Image description
অর্থ পাচারের প্রমাণ পায়নি মন্ত্রণালয়

সায়মন ওভারসিজের এমডি আফসিয়া জান্নাত সালেহের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ পায়নি মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে আইএটিএ জিডিএস আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে ১৮৯৪টি এয়ার টিকিট কিনে ১৬ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন নড়িয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী সবুজ মুন্সী। ১৪ই অক্টোবর তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ওই অভিযোগ করেন। তবে মন্ত্রণালয় এসব বিষয় পর্যালোচনা করে কোনো সত্যতা না পেয়ে রোববার আফসিয়াকে অব্যাহতি দিয়ে পত্র জারি করেছে। 

এয়ার টিকিটের ভাড়া কৃত্রিমভাবে বাড়ানো ও বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীদের নাম ও বিস্তারিত তথ্য ছাড়াই গ্রুপ বুকিং ও সিট ব্লক করে রাখার মতো অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় একটি স্বার্থান্বেষী চক্র পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচারে জড়িয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর ২০২৪-২০২৫ মহাসচিব ও সায়মন ওভারসিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফসিয়া জান্নাত সালেহের নেতৃত্বে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া হলে, ক্ষুব্ধ একটি সিন্ডিকেট চক্র সায়মন ওভারসিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানহানিকর প্রচারণা শুরু করে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, ৪৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুনামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের করপোরেট ট্রাভেল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সায়মন ওভারসিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ‘দেশের বাইরে এয়ার টিকিট বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার’-এর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। তবে অভিযোগের সঙ্গে কোনো যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, পিএনআর, টিকিট নম্বর বা অর্থ লেনদেনের গ্রহণযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ব্যাখ্যা তলব নোটিশের জবাবে সাইমন ওভারসিজ লিমিটেড বিস্তারিত তথ্য, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আইএটিএ বিএসপি রিপোর্ট, টিকিট কপি ও সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট দাখিল করে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, অভিযোগটি ছিল ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর। সব দিক বিবেচনা করে অভিযোগটিকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সাইমন ওভারসিজ লিমিটেডকে অব্যাহতি প্রদান করেছে মন্ত্রণালয়।

ট্রেড বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এয়ার টিকিট সিন্ডিকেশন, নামবিহীন গ্রুপ বুকিং ও কৃত্রিম সংকট তৈরির বিরুদ্ধে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিহিংসামূলকভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। 

৯ই ডিসেম্বর অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে দেয়া ব্যাখ্যায় আফসিয়া জান্নাত সালেহ বলেছেন,  যেকোনো ট্রাভেল এজেন্সির নিজস্ব অফিসিয়াল প্যাড থাকে কিন্তু এই অভিযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে অভিযোগকারী তার অফিসিয়াল প্যাড ব্যবহার না করে সাদা কাগজে অভিযোগ করেছেন। স্বাক্ষরের পরিবর্তে অভিযোগকারীর নাম লেখা হয়েছে। অভিযোগের সঙ্গে যে ডকুমেন্টসগুলা দেয়া হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে সাদা কাগজে ছক বানিয়ে কম্পিউটারে কম্পোজ করে সেখানে সায়মন ওভারসিজ লিঃ-এর নাম এবং আইএটিএ কোড বসিয়ে কিছু রুট উল্লেখ করা হয়েছে। এই ডকুমেন্টটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকর্তৃক সত্যায়িত নয়। অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত স্টেটমেন্ট এ পিএনআর, যাত্রীর নাম, যাত্রীর পাসপোর্ট নম্বর, টিকিট নম্বর, কোন টিকিটের মূল্য কতো এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও টিকিটের আবশ্যকীয় তথ্য উল্লেখ করা হয় নাই। এই সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যতীত এই অভিযোগটি অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য এবং মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করার এবং আমাদের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের অর্জিত সুনাম নষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ আছে, এজেন্সির জিডিএস আইডি ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা হয় কিন্তু বাস্তবে আমাদের কোনো জিডিএসআইডি বিদেশে, এমনকি দেশের মধ্যেও কোনো এজেন্সি, সাব এজেন্সিকে দেয়া হয়নি। যার ফলে বিদেশি এজেন্সিদের মাধ্যমে টিকিট বিক্রয়ের কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা প্রদানের চিঠিতে বিদেশে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মোট ১৮৯৪টি টিকিট যার মূল্য ১৬ কোটি টাকা বলা হয়েছে বাস্তবে যার কোনো গ্রহণযোগ্য হিসাব বা ভিত্তি নাই। 

সায়মন ওভারসিজের এমডি অভিযোগের ব্যাখ্যায় আরও বলেন, আমাদের এজেন্সি বিগত ৪৪ বছর ধরে করপোরেট ট্রাভেল সার্ভিস প্রদান করে আসছে। আমরা সরাসরি যাত্রী/ যাত্রীর প্রতিষ্ঠানের নিকট টিকিট বিক্রয় করে থাকি যার মূল্য সরাসরি আমাদের ক্যাশ/চেক/কার্ড/ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করে। অভিযোগে সংযুক্ত স্টেটমেন্টের তারিখ ও রাউটিং পর্যালোচনা করে বুঝতে পেরেছি যে অভিযোগকারী ভুল তথ্য দিয়ে ক্রস বর্ডার টিকিট বিক্রয় দেখিয়েছেন যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং কাল্পনিক গল্প। অভিযোগে উল্লেখিত তারিখ ও বুকিং এবং এর কাছাকাছি সেক্টর অনুযায়ী আমাদের রেকর্ডে যে সকল টিকিট বিক্রয় হয়েছে সেগুলোর যাত্রী/যাত্রীর প্রতিষ্ঠান সে সকল টিকিটের মূল্য আমাদের কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টসে জমা দিয়েছে এবং আইএটিএ-কেও বাংলাদেশে ব্যাংকিং মাধ্যমে আমরা পরিশোধ করেছি।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সায়মন ওভারসিজ লিমিটেড জানায়, এই মিথ্যা অভিযোগ ও মানহানিকর অপপ্রচারের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। ট্রাভেল ট্রেড সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আসন্ন আটাব নির্বাচন ও ট্রেড সংস্কার কার্যক্রমকে ঘিরে এ ধরনের অপপ্রচার নতুন নয়। তারা এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ থেকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রকৃত সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান।