কাজী নজরুল ইসলাম রহ. এর মাজার মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিলো, ওসমান হাদি রহ. এর মাজার নজরুলের পাশাপাশি হওয়ার ফলে নজরুল জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ১৯২৪-২৫ এর বিপ্লবী নজরুল ফিরে এসেছে হাদির ২০২৪-২৫ এর বিপ্লবী কর্মতৎপরতার ভেতর দিয়ে। এটাই সিলসিলার গুরুত্ব।
এক নবীর শিক্ষা মানুষের ভেতর থেকে হারিয়ে যাওয়ার মতো উপক্রম হলে আল্লাহ আরেক নবী প্রেরণ করে নবুয়তী শিক্ষাকে জীবন্ত রাখেন মানব জাতির ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়। জালেমের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের বিপ্লবী সিলসিলাও জারি রাখেন আল্লাহ তাঁর বিপ্লবী প্রতিনিধিদের মাধ্যমে।
হাদির যে চিন্তা জগত যেখানে সে বাঙালি মুসলমানের ভাষা সংস্কৃতি চিন্তার স্বাধীনতা চান, সেটার অধিকাংশটাই কাজী নজরুল ইসলামের চিন্তা দ্বারা অনুপ্রাণিত। নজরুল তাঁর ভাষায় আরবী ফারসি মিশ্রিত বাংলাকে ব্যবহার করেন। সাতচল্লিশ পরবতী একাত্তরের এই রাজনৈতিক পরিক্রমায় নজরুলের বাংলা ভাষা হারিয়ে গিয়েছিল প্রায়। হিন্দুত্ববাদী আওয়ামী বাম ফ্যাসিস্টরা নজরুলকে কেন্দ্রিয় অবস্থান থেকে প্রায় ছুড়ে ফেলেছিলো। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তীতে হাদির সংগ্রাম নজরুলকে কেন্দ্রিভূত করে তুলে। হাদির মাজার নজরুলের পাশাপাশি হওয়াটা এই দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হইছে।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো 'মাজার'। জ্ঞানী ও বিপ্লবী মানুষের চেতনাকে যুগ যুগ ধরে মানুষের মধ্যে প্রাসঙ্গিক রাখার জন্য তাদের স্মৃতিচিহ্নকে সংরক্ষিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটাই মূলত বাংলায় মাজারের রাজনীতি। হাদির মাজার নজরুলের পাশে হাওয়ার ফলে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বর্বরদের মাজার ভাঙার বিষয়টার অসারতা প্রমাণিত হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে জীবন্ত রাখার জন্য এখন হাদির ভক্তরা তাঁর মাজারে জমায়েত হবে। জিয়ারত করবে। রাজনৈতিক বয়ান উৎপাদন করবে। মাজারে আসলে একটা চেতনা কাজ করবে, হাদির সংগ্রামকে তারা অনুভব করবে। পরবর্তীতে তারাও হাদি হতে চাইবে। এই জন্যই মাজার গুরুত্বপূর্ণ। এই দিক থেকে হাদির মাজার তৈরী করা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে মাজার ভাঙার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ।
২০১৩ তে শাহবাগে যে ফ্যাসিবাদের চারা রোপণ করা হয়, সেই শাহবাগেই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের মাজার। এরচেয়ে দূর্দান্ত কাজ আর হতে পারে না। এবং শাহবাগ চত্বরের নাম হাদি চত্ত্বর, এটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে। এগুলো ফ্যাসিবাদের কলিজায় অনন্ত যাতনার তীর গেঁথে থাকার মতো বিপ্লবী ঘটনা।
আরিফ রহমান