Image description

জেলে থাকা ছেলে ঘরে ফিরবে—সেই প্রত্যাশায় দিন গুনতে থাকেন বাবা-মা। দিন যায়, মাস যায়, বছর পেরোয়; কিন্তু ছেলে আর ঘরে ফেরে না। সন্তানকে কাছে না পাওয়ার বুকভরা জ্বালা নিয়ে বাবা একসময় হারিয়ে যান চিরতরে। অবশেষে সেই ছেলে ফেরেন ঠিকই; কিন্তু বাবাহীন ঘরে।

পিলখানা হত্যার ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েই ঘরে মায়ের কোলে ফিরেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর নেংটিহারা গ্রামের রবিউল ইসলাম। সন্তানকে কাছে পেয়ে আনন্দে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন মা, বোন, ভাইসহ পরিবারের লোকজন। হারিয়ে যাওয়া ছেলে যেন মায়ের কোলে ফিরে এসেছে—এমন আনন্দ ধরে রাখার জায়গা হয় না। দীর্ঘদিন পর রবিউলের ফিরে আসা নিয়ে আনন্দিত পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার হন তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) জওয়ান রবিউল ইসলাম। ৭ বছর সাজা ভোগ করে বের হন। এর কিছুদিন পর বিস্ফোরক আইনের আরেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠান আদালত। বিস্ফোরক মামলায় গত বৃহস্পতিবার ২৫০ জনের জামিন মঞ্জুর করেন কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১। তাদের মধ্যে রবিউলও জামিনে মুক্ত হন। এর পরই ছোটেন বাড়ির পথে।

সরেজমিন রবিউলের বাড়িতে দেখা যায়, জামিনে মুক্ত হয়ে জেল থেকে গতকাল শুক্রবার সকালে বাড়ি ফেরেন রবিউল। ফেরার খবর পেয়ে সকাল সকাল তার বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী। বাড়ি ফিরে বাবাকে না পেয়ে বারবার কেঁদে উঠছিলেন রবিউল।

কাঁদতে কাঁদতে রবিউলের মা বলেন, ছেলের চিন্তায় আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে অবশেষে মারা গেলেন। এ সময় তিনি বেঁচে থাকলে ছেলের মুক্তিতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতেন। ছেলের চিন্তায় আমিও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। বর্তমান সরকারের কারণে ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। সরকারের কাছে অনুরোধ, ছেলেকে যেন তার চাকরিটা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্ষতিপূরণও যাতে দেওয়া হয়।

রবিউল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, জেলে এক অন্ধকার পৃথিবীতে ১৬ বছর ছিলাম। আমার জীবনের স্বর্ণালি সময়টা কেড়ে নিয়েছে সাবেক সরকার। এখন তো আর সেই সময় ফিরে পাব না। এরপরও যদি বর্তমান সরকার আমাদের ক্ষতিপূরণ দেয় এবং চাকরি বহাল রাখে, তাহলে কিছুটা হলেও কষ্ট লাঘব হবে।

তিনি বলেন, সারা দেশে ১৮ হাজার বিডিআর পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো যারা জেলে আছেন, আমরা তাদেরও মুক্তি চাই। প্রকৃত দোষীদের বিচার হোক। কারণ তারা ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। রাজনীতির কারণে বিগত সরকার আমাদের জেলে রেখেছে।

রবিউলের বড় বোন বলেন, দীর্ঘদিন পর ভাই ফিরে আসায় আমরা অনেক আনন্দিত। পাশাপাশি দুঃখও রয়েছে। ভাইয়ের জন্য বাবা চিন্তা করতে করতে মারা গেলেন। বাবার খুব ইচ্ছে ছিল ভাই জেল থেকে বের হলে তাকে দেখবেন। বাবার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ হয়নি।

রবিউলের বড় ভাই শাহজাহান আলী বলেন, আমার নির্দোষ ভাইকে অবৈধভাবে বিগত সরকার জেলে রেখেছিল। ভাই এসএসসি পাস করেই চাকরিতে যোগ দেয়। এখন সরকার চাকরি ফিরিয়ে না দিলে আমার ভাই কেমনে চলবে? তার ভবিষ্যৎ কী হবে? তাই বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ, ক্ষতিপূরণসহ আমার ভাইয়ের চাকরিটা যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

রবিউলের স্বজন ও স্থানীয়রা বলেন, রবিউলের চাকরি ফিরিয়ে না দেওয়া হলে তার ভবিষ্যৎ বলতে কিছু থাকবে না। এতদিন জেলে না থাকলে হয়তো তার সুখের একটি সংসার থাকত।