Image description

ইসলামে জানাজার নামাজ মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা ও রহমত কামনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজে কিফায়া ইবাদত। নারী ও পুরুষের জানাজার নামাজের মূল কাঠামো, নিয়ত, নিয়ম ও দোয়ায় তেমন কোনো পার্থক্য নেই। প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের জানাজার নামাজে একই দোয়া পাঠ করা হয় এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও মেয়ের জানাজার ক্ষেত্রেও দোয়া একই থাকে। তবে অনেক মুসলমানের মাঝেই নারীর জানাজার নামাজের সঠিক নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অভাব দেখা যায়।

 

শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী নারীর জানাজার নামাজ দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয়। নামাজ শুরুর আগে প্রথমেই নিয়ত করতে হবে। নিয়ত মনে মনে করলেও যথেষ্ট, চাইলে মুখে উচ্চারণ করেও বলা যায়- ‘আমি সামনে উপস্থিত হওয়া মৃতের জানাজার নামাজ এই ইমামের ইমামতিতে আদায় করছি’। এরপর ইমামের সঙ্গে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে প্রথম তাকবির দিতে হবে এবং কান পর্যন্ত দুই হাত উঠিয়ে অন্যান্য ফরজ নামাজের মতো হাত বাঁধতে হবে।

 

প্রথম তাকবিরের পর জানাজার নামাজে সানা পড়া সুন্নত। সানায় আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা, মহিমা ও একত্ব ঘোষণা করা হয়।

 

سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।

 

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম অতি বরকতময়। আপনি সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী এবং আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।

 

এরপর ইমাম দ্বিতীয় তাকবির বললে মুসল্লিরা হাত না তুলে দ্বিতীয় তাকবির বলবেন। দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদে ইবরাহিম পাঠ করতে হয়, যার মাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তার পরিবারের ওপর শান্তি ও বরকত কামনা করা হয়।

 

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম-মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইবরাহিম ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম-মাজিদ।

 

অর্থ: হে আল্লাহ! উম্মি নবি মুহাম্মাদের ওপর এবং মুহাম্মাদের পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহিমের ওপর এবং ইবরাহিমের পরিবারের ওপর। উম্মি নবি মুহাম্মাদ ও তার পরিবারকে বরকত দান করুন, যেমন ইবরাহিম ও তার পরিবারকে বরকত দান করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহিমান্বিত।

 

এরপর ইমাম তৃতীয় তাকবির দিলে হাত না তুলে তাকবির বলতে হবে। তৃতীয় তাকবিরের পর জানাজার মূল দোয়া পড়া হয়। প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জানাজার ক্ষেত্রে এই দোয়ায় জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড়, পুরুষ ও নারী সব মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। একই সঙ্গে আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা হয়, তিনি যেন জীবিতদের ইসলামের ওপর অবিচল রাখেন এবং মৃতদের ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু দান করেন।

 

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِ نَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَنَا اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلٰى الْاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى الْاِيْمَانِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা-গফিরলি হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াহতাহু মিন্না ফাআহয়িহী আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহ আলাল ইমান।

 

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং পুরুষ ও নারী সবাইকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাদের জীবিত রেখেছেন ইসলামের ওপর জীবিত রাখেন আর যাদের মৃত্যুদান করেছেন তাদের ইমানের সঙ্গেই মৃত্যুদান করুন।

 

অন্যদিকে, যদি জানাজাটি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের হয়, তবে তৃতীয় তাকবিরের পর ভিন্ন একটি দোয়া পড়তে হয়। এই দোয়ায় শিশুটিকে পরিবার ও স্বজনদের জন্য অগ্রবর্তী সওয়াবের মাধ্যম, সঞ্চিত নেকি এবং কিয়ামতের দিন সুপারিশকারী হিসেবে কবুল করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়।

 

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَّذُخْرًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفَّعًا

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা-জআলহু লানা ফারতাও ওয়া-জআলহু লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়া-জআলহু লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফাআন।

 

অর্থ: হে আল্লাহ! তাকে আমাদের অগ্রবর্তী ব্যবস্থাপক (কোনো সফরে যে আগে আগে চলে এবং পেছনের লোকেরা পরে তার সাথে মিলিত হয়) বানিয়ে দিন, তাকে আমাদের জন্য সঞ্চয় ও সওয়াবের উপকরণ বানিয়ে দিন এবং তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী ও গ্রহণযোগ্য সুপারিশকারী বানান।

এরপর ইমাম চতুর্থ তাকবির বললে মুসল্লিরা হাত না তুলে চতুর্থ তাকবির বলবেন। চতুর্থ তাকবিরের পর কোনো দোয়া নেই; বরং ইমামের সঙ্গে ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে জানাজার নামাজ শেষ করতে হয়।

ফিকহবিদদের মতে, জানাজার নামাজে কেবল প্রথম তাকবিরের সময়ই হাত ওঠানো সুন্নত। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তাকবিরে হাত ওঠানো হয় না। প্রথম তাকবিরের পর নামাজরত অবস্থায় অন্যান্য নামাজের মতো নাভির ওপর হাত বেঁধে রাখতে হয়।

জানাজার নামাজ শেষে কখন হাত ছাড়তে হবে এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে দুটি গ্রহণযোগ্য মত রয়েছে। একদল আলেমের মতে, চতুর্থ তাকবিরের পরই হাত ছেড়ে দেওয়া যাবে। অন্য একদল আলেম বলেন, উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর হাত ছাড়াই উত্তম। উভয় মতই সহিহ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় যে কোনো একটি অনুযায়ী আমল করা জায়েজ।

 

ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে জানাজার নামাজ মৃত নারীর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত কামনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই জানাজার নামাজ আদায়ের সময় সঠিক নিয়ম ও দোয়া জানা এবং তা যথাযথভাবে পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।

 

ঢাকাটাইমস