আসসালামু আলাইকুম।
মাননীয় তারেক রহমান সাহেব!
৬ হাজার ৩১৪ দিন পর আপনার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন একটি রাজনৈতিক ঘটনার চেয়েও বড় কিছু। এটি সময়ের কাছে একটি প্রশ্ন, ইতিহাসের কাছে একটি সমীক্ষা এবং শোকাতুর জাতির সামনে একটি সম্ভাবনা।
আপনি তো জানেন আজ বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে এক গভীর শূন্যতার মুখোমুখি। শরীফ ওসমান হাদীর অনুপস্থিতিতে ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম যেন দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে আপনার ফিরে আসা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ইতিহাস কখনও শূন্যতা সহ্য করে না। কেউ না কেউ সেখানে দাঁড়ায়। প্রশ্ন হলো, সেই জায়গায় আপনি কীভাবে দাঁড়াবেন?
আপনার সামনে আজ দুটি পথ
একটি হলো, পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্ষমতার সংঘাত, প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার রাজনীতি। এই পথ বাংলাদেশ বহুবার দেখেছে, বহু মূল্য দিয়েছে, কিন্তু ন্যায় পায়নি।
আরেকটি পথ, ইনসাফের প্রশ্নে সহযোগিতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান, দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া। শরীফ ওসমান হাদীর অসম্পূর্ণ কাজগুলো যদি আপনি প্রতিপক্ষের চোখে দেখেন, তাহলে জাতি আরও বিভক্ত হবে। কিন্তু আপনি যদি সেই কাজগুলোকে সহযোগিতার জায়গা থেকে দেখেন, তাহলে আপনি ইতিহাসে মহান ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
জাতি আজ প্রতিহিংসার রাজনীতি চায় না।
জাতি চায় ইনসাফ, ন্যায় বিচার, চায় জবাবদিহিতা। চায় এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে ইসলাম উপেক্ষিত হবে না, মিডিয়ার একচেটিয়া স্বভাবের কারণে কোনো ব্যক্তি সম্মান হারাবে না। শরীফ ওসমান হাদী রহ.ও এমনটি চেয়েছিলেন।
তিনি তো ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি ক্ষমতার হিসাব নয়—ন্যায়ের হিসাবকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন; যিনি দলীয় সীমানার চেয়ে মানুষের অধিকারকে বড় করে দেখেছেন; যিনি আপসের রাজনীতি নয়, নৈতিক অবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। তার শূন্যতা শুধু একজন ব্যক্তির অভাব নয়—এটি একটি আদর্শিক শূন্যতা, একটি নৈতিক নেতৃত্বের অভাব।
শরীফ ওসমান হাদী নেই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া প্রশ্নগুলো এখনো বাতাসে ভাসছে।
রাষ্ট্র কি নাগরিকের কাছে দায়বদ্ধ হবে?
আইন কি সবার জন্য সমান হবে?
ক্ষমতা কি নৈতিকতার অধীন হবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বক্তৃতায় নয়, দেবে আপনার রাজনৈতিক অবস্থান সিদ্ধান্ত এবং কাজে।
আপনি যদি ইনসাফের প্রশ্নে আপসহীন হন,
আপনি যদি দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়ান,
আপনি যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপস না করেন;
তাহলে আপনি কেবল একটি দলের নেতা থাকবেন না, আপনি হয়ে উঠবেন এই সময়ের প্রয়োজনীয় নেতা, দেশ ও জাতির একজন মহানায়ক।
এই প্রত্যাবর্তন না হোক সংঘাতের, হোক সমাধানের।
এই রাজনীতি না হোক প্রতিদ্বন্দ্বিতার, হোক দায়িত্বের।
এই নেতৃত্ব যতটুকু ক্ষমতার, তারচে বেশি হোক ন্যায়ের।
ইতিহাস আপনাকে সুযোগ দিয়েছে। জাতি তাকিয়ে আছে। সময় লিখে রাখছে, আপনি কোন পথটি বেছে নিলেন।
—মিযানুর রহমান জামীল
একজন সচেতন নাগরিক এবং শরীফ ওসমান হাদীর স্বপ্নে বিশ্বাসী মানুষ