গত ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে একদল দুর্বৃত্ত দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রধান কার্যালয়দ্বয়ে হামলা করে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে। এতে দুটি ভবন পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ডেইলি স্টার-এর বেশ কয়েকজন সাংবাদিক কার্যালয়ে আটকে পড়েন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে উদ্ধার করে।
২২ ডিসেম্বর প্রথম আলোর তথ্য মতে, এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এর মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষে গণমাধ্যম সম্পাদকদের সাথে আয়োজিত এক মতবিনিময় হাজির হয়ে দেশের মিডিয়া পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
২১ ডিসেম্বর দুপুরের ওই অনুষ্ঠানে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা উল্লেখ করে জনাব মাহফুজ আনাম দাবি করেছেন বাংলাদেশের জন্মের পরে এই প্রথম কোন সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের ৫৩ বছর বয়সে কোনো মিডিয়ার অফিস আগুন জ্বালানো হয় নাই। সর্বপ্রথমবারের মতন প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের অফিসে আগুন জ্বালালো। কেন? আমরা কী অপরাধ করলাম? আমি এটা অনুরোধ করব সমস্ত মিডিয়াকে যে সত্যিকার অর্থে আপনারা এটা প্রশ্ন করবেন।”
তবে প্রকৃতপক্ষে, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার কার্যালয়ের আগুন দেয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা করে অগ্নিসংযোগের প্রথম ঘটনা নয়।
২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক নয়া দিগন্তের আরামবাগস্থ কার্যালয়ে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এতে পত্রিকাটির কার্যালয়ের নিচতলায় অবস্থিত ছাপাখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কার্যালয়ের গেটে থাকা একটি গাড়ি পুড়ে যায়।
পরদিন নয়া দিগন্ত পত্রিকায় ‘নয়া দিগন্তে আগুন: জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা’ শিরোনামে প্রধান খবর প্রকাশিত হয়।
দৈনিক প্রথম আলো ১৩ ফেব্রুয়ারি ৭ম পৃষ্ঠায় ”নয়া দিগন্তের ছাপাখানা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ” শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছিল। যদিও ছাপাখানাটি নয়া দিগন্তের নিউজরুম যে ভবনের তৃতীয়/চতুর্থ তলায় অবস্থিত সেটিরই নিচতলায় ছিল। অর্থাৎ, ওই পুরো ভবনটিই ছিল নয়া দিগন্তের কার্যালয়।
তবে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আগুনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নয়া দিগন্তের কার্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় অনেক বেশি ছিল বলেই প্রতীয়মাণ হয়।
এর বাইরে ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর জামায়াতের মূখপাত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার কার্যালয়ে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর এবং সম্পাদক আবুল আসাদকে টেনে হিচড়ে বের করে এনে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন একসময়ের ছাত্রলীগ নেতা ও তখনকার সময়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের এক নেতা।
ওইদিন সংগ্রাম কার্যালয়ের ভবনে সরাসরি আগুন দেয়া হয়নি। তবে কার্যালয়ের গেটের ভেতরে পত্রিকা জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
এই দুই ঘটনার বাইরেও বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের ইতিহাসের পূর্ণাঙ্গ উপাত্ত্ব এই মুহূর্তে পাওয়া না যাওয়ায় এই উপসংহার টানা সম্ভব নয় যে, নয়া দিগন্তের কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কিনা। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে যে, প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ইতিহাসে প্রথম নয়।