Image description

আধিপত্যবাদী আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলায় শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব।

তিনি বলেন, ‘হাদি বাংলাদেশকে এমন একটি আত্মমর্যাদাশীল, শক্তিশালী ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যেখানে কোনো আধিপত্যবাদী শক্তি আগ্রাসনের সাহস পাবে না। এই চেতনা জাগ্রত করায় তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

রোববার (২১ ডিসেম্বর) আশুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়ামে হাদির রুহের মাগফেরাত কামনায় আয়োজিত দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ড. মোহাম্মদ আবদুর রব।

তিনি বলেন, ‘কেবল পড়াশোনা, ভালো রেজাল্ট ও চাকরিই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। আমাদের লক্ষ্য হলো- এই ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশটিকে একটি আত্মমর্যাদাশীল, শক্তিশালী ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে কোনো আধিপত্যবাদী শক্তি আগ্রাসনের সাহস পাবে না।’

ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, ‘এই চেতনা জাগ্রত করার পথেই শহীদ শরীফ ওসমান হাদিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন হাদি চলে গেলেও তার আদর্শ বহুগুণ হাদির জন্ম দেবে।’

তিনি ওসমান হাদিকে আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের এক অনন্য আইকন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘শহীদ হাদির বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ভারতীয় আগ্রাসী শক্তির দেশীয় দোসরদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। এ কারণেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। তবে হাদি মরে যাননি, তিনি লক্ষ লক্ষ তরুণের মাঝে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পর্বতসম প্রতিবন্ধক হয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।’

ড. মোহাম্মদ আবদুর রব হাদিকে সন্তানতুল্য উল্লেখ করে বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ভূ-রাজনীতি নিয়ে তার সঙ্গে একাধিক সভা-সমাবেশে আলোচনার সুযোগ হয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত অমায়িক, নম্র ও ভদ্র হলেও অল্প বয়সেই ভূ-রাজনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ে তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল, যা আজকের তরুণ সমাজে বিরল।’

হাদিকে একজন অসাধারণ বিতার্কিক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার উপস্থিত বুদ্ধি ও শাণিত যুক্তির কাছে বহু টকশো ব্যক্তিত্বকে অসহায় হতে দেখা গেছে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের গুম, খুন, দুর্নীতি, লুটপাট ও নিপীড়নের চিত্র তিনি জোরালোভাবে তুলে ধরায় দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্যবাদী শক্তি ও তাদের দেশীয় দোসররা তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। শহীদ হওয়ার আগেও তিনি একাধিকবার হত্যার হুমকির আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছিলেন।’

হাদিকে সম্মুখসারির একজন জুলাই যোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে ড. আবদুর রব বলেন, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা বিভাজনের জন্য নয়, বরং ঐক্যবদ্ধ, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথেই হাদি নিজের জীবন উৎসর্গ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তার সেই অসমাপ্ত কাজ তরুণ সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে।’

শেষে তিনি বলেন, ‘শহীদ হাদি এ দেশকে ভালোবাসতেন, এ দেশের মানুষের সংস্কৃতি ও প্রকৃত স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদাভিত্তিক সমাজ গঠনের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারই হোক আজকের এই দোয়া মাহফিলের প্রতিজ্ঞা।’

এরপর শহীদ ওসমান হাদির শহিদি মৃত্যু কবুলের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন ড. আবদুর রব এবং তার জন্য চিরশান্তি ও চিরমুক্তি কামনা করেন।

দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার মো. মনিরুল ইসলাম, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান, স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনোমিকসের ডিন মো. মাহবুব আলম, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এএইচএম আবু সাঈদ, আইন বিভাগের প্রফেসর ড. এবিএম মাহবুবুল ইসলাম, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রধান রফিকুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা।

ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরে চীন, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর— এই ভূ-কৌশলগত, ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ বিশ্ব শক্তিগুলোর দৃষ্টির কেন্দ্রে। এই আধিপত্য বিস্তারের প্রয়াসে তাবেদার শক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর ষড়যন্ত্র চলে আসছে। শহীদ হাদির মতো তরুণরা যখন জনগণকে এই বাস্তবতা বোঝাতে এগিয়ে আসে, তখনই ষড়যন্ত্র তীব্র হয়।

তিনি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘চলে যাব, তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব’- এই অঙ্গীকারে স্বাধীনতার চিন্তা ও জাতিকে জাগানোর যে দীপশিখা শহীদ হাদি তরুণদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন, তা আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব।

মাত্র এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ওসমান হাদি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটিয়ে গেছেন উল্লেখ করে ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রুখে দিতে এবং তরুণ প্রজন্মের মাঝে বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিচর্চা জাগ্রত করতে তিনি কালচারাল সেন্টার গড়ে তুলেছিলেন। এই কার্যক্রমে তরুণদের ব্যাপক সম্পৃক্ততায় ভীত হয়েই কালচারাল ফ্যাসিস্টদের রোষানলে পড়তে হয়েছে তাকে।

তিনি বলেন, ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই শহীদ হাদি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভ্যানে ও পায়ে হেঁটে নিরলস প্রচার-প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে তিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিচ্ছিলেন। তার এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাও প্রতিপক্ষের জন্য চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল।

ভাইস-চ্যান্সেলরের বক্তব্য শেষে শহীদ শরীফ ওসমান হাদির রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান খিজরী।