Image description

ওসমান হাদি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ এই প্রথম প্রকাশ্যে এসেছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে তাকে দেখা যায়। ওই ভিডিওতে হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফয়সাল করিম মাসুদ নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।

এদিকে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের ওই ভিডিও প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে জনমনে কৌতূহল ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। পরে ভিডিওটি যাচাই করে একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ডিসেন্ট’। 

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভিডিওটির সত্যতা এবং ফয়সালের বিভিন্ন দাবির অসারতা তুলে ধরা হয়।

May be an image of one or more people and text that says

দ্য ডিসেন্ট তাদের বিশ্লেষণে জানিয়েছে, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) দিয়ে তৈরি করা হয়নি। ফয়সাল করিমের বাস্তব চেহারার গঠন ও মুখভঙ্গির সাথে ভিডিওর দৃশ্যগুলোর পূর্ণ সাযুজ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ বিশ্লেষণ এবং অন্তত ৪টি নির্ভরযোগ্য এআই যাচাই টুল ব্যবহার করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটি আসল ভিডিও।

ভিডিওর কিছু ফ্রেমে ফয়সালের থুতনির দাড়ি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার বিষয়ে ডিসেন্ট জানায়, এটি মূলত ভিডিও রেকর্ড করার সময় কোনো ‘ফিল্টার’ ব্যবহারের প্রভাব। দাড়ি অদৃশ্য হওয়ার এই কারিগরি ত্রুটি পুরো ভিডিওটিকে এআই-সৃষ্ট প্রমাণ করে না।

ভিডিওতে ফয়সাল নিজেকে বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন বলে দাবি করেছেন। তবে দ্য ডিসেন্ট বলছে, শুধু এই ভিডিওর মাধ্যমে তার ভৌগোলিক অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এছাড়া ফয়সাল তার দাবির সপক্ষে মৌখিক বক্তব্য ছাড়া অন্য কোনো প্রমাণ (যেমন- লোকেশন বা পাসপোর্ট সিল) হাজির করেননি।

ভিডিওতে ফয়সাল দাবি করেছেন, হাদিকে হত্যার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে তিনি ছিলেন না। তবে এই দাবিকে সরাসরি ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে দ্য ডিসেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির আগের বিশ্লেষণ এবং পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, মোটরসাইকেলের পেছনে বসে ফয়সাল করিম নিজেই গুলি চালিয়েছিলেন এবং চালকের আসনে ছিলেন তার সহযোগী আলমগীর শেখ। দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতেও এই তথ্য সপ্রমাণ প্রকাশিত হয়েছে।

ফয়সাল ভিডিওতে অভিযোগ করেছেন, ওসমান হাদি তাকে মন্ত্রণালয় থেকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে অগ্রিম ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। তবে হাদির মৃত্যুর পর এই দাবির কোনো সত্যতা মেলেনি। বরং তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাদি জীবিত থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের কোনো অভিযোগ ছিল না। উল্টো তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অনিয়মের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন শরীফ ওসমান হাদি। মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে আসা দুজন হাদিকে লক্ষ্য করে চলন্ত অবস্থায় গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান।

এ হত্যাকাণ্ডের ১৮ দিন পর রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে আসামিরা অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করেন। এছাড়াও এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ছয় জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং চার জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

ওসমান_হাদি, হত্যাকাণ্ড, ফয়সাল_করিম_মাসুদ, ফ্যাক্ট_চেক, দ্য_ডিসেন্ট, ডিএমপি, বাংলাদেশ_নিউজ, এআই_যাচাই, পল্টন, হত্যাকাণ্ড, শরীফ_ওসমান_হাদি