ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করার ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের স্ত্রী, শ্যালকসহ তিনজনকে আটক করেছে র্যাব। তবে ফয়সল করিমের কোনো খোঁজ এখনো বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ফয়সলের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়াকে আটক করা হয়েছে বলে র্যাবের সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার একটি সূত্র প্রথম আলোকে তথ্য নিশ্চিত করেছে। ওই সূত্র বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করা হয়। তাঁদেরকে আজ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রাতে যোগাযোগ করা হলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর র্যাব নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় পৃথক অভিযান এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওসমান হাদিকে গুলি করা ফয়সল করিমের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকে আটক করে। আইন মেনে আটকের ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই আজ সন্ধ্যায় তাঁদের পল্টন থানায় সোপর্দ করা হয়।
মামলা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত র্যাবের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, হাদিকে গুলি করার আগে ফয়সল করিম একাধিকবার তাঁর স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছেন। হামলায় তাঁদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে থাকা আততায়ী তাঁকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করেই পালিয়ে যায়। মাথায় গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। সোমবার তাঁকে এয়ারঅ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে।
ওসমান হাদি চলন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা অবস্থায় পেছনে থেকে আসা মোটরসাইকেল থেকে তাঁকে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলেছে, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সল করিমকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সল করিমের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ছবি রয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সল করিমের সঙ্গে গুলি করা ব্যক্তির চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে বলে অনেকে দাবি করছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
ফয়সল করিম কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হয়েছিলেন। তাঁকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আদাবর থানায় একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সল করিমকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। তখন তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি গুলি, তিনটি মুঠোফোন ও পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল।
ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। তাঁকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালালেও এখনো তাঁর হদিস পাওয়া যায়নি।