ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ছাড়া মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আরও তিন-চারজনকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে। সন্দেহভাজনদের গোয়েন্দা জালের মধ্যে ফেলে দ্রুত গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আশাবাদী পুলিশ ও র্যাব।
গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে সিসিটিভির ফুটেজের একই ব্যক্তির দুটি ছবি পাঠিয়ে তাঁর ব্যাপারে তথ্য দিতে সবাইকে অনুরোধ জানায় ডিএমপি। পরে পুলিশ ও র্যাবের কাছে খোঁজ নিয়ে সমকাল জেনেছে, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদ খান। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। এরই মধ্যে তাঁর দেশত্যাগ ঠেকাতে সব বিমানবন্দর, স্থল ও নৌবন্দরে বার্তা পাঠানো হয়েছে। ব্লক করে দেওয়া হয়েছে তাঁর পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। ফয়সালসহ অন্যদের গ্রেপ্তারে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মাথায় গুলি করা হয় ওসমান হাদিকে। চলন্ত রিকশায় থাকা তাঁকে মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা গুলি করে পালিয়ে যায়। হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গতকাল শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা মূল সন্দেহভাজনকে খুঁজছি। আশা করি, ধরতে পারব। আমরা জনগণের সহযোগিতা চাচ্ছি। এখনও ২৪ ঘণ্টা পার হয়নি। শিগগিরই হত্যাচেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
এ ঘটনায় কতজন জড়িত– জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, একজনের ছবি প্রকাশ করলেও সন্দেহের তালিকায় এখন পর্যন্ত তিন-চারজন রয়েছে। তাদের বিষয়ে আমরা তথ্য নিচ্ছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলছেন, চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে চলন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা হাদিকে যেভাবে মাথায় গুলি করা হয়েছে, তা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, হামলাকারীর টার্গেট অত্যন্ত নিখুঁত ছিল। সাধারণত পেশাদার অপরাধী বা অনেক দিন গুলি ছোড়ার প্র্যাকটিস করলে কারও নিশানা এমন নিখুঁত হয়।
কে এই ফয়সাল
২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সদস্য হয়েছিলেন ফয়সাল করিম দাউদ খান। সূত্র জানিয়েছে, গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সালই সেই ব্যক্তি। পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। এই অ্যাকাউন্টটি যে ফয়সালেরই, তা ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা নিশ্চিত করেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিকে।
লিংকডইনে ফয়সাল নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও অ্যানলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন তিনি।
এদিকে, ফয়সাল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা যায়। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁর নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয়কারী দলের ছিলেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা এবং সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফয়সালও সক্রিয় ছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার সঙ্গে তাঁর ছবি সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে।
সন্দেহভাজন ফয়সাল করিমের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম হুমায়ুন কবির। এলাকাবাসী জানান, হুমায়ুন কবির হাওলাদারের ছয় ছেলে। তিন ছেলে বাড়িতেই থাকেন। বড় ছেলের নাম রাজ্জাক হাওলাদার, তিনি মারা গেছেন। মেজো ছেলে সেলিম ও আবদুর রব একই বাড়িতে থাকেন।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ সদস্য আসলাম চৌকিদার বলেন, প্রায় ৪০ বছর আগে হুমায়ুন কবিরের মেজো ছেলে সেলিম তুচ্ছ ঘটনায় তাঁর মাকে ছুরিকাকাঘাত করেন। পরে তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। এরপর আর কখনও বাড়িতে আসেননি।
বাউফল থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ফয়সাল ঢাকার আদাবর থানার পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটিতে থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে আদাবর থানায় মামলা রয়েছে।
প্রচারণায় ছিলেন ফয়সাল
