Image description

আদালতে হাজিরা দিতে আসা পুলিশ কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদেরকে মব সৃষ্টি করে হেনস্তার চেষ্টা করা হয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে নিরাপদে চলে গেছেন ভুক্তভোগী। গতকাল রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

তোপের মুখে পড়া সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সোনারগাঁ থানায় বিভিন্ন মেয়াদে ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নারায়ণগঞ্জে কর্মরত অবস্থায় সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। শামীম ওসমানের মালিকানাধীন শীতল ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডেরও একজন অংশীদার ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় একাধিক সূত্র।

গতকাল দুপুরে একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে আসেন মঞ্জুর কাদের। এ সময় তাঁকে ঘিরে ধরেন জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। দৌড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ডরুমে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানে গিয়ে মব সৃষ্টির চেষ্টা করলে দোতলায় চলে যান মঞ্জুর কাদের। এর মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা চলে আসেন সেখানে। তাদের হস্তক্ষেপে নিরাপদে চলে যান সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ লʼইয়ার্স কাউন্সিলের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ছিলেন তারা। ২১ ফেব্রুয়ারি নগরীর বেপারীপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে গ্রেপ্তার হন সাইফুল ইসলাম ও আইনজীবী তাওফিকুল ইসলাম। পরে তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুর কাদেরের নেতৃত্বে থানায় তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

২০১৬ সালের দিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নারায়ণগঞ্জ সদর থানা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাইফুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক উইং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সহকারী সাধারণ সম্পাদক। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে ও তাঁর মামাতো ভাইকে ওসি মঞ্জুর কাদের তাঁর কক্ষে নিয়ে এক ঘণ্টা টানা পিটিয়েছেন। তিন দিন গুম করে রাখেন। তাঁর পরিবারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকাও নিয়েছেন। আজ (রোববার) সেই মঞ্জুর কাদেরকে ডিসি অফিসের নিচে দেখতে পান। তখন তাঁকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার জন্য আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি দৌড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেএম শাখায় গিয়ে লুকান। সেখানে গিয়ে তাঁকে পেলেও বিএনপিপন্থি কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী ছাড়িয়ে নিয়ে যান। পরে তাঁকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।

মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে আইনবহির্ভূতভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেন জামায়াতপন্থি আইনজীবী ও সাবেক শিবির নেতা তাওফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা আমৃত্যু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এই মঞ্জুর কাদের ছিলেন একজন ঠান্ডা মাথার খুনি। তাঁকে আমরা পুলিশে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের কারণে পারিনি।’

গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পরপরই মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানান সাইফুল ইসলাম। তাঁর ধারণা ছিল, ‘মঞ্জুর কাদের বিদেশে পালিয়ে গেছেন’, এ কারণে মামলা করেননি। সোমবার (আজ) তিনি মামলা করবেন বলে জানান।

জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, জামায়াতের আইনজীবীরা সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আটকে মব জাস্টিসের পর্যায়ে নিতে চেয়েছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণে আইনবহির্ভূত এমন কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন তারা। পরে সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তা সেখান থেকে নিরাপদে চলে যান। তিনি বলেন, তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে মামলা করুক। কিন্তু যে কেউ যা কিছু তো করতে পারেন না।

বক্তব্য জানতে সাবেক ওসি মঞ্জুর কাদেরের মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে কল দিলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। খুদে বার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী জানান, এমন কোনো ঘটনার খবর পাননি তারা। আইনজীবীরা কিংবা সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তাও তাদের কাছে অভিযোগ করেননি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রায়হান কবির বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে পরে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’