বা কোন দলকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। বেগম জিয়া উত্তরে বলেছিলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা দল আমার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। আমি যে রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করি তার আশু ও সফল বাস্তবায়নই আমার লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে যে ব্যক্তি বা যে দল বাধার সৃষ্টি করবে সে ব্যক্তি বা সেই দল আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে রাজনৈতিক।’
জিয়াউর রহমানের ‘আই শ্যাল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট’ তার জন্যে কতখানি প্রযোজ্য— প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কৃষকের জীর্ণ কুটির থেকে শ্রমিকের বস্তিতে ঘুরে ঘুরে জনগণের সুখ-দুঃখের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ওই সব বিলাসী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দলের জন্য রাজনীতি সত্যিই 'ডিফিকাল্ট' করেছেন। যারা শুধু পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে রাজনীতি করেন; জনগণের সাথে যাদের কোনো প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই তাদের রাজনীতি এদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বাসের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।’
‘তারা রাজনীতিকে শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহার করেছে। কিন্তু আমার বা বিএনপির জন্য রাজনীতি মোটেও ডিফিকাল্ট হয়নি। কারণ আমরা জনগণের জন্য এবং জনগণের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রেখে তাদেরই আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য রাজনীতি করি।’
বইয়ে আরও উল্লেখ, আপসহীন লোভশূন্য সংগ্রামের ধারায় তিনি এক বিশাল নবীন জেনারেশন গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। দেখা যায়, তার নেতৃত্বের ফলেই সারা বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিরোধী দল থাকা অবস্থায় একক ছাত্র সংগঠন হিসাবে প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন-বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শক্ত ঘাঁটি হিসাবে আবির্ভূত হয়।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, খালেদা জিয়া বুঝেছিলেন-দূর ভবিষ্যতের বিজয় ছাড়া তার কিছু প্রার্থিত নেই। ’৮৪-৮৫তে, ’৮৫-৮৬তে যখন অন্যান্য দল যাচ্ছে এরশাদের জালে, তখন বিএনপির প্রবীণ নেতারা অনেকে বিভ্রান্ত। এ সময়েই যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘ক্ষমতা এখানে চাইলে, ঠিক এখানে এসে হাজির হবে। কিন্তু ক্ষমতা নয়, সংগ্রাম চাই।