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া সন্দেহভাজন একজনের ছবি প্রকাশ করে তাঁর ব্যাপারে তথ্য ও সন্ধান জানতে চেয়েছে পুলিশ। সেই ছবির সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা ফয়সালের চেহারার মিল রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ছাত্রলীগের এই নেতা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইনকিলাব মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হাদির প্রচারণায় অংশ নেন এবং তাঁর কাছাকাছি পৌঁছান বলে ধারণা করছেন সংগঠনটির সদস্যরা।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের সমকালকে বলেন, হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় ফয়সালসহ তিনজনকে তিন দিন দেখা গেছে। শুক্রবারের প্রচারণা সবার অংশগ্রহণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। সে কারণে ৫ ডিসেম্বর প্রথমবার ফয়সালসহ ওই তিনজন প্রচারে ছিলেন। প্রথম দিন অংশ নেওয়ার পর ৯ ডিসেম্বর আবার আসেন ফয়সালরা। সেদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনে তোলা ছবিটি আমাদের সহযোদ্ধারা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ছবিতে থাকা তিনজনের মধ্যে ফয়সাল ছাড়াও হেলাল উদ্দিনের পরিচয় পেয়েছি। হেলালও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত। অপরজনের পরিচয় আমরা জানার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, সর্বশেষ শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারে ফয়সালসহ ওই তিনজন যোগ দেয়। এর পর সুযোগ বুঝে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। আমরা নানারকম তথ্য, ভিডিও-ছবি দিয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করছি। অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তারের পর ফয়সালের জামিন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এ নেতা।
পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ সমকালকে বলেন, সন্দেহভাজন ফয়সালের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে। তবে এখানে তারা কেউ থাকে না। তাদের বাড়িঘরও নেই। অনেক আগেই তারা সবাই ঢাকায় চলে গেছে। পটুয়াখালীতে তার নামে কোনো মামলা নেই।
সন্দেহভাজনের তথ্য চেয়েছে পুলিশ
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। তার সম্পর্কে কোনো তথ্য বা তার সন্ধান থাকলে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করা হচ্ছে। সন্ধানদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং তাকে পুরস্কৃত করা হবে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (০১৩২০০৪০০৮০) ও ওসি পল্টনের (০১৩২০০৪০১৩২) ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা ফেসবুকে হাদিসহ কয়েকজনের একটি ছবি প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনজনকে চিহ্নিত করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘এই তিনজনকে যে কোনো মূল্যে ধরিয়ে দিন। বাংলাদেশের জনতা আপনারাই ইনকিলাব কর্মী, আপনারাই এই ভার হাতে নিন। প্রশাসন কোথায় আমাদের আপডেট দিবে, তা না করে উল্টো আমাদের কাছেই আপডেট চাইতেছে।’
ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবার গুলির ঘটনার পর যখন সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সালের নাম-ছবি সামনে চলে আসে, তখন থেকেই সীমান্তের সব পয়েন্টে সতর্ক করে দেওয়া হয়। আর শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনা পাওয়ার পর তাঁর পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে সব বন্দরকে সতর্ক করা হয়েছে। ফলে বৈধভাবে তার দেশত্যাগের আর কোনো সুযোগ নেই।
অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিন
আদাবর থানার অস্ত্র মামলায় ফয়সালের জামিনপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। একটি অফিসে ঢুকে ১৭ লাখ টাকা লুটের অভিযোগে গত বছরের ৮ নভেম্বর রাজধানীর আদাবর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়। সেই মামলায় গ্রেপ্তারের তিন মাসের মাথায় তিনি জামিন পান।
তাঁর জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ছয় মাসের জামিন দেন আদালত।
আদালতের নথি অনুযায়ী, ওইদিন আদেশ দেওয়ার পর আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ১৯ ফেব্রুয়ারি আদেশটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। সাধারণত আদেশ তৈরি ও আপলোডে সময় লাগলেও এই ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। এর পর চলতি বছরের ১২ আগস্ট জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পুনরায় আবেদন করা হলে নতুন করে এক বছরের জামিন মঞ্জুর করা হয়। ফলে অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের পর এক দফা ছয় মাস এবং পরবর্তী দফায় এক বছরের জামিন পান ফয়সাল। হাইকোর্টের এই দুটি আদেশের কপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পাওয়া গেছে।
হাদির অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক
ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এখনও অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর চিকিৎসা-সংক্রান্ত অগ্রগতি সম্পর্কে ৭২ ঘণ্টা না পেরোলে নিশ্চিত কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন এভারকেয়ার হাসপাতাল বাংলাদেশের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. আরিফ মাহমুদ।
এদিকে মেডিকেল টিম হাদির চিকিৎসার বিষয়ে ১১টি পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত তুলে ধরেছে। সেগুলো হলো হাদির ব্রেইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে, তাই কনজার্ভেটিভভাবেই ম্যানেজ করতে হবে। ব্রেইন প্রটেকশন প্রটোকল ফলো করে অন্য সব সাপোর্ট চালিয়ে যেতে হবে। যদি একটু স্টেবল হয়, তাহলে ব্রেইনের রিপিট সিটিস্ক্যান করানো যেতে পারে। ফুসফুসে ইনজুরি আছে ও চেস্ট ড্রেইন টিউবে অল্প ব্লাড আসছে।
ফুসফুসে সংক্রমণ ও এআরডিএস যাতে ডেভেলপ না করে, সেদিকে খেয়াল রেখে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট অব্যাহত থাকবে। কিডনির কার্যক্ষমতা ফেরত এসেছে, সেটা ধরে রাখার জন্য ফ্লুইড ব্যালান্স যেভাবে ঠিক রাখা হচ্ছে, সেভাবেই কন্টিনিউ করতে হবে। শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণ হওয়ার মধ্যে যে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিয়েছিল (ডিআইসি), সেটা অনেকটাই ঠিক হয়ে এসেছে। এটাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে রক্ত ও রক্তের বিভিন্ন উপাদান ট্রানফিউস করতে হবে।
ব্রেন স্টেমে ইনজুরির কারণে ব্লাড প্রেসার ও হার্টবিট ওঠানামা করছে। ব্লাড প্রেশারের জন্য সাপোর্ট যেভাবে দেওয়া আছে, সেটা সেভাবেই চলবে। যদি হার্ট রেট কমে যায়, তাহলে টেম্পোরারি পেসমেকার লাগানোর জন্য টিম সার্বক্ষণিক রেডি আছে, সেটা লাগানো হবে।
মামলা হয়নি
ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিষয়টি পল্টন থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) রকিবুল হাসান নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে ডিসি, এডিসি ও ওসি পর্যায়ে আলোচনা ও বৈঠক চলছে।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বাংলামটরে অবস্থিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেন্টারটি পরিচালনা করতেন হাদি। শনিবার সন্ধ্যায় ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, এই মুহূর্তে আমরা একটি সংকটজনক সময় পার করছি। আমাদের ভলান্টিয়ার ও সেন্টার ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা হাসপাতাল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ অবস্থায় ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে– এই আশঙ্কায় আগামী এক সপ্তাহের জন্য সেন্টারের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
গ্রামের বাড়িতে চুরি
নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি জানান, ওসমান হাদির গ্রামের বাড়িতে চুরি হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার খাসমহল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তাদের পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে ছিলেন না।
প্রতিবেশী গোলাম কিবরিয়া জানান, ভোররাতে নামাজের জন্য বের হলে হাদির বাড়ির পেছনে দুজনকে দেখতে পান তিনি। সন্দেহ হলে দাঁড়াতে বললে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
আরেক প্রতিবেশী জান্নাতি বেগম জানান, তিনি সকালে বাসার সামনে একটি গামছায় মোড়ানো টাকা পরিত্যক্ত অবস্থায় পান। বিষয়টি ওসমান হাদির বড় বোন ফাতেমা বেগমকে জানানো হয়। তাঁর বড় বোন এসে বাসায় ঢুকে দেখতে পান, ঘরের আলমারি ভাঙা, মালপত্র এলোমেলো পড়ে আছে।
ফাতেমা বেগম বলেন, শনিবার ফজরের নামাজের পর আমার ছেলে ঢাকা থেকে আমাকে ফোন দিয়ে চুরির খবর জানায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসার জানালা ভাঙা দেখতে পাই। ভেতরে ঢুকে দেখি চোর নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও দামি মালপত্র নিয়ে গেছে।